সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: নভেম্বরের প্রায় শেষ। আর ইতিমধ্যেই জাঁকিয়ে বসতে শুরু করেছে শীত। আধুনিক জীবনে যতই রংবাহারি ব্ল্যাঙ্কেটের চল বাড়ুক না কেন, শীতের রাতে লেপের তলার আরামের কোনও বিকল্প হয় না। লাল কাপড়ে মোড়া তুলোর ভিতরের উষ্ণতা যেন যত্নে কাছে টেনে ঘুম পাড়িয়ে দেয়। তাই তো কনকনে ঠান্ডায় লেপের চাহিদা আজও শীর্ষে। তবে, জানেন কি লেপ বানাতে কেন 'লাল' কাপড়কেই বেছে নেন ধুনুরিরা? পৃথিবীতে এত রং থাকতে কেন লাল রং-ই তাঁদের কাছে প্রিয়?
ইতিহাসের ধূসর দিনগুলিতে এর উত্তর মিলবে। এর জন্য হেঁটে যেতে হবে ইতিহাসের ধূলিমলিন সেই দিনগুলিতে। জানা যায়, একসময় মুর্শিদাবাদে জনপ্রিয় এই লেপ-শিল্পের রমরমা বাজার তৈরি হয়েছিল। লেপ তৈরিতে সে সময় ব্যবহার হত লম্বা আঁশের কার্পাস তুলো। সেই তুলো বীজ ছাড়িয়ে নিয়ে লাল রঙে চুবিয়ে শোকানো হত। আর সেই তুলোই ভরে ফেলা হত লাল মখমলের কভারের মধ্যে। সুগন্ধের জন্য তুলোয় ছড়ানো হত আতর। কিন্তু এর নেপথ্যে কোন কারণ?
শোনা যায়, অবিভক্ত বাংলার প্রথম নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ-এর আমল থেকেই নাকি লাল মখমলের কাপড় ব্যবহারের চল ছিল। মুর্শিদকুলির মেয়ের জামাই নবাব সুজাউদ্দিন একসময় মখমলের পরিবর্তে ব্যবহার করলেন সিল্কের কাপড়। তবে, রং পালটালেন না। পরবর্তীতে সাধারণ মানুষের নাগালে আনতে সাধারণ কাপড় ব্যবহার করেই শুরু হয় লেপ তৈরির ব্যবসা। কাপড়ের রং কিন্তু লালই থেকে যায়। সেই থেকে লেপকে এভাবেই দেখতে অভ্যস্ত হয়েছে সকলে।
তবে অনেকে আবার মনে করেন ঐতিহ্য মেনে নয়, বরং ব্যবসার খাতিরে ক্রেতার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যই লাল কাপড়ে মুড়ে রাখা হয় লেপকে। তাছাড়া লেপ তো আর নিয়মিত ধোয়া সম্ভব নয়। লাল রং খুব সহজে ধুলো, ময়লা বা যেকোনও দাগকে লুকিয়ে ফেলে। ফলে লেপ দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষাকৃত পরিষ্কার দেখায়। এটি একটি বড় ব্যবহারিক সুবিধা। তাই ব্যবসায়িক দিক থেকেও লাল কাপড় ব্যবহার করা সুবিধাজনক ছিল। আর এই সব কারণেই লাল লেপ আমাদের শীতকালীন ঐতিহ্যের অংশ হয়ে উঠেছে।
