সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: পাখির চোখ নির্বাচন। তার আগে দু’দিনের বঙ্গ সফরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah)। প্রথম দিনের রাজ্য সফরে বাঁকুড়ায় ঠাসা কর্মসূচি ছিল তাঁর। দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরের মাঝেই জঙ্গলমহল থেকে সিআরপিএফ বাহিনী প্রত্যাহার করা হল। রাজ্যের জঙ্গলমহলের দুই জেলা ঝাড়গ্রাম ও পুরুলিয়ায় থাকা মাওবাদী দমনে মোতায়েন সিআরপিএফের ৫০ ও ১৬৫ নম্বর ব্যাটেলিয়ানের মোট ১৪ কোম্পানি বাহিনী চলতি মাসেই ক্যাম্প গুটিয়ে চলে যাচ্ছে। রাজ্যের মুখ্যসচিব ও রাজ্য পুলিশের মহা নির্দেশককে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। যখন জঙ্গলমহল লাগোয়া ঝাড়খণ্ডে মাও কার্যকলাপ ক্রমশ বাড়ছে তখন কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রত্যাহারের এহেন সিদ্ধান্ত কার্যত নজিরবিহীন।
অথচ এই দুই ব্যাটেলিয়নকে পাঠানো হচ্ছে সেই মাও উপদ্রুত রাজ্য ছত্তিশগড়েই। তাই শাসকদল তৃণমূল প্রশ্ন তুলেছে বিধানসভা ভোটের আগে ঝাড়খণ্ড থেকে মাওবাদীরা যখন এই রাজ্যের সীমানা ব্যবহার করে কার্যকলাপ চালানোর চেষ্টা করছে তখন এই সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তাই রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন বিভাগের মন্ত্রী তথা পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান শান্তিরাম মাহাতো বলেন, “এই সিদ্ধান্তের পিছনে রাজনীতি রয়েছে। জঙ্গলমহলের দুই জেলা থেকে বিধানসভা ভোটের আগে কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তে শান্ত জঙ্গলমহলকে অশান্ত করে তোলার চেষ্টা চলছে।” সিআরপিএফের (CRPF) ওয়েস্ট বেঙ্গল সার্কেলের আইজি প্রদীপ কুমার সিংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাঁর কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
[আরও পড়ুন: বালির লরির ধাক্কায় পরিবারের তিনজনের মৃত্যু, বিক্ষোভ-পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরে উত্তপ্ত জামালপুর]
তবে বাংলার জঙ্গলমহলে থাকা এই দুই কোম্পানি ছাড়াও ঝাড়খণ্ডে মোতায়েন থাকা ১৯৬, বিহারে থাকা ১৩১ ও ১৫৩ নম্বর ব্যাটালিয়নও ছত্তিশগড় যাচ্ছে। উত্তরপ্রদেশে থাকা ১৪৮ নম্বর ব্যাটেলিয়নকে পাঠানো হচ্ছে মধ্যপ্রদেশে।জঙ্গলমহলের ওই দুই জেলায় থাকা আট কোম্পানি ব্যাটেলিয়ান আগেই বিহারের বিধানসভা নির্বাচনের জন্য গিয়েছে। ফলে এই দুই জেলার মধ্যে ঝাড়গ্রামের কাঁটাধরা, কাঁকরাঝোর, বুড়িঝোরে এক কোম্পানি করে তিন কোম্পানিl এছাড়া পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডির অযোধ্যা হিলটপ, মাঠা ও বলরামপুরের পাথরবাঁধেও এক কোম্পানি করে মোট তিন কোম্পানি মোতায়েন রয়েছে। মাঠা ছাড়া হিলটপ ও পাথরবাঁধে আগে নাগাবাহিনীর ক্যাম্প ছিলl নাগাল্যান্ডে অস্থিরতার কারণে ইন্ডিয়ান রিজাৰ্ভ ব্যাটেলিয়নের নাগাল্যান্ড সশস্ত্র পুলিশ সেখানে চলে যাওয়ার পরেই জম্মু ও কাশ্মীর থেকে সিআরপিএফ আসে।
এই কয়েক মাসে মাও দমনে মোতায়েন এই সিআরপিএফও বনমহলের এই পাহাড়ি এলাকায় সাধারণ মানুষের ‘বন্ধু’ হয়ে যায়। সিআরপিএফের ওই নির্দেশিকাতে বলা হয়েছে, চলতি মাসের ১০ নভেম্বরের মধ্যে ছত্তিশগড়ের রায়পুর ও মধ্যপ্রদেশের ভোপালে ওই ব্যাটালিয়নের আধিকারিকদের সেখানে নতুন পরিকাঠামো গড়ার মাধ্যমে ক্যাম্পের কাজে তদারকি করতে। সেই সঙ্গে এই ব্যাটেলিয়নের সংশ্লিষ্ট রাজ্যে যাওয়ার জন্য কোভিড পরিস্থিতিতে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে রেলকে।