নব্যেন্দু হাজরা: দাম যতই থাক। বছরে এই একটা দিন জামাইয়ের পাতে ইলিশ না দিলে চলে! শাশুড়ির এই মনোবাঞ্ছা শ্বশুরমশাই হয়তো পূরণ করবেন ঠিকই। কিন্তু তার জন্য এবারও ভরসা রাখতে হবে গতবারের দেওয়া ভিন দেশের ইলিশের উপরই।
পদ্মার ইলিশ অধরা। সরকারি নির্দেশ মেনে এবছর এখনও সাগরে ধরাই শুরু হয়নি রুপোলি ফসল। তাই আগামিকাল জামাইয়ের পাত ভরাতে শাশুড়ি মায়ের ভরসা সেই মায়ানমারের ইলিশ। তা-ও গতবছরের। হিমঘরে থাকা সেই মাছই এবার পড়বে জামাইয়ের পাতে। সাইজে বড় মাছের দাম খোলা বাজারে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা প্রতি কেজি। তবে শনিবারের বাজারে সেই দাম আরও কিছুটা বাড়তে পারে। আর দিঘা, ডায়মন্ড হারবার বা রায়দিঘির মাছের সাইজ কিছুটা ছোট। ৫০০-৬০০ ওজনের মাছ কিনতে খসবে ৮০০-১০০০ টাকা। বাজারের রকমফেরে দামেরও হেরফের হওয়ার সম্ভাবনা। তাই জামাই আদরে রুপোলি ফসল ঘরে আনতে এবারও কপালের ভাঁজ বড়ই হবে শ্বশুরদের।
কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ম মেনে ১৫ এপ্রিল থেকে ১৪ জুন মৎস্যজীবীদের উপকূলে ট্রলার নিয়ে মাছ ধরা নিষিদ্ধ। তাই কোনও বছরই এই সময়টায় মাছ ধরেন না মৎস্যজীবীরা। ফলে ষষ্ঠী যদি ১৫ জুনের পরে হয়, সেক্ষেত্রে টাটকা মাছ জামাইয়ের পাতে পড়ে। কিন্তু এবার ষষ্ঠী বেশ খানিকটা আগে। তাই নতুন ইলিশ ওঠেনি। হিমঘরের মাছই তাই আগামিকাল ভরসা শাশুড়িদের। মৎস্যজীবীরা জানাচ্ছেন, এবছর বৃষ্টি না হওয়ায় মাছের ফলন ভাল নয়। তবে তা বোঝা যাবে সমুদ্রে মৎস্যজীবীরা ইলিশ ধরতে যাওয়ার পর। কিন্তু তারও ও দেরি আছে। জামাইষষ্ঠীর পরে।
[ আরও পড়ুন: কলকাতা থেকে হুগলি, গণপিটুনিতে মৃত্যুর ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ আছড়ে পড়ল পাড়ায় ]
পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, ষষ্ঠীর দিন রাজ্যে প্রায় ১০০-১৫০ টন ইলিশের চাহিদা থাকে। কোল্ড স্টোরেজের মাছ বাজারে আনা শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে এবার শনিবার অনেক পরিবারেই নিরামিষ খাওয়া-দাওয়া। সেক্ষেত্রে ওইদিন না হলেও পরদিন অর্থাৎ রবিবারও মাছের চাহিদা থাকবে। প্রতিবারই ষষ্ঠীর বাজারে এই রুপোলি ফসলের চাহিদা চড়ে। এবারও তার অন্যথা হবে না। কারণ ষষ্ঠীর সঙ্গে ইলিশের একটা যোগ রয়েছে। জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরাই। ইদ থাকায় অনেক শ্রমিকই ছুটিতে রয়েছেন। তাই বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বাজারে একটু মাছের আকাল চলছিল। কিন্তু আজ তাঁরা কাজে যোগ দিলেই কালকের জন্য মাছ মজুত থাকবে। অনেকেই আবার আগের দিনই বাজার সেরে রাখতে চান। তাঁদের জন্য অবশ্যই আজ বিকেল থেকেই রুপোলি ফসল মিলবে খোলা বাজারে।
তবে শুধু ইলিশের দামেই ছেঁকা তেমনটা নয়। পাবদা থেকে গলদা, ভেটকি থেকে কাতলা, সব মাছেরই এক অবস্থা। দামের ঠেলায় মাথায় হাত মধ্যবিত্তের। আজ এবং আগামিকাল তা হাড়ে হাড়ে টের পাবেন শ্বশুররা। বাজারে গিয়ে ট্যাঁকের কড়ি ফাঁকা হতে পারে। মানিকতলা বাজারে পাবদার কেজি ৫০০-৫৫০ টাকা, ভেটকিরও একই, গলদা ৭০০-৮০০ টাকা, কাতলা কাটা ৪০০ টাকা। তাই ইলিশ যারা কিনতে পারবেন না দামের ঠেলায় অন্য মাছ কিনতে গিয়েও তাঁদের একই দশা হবে। তবু বছরে এই একটা দিন জামাই আপ্যায়নে ত্রুটি রাখতে চান না কোনও শাশুড়িই। দাম যতই থাক, হাতের রান্নায় জামাই বাবাজীবনকে খুশি করতে ফাঁক রাখেন না কেউ।
মাছ আমদানিকারক সংস্থার সভাপতি অতুলচন্দ্র দাস বলেন, “মায়ানমারের ইলিশই বেশি আছে স্টোরে। এখানকার মাছও রয়েছে। তবে তার সাইজ ছোট। বাংলাদেশের মাছ তো আর আসে না। তাই অল্প স্বাদেই তৃপ্ত হতে হবে জামাইদের।” অন্যদিকে মানিকতলা বাজারের মাছ ব্যবসায়ী কার্তিক সাহা বলেন, “গতবারের মাছই বাজারে থাকবে। বেশিরভাগই মায়ানমার আর দিঘা-ডায়মন্ডহারবারের মাছ। নজর এড়িয়ে কিছু বাংলাদেশের মাছও ঢুকে পড়েছিল গতবার। তা খুব কম পরিমাণে রয়েছে। কিছু জায়গায় পাওয়া যেতেও পারে।”
[ আরও পড়ুন: ‘সন্ত্রাসের উলঙ্গ চিতা জ্বালাচ্ছে বিজেপি’, নিহত নেতার বাড়ি গিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ মুখ্যমন্ত্রীর ]
The post এক বছর পুরনো মায়ানমারের ইলিশই ভরসা জামাইষষ্ঠীতে, দর হাজার টাকারও বেশি appeared first on Sangbad Pratidin.