সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: নরেন্দ্র মোদির স্লোগান ছিল, 'অব কি বার চারশো পার'। যদিও গণদেবতা ভিন্ন রায় দিয়েছে। ২৯৩ আসনে থমকেছে NDA জোট। একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হতে পারেনি বিজেপি। ২৪০ আসন জিতেছে তারা। যদিও কুর্সি দখলের কিসসায় মোদির হ্যাট্রিক আটকাতে পারেনি বিরোধী শিবির। ফের প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন নমোই। তথাপি ২০২৪ লোকসভা ভোটের আরও দুই 'ফ্যাক্টর' গুরত্বপূর্ণ হয়ে উঠল। প্রথমত, কংগ্রেসের 'কামব্যাক'। ২০১৪ এবং '১৯ এ ৪৪ এবং ৫২ আসন জেতার পর এবার ৯৯ আসনে জয় পেয়েছে তারা। সার্বিকভাবে ইন্ডিয়া (২৩৪) জোটের উত্থানে পোড় খাওয়া নেতা হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন রাহুল গান্ধী। বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতন্ত্রের এই রায়কে কীভাবে দেখছে বিদেশি সংবাদমাধ্যমগুলি?
অধিকাংশ আন্তর্জাতিক মিডিয়ার দাবি, তৃতীয়বার ক্ষমতায় ফিরলেও চাপে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হতে না পারায় চাপে রাখবে শরিক দলগুলো। গত দুই বারের মতো বিল পাস সহজ হবে না। উল্লেখ্য, গত একদশকে ভারতের আগ্রাসী বিদেশনীতির সাক্ষী হয়েছে বিশ্ব। প্রতিবেশী দুই 'শত্রু' দেশ পাকিস্তান ও চিন, দুই সুপার পাওয়ার আমেরিকা ও চিনের ক্ষেত্রে এবার ঠিক কী মনোভাব নেবে সাউথ ব্লক? তাও বড় প্রশ্ন। যাবতীয় বিষয়ে কী বলল ওয়াশিংটন পোস্ট, বিবিসি, ডন কিংবা আল জাজিরা?
[আরও পড়ুন: উত্তরপ্রদেশে অখিলেশ, বাংলায় অভিষেক, দেশে রাহুল, তিন ‘যুবরাজ’ স্বপ্ন দেখাচ্ছেন বিরোধীদের]
ওয়াশিংটন পোস্ট
ওয়াশিংটন পোস্টের মন্তব্য, এই জনাদেশ "মোদির প্রতি অপ্রত্যাশিত প্রত্যাখ্যান"। বলা হয়েছে, "হিন্দু জাতীয়তাবাদী দলটির প্রতি সমর্থন ক্ষয় হয়েছে। গত এক দশকের সবচেয়ে প্রভাবশালী ভারতীয় রাজনীতিবিদের অপরাজেয় ভাবমূর্তি ভেঙে গিয়েছে।" আরও বলা হয়েছে, সকলে মনে করছিলেন 'দুর্বল' বিরোধীরা মোদি ঝড়ে খড়কুটোর মতো উড়ে যাবে, বিশেষত তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে, নেতাদের জেলে পাঠিয়ে মোদির জয়ের পথ প্রশস্ত করা হয়েছিল। এত সব করেও লাভ হল না!
নিউ ইয়র্ক টাইমস
ভারতের লোকসভা ভোটের ফল নিয়ে আমেরিকার সবচেয়ে প্রভাবশালী দৈনিকের শিরোনাম- "ভারতের নির্বাচনের ফল মোদির জন্য বড় ধাক্কা।" প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, মোদির অপরাজেয় ভাবমূর্তি ভেঙে চুরমার হয়েছে। যেখানে রামমন্দির তৈরি করা হয়েছিল সেই অযোধ্যায় বিজেপির হারের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
ডন
পাকিস্তানের বিখ্যাত মিডিয়া হাউজ ডনের হেডলাইন- "ভারতে চমকে দেওয়া ভোটের ফল, কোনওক্রমে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন মোদি জোটের"। নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর মতোই অযোধ্যায় হারের কথা উল্লেখ করেছে ডন-এ।
[আরও পড়ুন: আসন কমতেই মোদি-শাহর ‘কর্তৃত্ব’ নিয়ে ক্ষোভ অন্দরে, অসন্তুষ্ট আরএসএসও!]
বিবিসি
বিবিসির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এই ফল ব্যক্তি মোদির হার, যিনি দীর্ঘ রাজনৈতিক কেরিয়ারে (গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে) প্রথমবার সংখ্যাগরিষ্ঠতা খোয়ালেন। পাশাপাশি প্রতিবেদনে "কংগ্রেসের প্রত্যাবর্তনের" কথাও বলা হয়েছে। এক্সিট পোলের 'ভুয়ো' প্রমাণিত হওয়ার কথাও লিখেছে তারা। বিবিসির মতে, সমর্থকরা 'লৌহপুরুষ' মোদিকে পছন্দ করলেও সমালোচকদের দাবি, বিজেপি নেতার আমলে দুর্বল হয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠান, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হয়েছে। এছাড়াও তাঁর শাসনকালে সংখ্যালঘু মুসলিমরা আতঙ্কিত বোধ করেন। উল্লেখ্য, বিবিসির তথ্যচিত্র ‘ইন্ডিয়া, দ্য মোদি কোশ্চেন’ (India, The Modi Question) তথ্য নিষিদ্ধ করেছিল মোদি সরকার। এই নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই বিবিসির দিল্লি-মুম্বইয়ের অফিসে হানা দেয় আয়কর দপ্তর।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট
হংকংয়ের প্রখ্যাত সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট- মোদি নিরঙ্কুশ জয়ের কথা বললেও ক্ষমতায় থাকতে জোট সরকার গড়তে হবে বিজেপিকে। এবার ছোট দলগুলোকেও গুরত্ব দিতে হবে। এছাড়াও উত্তরপ্রদেশ ও হরিয়ানায় ধাক্কা, রাজস্থান এবং মহারাষ্ট্রে হারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টে।
আল জাজিরা
কাতারের বিশ্বখ্যাত সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা হেডলাইন করেছে- "একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা খোয়াল বিজেপি, মোদির নেতৃত্বে বড় ধাক্কা"। এর পরেও মোদির নেতৃত্বেই যে সরকার গঠিত হবে, সেক্ষেত্রে শরিক দলের সাহায্য নিতে হবে, সেকথাও উল্লেখ করা হয়েছে আল জাজিরার প্রতিবেদনে। কংগ্রেসের নেতৃত্বে বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের উত্থানের কথাও বলা হয়েছে।