শীতকালে নানা শাক-সবজির মধ্যে অন্যতম পালং শাক। বিশেষত যাঁদের উচ্চরক্তচাপ, কোলেস্টেরল রয়েছে তাঁদের ক্ষেত্রে পালং শাক অত্যন্ত উপকারী একটি পথ্য। এছাড়া শীতকালে অল্পবয়সি থেকে বয়স্ক সকলের মধ্যেই কোষ্ঠকাঠিন্য, সিওপিডি-র সমস্যা বেড়ে যায়। ঠান্ডায় জলপান কম হওয়ার দরুন পেট পরিষ্কার হতে চায় না, এ ক্ষেত্রে পালং শাক খেলে উপকার মেলে। জানালেন ক্লিনিক্যাল ডায়েটিশিয়ান অরিত্র খাঁ।
সিওপিডি বা শ্বাসকষ্ট বাড়লে সে ক্ষেত্রেও এই শাক খেলে উপশম মেলে। এমন অনেক উপকারী গুণে সমৃদ্ধ এই শাকপাতা। অতি সহজলভ্য হলেও গুণের কথা না জানার জন্য অনেকেই সেভাবে পাত্তা দেন না। এই কয়েকমাস শীতের মরশুমে পাতে রাখুন এই উপকারী শাকের নানা পদ। পালং পনির থেকে পালং চিকেন কিংবা শাকভাজা অনেক ক্ষেত্রেই ওষুধের চেয়েও ভালো কাজ করবে।
ছবি: সংগৃহীত
পুষ্টির খনি পালং শাক
পালং শাককে শাকের রাজা বলা যেতেই পারে। একাধিক পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এই শাক। এই শাকে খুব বেশি প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট বা ফ্যাট না থাকলেও রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি ও বি কমপ্লেক্স এবং খনিজ পদার্থ। প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিড্যান্টে সমৃদ্ধ। এ ছাড়াও ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ফোলেট, ভিটামিন কে, ভিটামিন বি১ ও ডায়েটারি ফাইবারের উপযুক্ত উৎস।
ডায়াবেটিসে জুড়ি মেলা ভার – এই শাকে ফাইবারের মাত্রা ভালো থাকে ও নন স্টার্চি হওয়ার জন্য মধুমেহ রোগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে পালং শাকে উপস্থিত অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে ও রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। ডায়াবেটিসের ওষুধ আলফা গ্লুকোসাইডেস ইনহিবিটরের কার্যক্ষমতা রয়েছে পালং শাকেও।
ওজন নিয়ন্ত্রণে - ১০০ গ্রাম পালং শাকে ক্যালোরির মাত্রা মাত্র ২৩-২৬ কিলোক্যালোরি। গবেষণায় দেখা যাচ্ছে যে পালং শাকে থাইলা কয়েডস (Thyla Koids) নামের যৌগের উপস্থিতিতে মিষ্টি খাওয়ার প্রবণতা কমে। তাতে শরীরের ওজনও নিয়ন্ত্রিত হয়। তাছাড়া ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় পাচনক্রিয়া ঠিক রাখে ও ওজন নিয়ন্ত্রিত হয়।
ছবি: সংগৃহীত
ক্যানসারে প্রতিরোধক - পালং শাকে অ্যান্টি ক্যানসার এজেন্টস রয়েছে। যার মধ্যে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ তো আছেই, তাছাড়াও অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট, ক্যারোটিনয়েড ও পলিফেনলের উপস্থিতি শরীরে অধিক ফ্রি-র্যাডিকলস তৈরি হতে বাধা দেয়। তার ফলে সিনড্রোম এক্স আর নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ সহজে কাবু করে না। এছাড়াও পালং শাকে উপস্থিত ক্লোরোফিল ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি কমায়।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে - শীতকালে রক্তনালির সংকোচন শুরু হয় এবং তাতে রক্তচাপ বাড়তে পারে। পালং শাকে পটাশিয়াম থাকে, যা শরীরে গেলে কিডনি রক্তের অতিরিক্ত সোডিয়ামকে বাইরে বের করে দেয়, এতে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। এছাড়াও একাধিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে পালং শাকে উপস্থিত ম্যাগনেশিয়াম, ফোলেট এবং ভিটামিন-বি এর উপস্থিতির জন্য নাইট্রেট শরীরে নাইট্রিক অক্সাইড তৈরি করে। যা রক্তের ধমনিকে প্রসারিত করে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে ক্যালশিয়াম চ্যানেল ব্লকার ও এসিই ইনহেভিটর জাতীয় ওষুধ একই রকমভাবে নাইট্রিক অক্সাইড উৎপন্ন করে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
খারাপ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে - এতে থাকা ডায়েটারি ফাইবার খারাপ কোলেস্টেরলকে রক্তে জমতে দেয় না এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট লুটেইন ও ক্যারোটিনয়েড রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করতে - পালং শাকে প্রায় ২.১ থেকে ৪.৩২ গ্রাম জলে অদ্রবীভূত খাদ্যতন্তু বা ডায়েটারি ফাইবার থাকে। এই ফাইবার জলীয় পদার্থ শোষণ করে মল বা বর্জ্য পদার্থের আয়তন বৃদ্ধি করে এবং মলকে নরম রাখে। কোষ্ঠকাঠিন্য হয় না।
শ্বাসকষ্ট বা সিওপিডি প্রতিহত করে - পালং শাকের মধ্যে বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন ই, ভিটামিন সি এবং ম্যাগনেসিয়াম আছে। তার ফলে অ্যাজমাজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমে। এছাড়াও পালং শাক রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে, কারণ এতে উপস্থিত নাইট্রোজেন, সারা শরীরে অক্সিজেন সরবরাহে সহায়তা করে।
ছবি: সংগৃহীত
চোখের জন্য ভালো - গবেষণায় দেখা গিয়েছে, পালং শাকে উপস্থিত লুটেইন এবং জিয়াস্যান্থিন অ্যান্টি অক্সিডেন্ট চোখের ম্যাকুলার জন্য স্বাস্থ্যকর। কারণ চোখের ম্যাকুলায় এই অ্যান্টি অক্সিডেন্ট পাওয়া যায়, কিন্তু আমাদের শরীর নিজে থেকে এই সমস্ত অ্যান্টি অক্সিডেন্ট তৈরি করতে পারে না। এছাড়াও পালং শাকের মধ্যে ভিটামিন এ এবং কে থাকে যা চোখের জন্য উপকারী।
শিশু শরীরে দরকার - শাকে থাকা ক্যালশিয়াম এবং ভিটামিন কে বাচ্চাদের হাড়ের গঠন ও বৃদ্ধিতে সাহায্য করে ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ত্বক ভালো রাখে।
সতর্কতা
যেহেতু পালং শাকে ডায়েটারি ফাইবার সেলুলোজ রয়েছে, তাই অতিরিক্ত ফাইবার অনেক সময় আয়রন ও জিঙ্ক– এই খনিজ পদার্থগুলোর ব্যাঘাত ঘটায় এবং শুরু হতে পারে ডায়েরিয়া, বমি।
কিডনিতে স্টোন, কোলাইটিস, ক্রোনস ডিজিজ-এর সমস্যা থাকলে পালং শাক এড়িয়ে চলাই ভালো।
রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা বেড়ে গেলে পালং শাক এড়িয়ে চলা ভালো।
পালং শাকে যেহেতু পিউরিনের মাত্রা বেশি থাকে, তাই ইউরিক অ্যাসিড বেশি থাকলে এড়িয়ে চলা ভালো।