সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: চিনের প্রস্তাবিত বন্দি প্রত্যর্পণ বিল বাতিলের দাবিতে নজিরবিহীন গণবিক্ষোভে অচল হংকং। গতকাল থেকে চলা বিক্ষোভের জেরে বৃহস্পতিবারও থমথমে গোটা শহর। হংকং শহরজুড়ে টহল দিচ্ছে বিশাল পুলিশ বাহিনী।
[আরও পড়ুন: ‘দুর্মুখ’ ট্রাম্পকে সামলাতে পম্পেও বললেন ‘মোদি হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়’]
বুধবার সকালে বিক্ষোভকারীরা শহরের পার্লামেন্টের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। অন্যদিকে, সরকার-বিরোধী আন্দোলনের শক্তি প্রদর্শনে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী গুরুত্বপূর্ণ সরকারি দপ্তরগুলির রাস্তা অবরোধ করে। হাজার হাজার প্রতিবাদকারী হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী ক্যারি লামের দপ্তরের কাছে পূর্ব-পশ্চিমমুখী লাং ইউও সড়ক ও সংলগ্ন এলাকায় জমায়েত হন। গত ৯ জুন রাতে বন্দি প্রত্যর্পণ বিলের বিরুদ্ধে রাজপথে নেমেছিল প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষ। সেই থেকে রাজপথে বিক্ষোভকারীদের ঢল অব্যাহত আছে। এলাকায় এলাকায় মাঝে মাঝেই সেই আন্দোলনকে ঘিরে উত্তেজনা দেখা দিচ্ছে। বুধবার বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে। হংকংয়ের এই বিক্ষোভ ২০১৪ সালের ‘আমব্রেলা মুভমেন্ট’ মনে করিয়ে দিচ্ছে। দু’মাস ধরে সেই আন্দোলনের কাছে অবশ্য বেজিং শেষপর্যন্ত মাথা নত করেনি। শহরের চিফ সেক্রেটারি ম্যাথু চিয়াং বিক্ষোক্ষ প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়েছেন।
তীব্র বিক্ষোভের মুখে চিনের প্রস্তাবিত বন্দি প্রত্যর্পণ বিলটির দ্বিতীয় বিতর্ক অধিবেশন পিছিয়েছে হংকংয়ের আইন পরিষদ (লেগকো)। হংকংয়ের চিনপন্থী লেজিসলেটিভ কাউন্সিল, লেগকো প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বুধবার অনুষ্ঠেয় ওই বিতর্ক বৈঠকটি পরে কোনও এক সময় হতে পারে। এ ব্যাপারে কাউন্সিল সদস্যদেরও জানিয়ে দেওয়া হবে। ৯ জুন বন্দি বিনিময় সংক্রান্ত বিলের প্রস্তাব করা হয়। বুধবার স্থানীয় সময় সকাল ১১টা থেকে কাউন্সিলে বিলটি নিয়ে বিতর্ক হওয়ার কথা ছিল। বিক্ষোভকারীরা মঙ্গলবার রাত থেকেই লেগকো ভবনের সামনে জমায়েত হতে থাকেন।তাঁদের অনেকেই মুখোশ এবং হেলমেট পরে রাস্তায় নেমেছিলেন। সরকারি ভবনগুলির আশপাশের সড়ক-সহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলি অবরোধ করে বিক্ষোভকারীরা। পরিস্থিতি মোকাবিলায় কয়েকশো পুলিশও মোতায়েন করা হয়।
টানা প্রতিবাদ আন্দোলনের মুখেও হংকং সরকার বিলটি পাস করাতে বদ্ধপরিকর। হংকংয়ের বিক্ষোভকারীরা বলছেন, হংকং একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল। ২০৪৭ সাল পর্যন্ত এর স্বায়ত্তশাসন বহাল থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে চিন। কিন্তু চিন ও তাইওয়ানের মধ্যে বন্দি বিনিময় সংক্রান্ত বিল বাস্তবায়ন হলে হংকংয়ের ওপর চিনের নজরদারি বাড়বে। এছাড়া বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি কাজে লাগিয়ে চিন হংকংয়ে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ শুরু করবে।
এদিকে চিনের এ সিদ্ধান্তে ইতিমধ্যেই উদ্বেগ জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র। হংকংয়ের গণমাধ্যম জানিয়েছে, আইন পরিষদে আগামী ২০ জুন ওই বিলটি চূড়ান্তভাবে পাস করা হবে। ২০১৮ সালের এক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এ বিলটি তৈরি করা হয়েছে। তাইওয়ানে ছুটি কাটানোর সময় অন্তঃসত্ত্বা বান্ধবীকে হত্যার অভিযোগ ওঠে হংকংয়ের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। কিন্তু তাইওয়ানের সঙ্গে হংকংয়ের বন্দি প্রত্যর্পণের কোনও চুক্তি না থাকায় সেই ব্যক্তিকে এখন হংকং থেকে তাইপেতে বিচারের জন্য পাঠানো যাচ্ছে না। আগে হংকং ব্রিটিশ উপনিবেশ ছিল। ১৫০ বছর শাসনে থাকার পর ১৯৯৭ সালের ১ জুলাই অঞ্চলটি চিনের কাছে ফেরত দেওয়া হয়। ১৯৯৭ সালে ব্রিটিশদের থেকে চিনের কাছে হংকংয়ের হস্তান্তরের পর থেকে বিতর্কিত এই বিলটিকে কেন্দ্র করে রবিবার সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক বিক্ষোভ দেখেছে এশিয়ার এই অর্থনৈতিক কেন্দ্রটি।
[আরও পড়ুন: এখানে এসব করা যাবে না! টেক্সাসের সৈকতেও মহিলাকে স্তনপানে বাধা]
The post প্রত্যর্পণ বিল নিয়ে অগ্নিগর্ভ হংকং, বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ পুলিশের appeared first on Sangbad Pratidin.