shono
Advertisement

তালিবানের শাসনে কেমন হওয়া উচিত ভারতের আফগানিস্তান নীতি?

তালিবানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক কি স্থাপন করবে ভারত?
Posted: 03:35 PM Sep 04, 2021Updated: 03:35 PM Sep 04, 2021

একদিকে ভারত তালিবান সরকারের সঙ্গে সতর্কভাবে ‘কূটনৈতিক বন্ধুতার সম্পর্ক’ বা এনগেজমেন্টে এখন যেতে বাধ্য। অন্যদিকে, ভারতের দুশ্চিন্তা, তলে তলে কাশ্মীরের জঙ্গিগোষ্ঠী, আইএসআই এবং হাক্কানি গোষ্ঠীর হাত ধরে তালিবানিরা যে ভারতের ভিতরে আরও বেশি ছায়াযুদ্ধে যাবে না, বা কাশ্মীরে আরও জটিলতা তৈরি করার চেষ্টা করবে না- তার কোনও গ্যারান্টি নেই। লিখছেন জয়ন্ত ঘোষাল

Advertisement

 

৯/১১, অর্থাৎ, বিন লাদেনের ভয়ংকর সেই আক্রমণের দু’-সপ্তাহ পরের কথা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানের (Afghanistan) বিরুদ্ধে সেদিন যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। পেন্টাগন ব্রিফিং রুমে সাংবাদিকরা মার্কিন প্রতিরক্ষা-সচিব ডোনাল্ড রামসফেল্ড-কে প্রশ্ন করলেন, ‘তাহলে আপনারা আফগানিস্তানে আক্রমণ শুরু করে দিলেন? কিন্তু আমরা যখনই এই প্রশ্ন করেছি, আপনি জবাব দিয়েছেন যে, না, এইরকম কোনও পরিকল্পনা নেই। তার মানে আপনি আমাদের মিথ্যে কথা বলেছেন?’ জবাবে রামসফেল্ড সেদিন কী বলেছিলেন জানেন? তিনি বলেছিলেন, “বিশ্বযুদ্ধের সময় চার্চিলের কথা একবার স্মরণ করুন। চার্চিল বলেছিলেন, যুদ্ধের সময় সত্যকে সুরক্ষিত রাখা বড় দায় এবং সত্যকে সুরক্ষিত রাখার জন্য তাকে অনেক মিথ্যার ‘বডিগার্ড’ দিয়ে ঘিরে রাখতে হয়।’ তারপর তিনি হেসে বলেন, ‘আমি অবশ্যই চার্চিল নই।’ কিন্তু একথা সকলের কাছে দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে, আমেরিকা তার রণকৌশল কখনওই প্রকাশ্যে নিয়ে আসতে চায় না। এটা পেন্টাগনের ট্র্যাডিশন।

[আরও পড়ুন: আফগানিস্তানে লাঠি যার দেশ তার]

তখন থেকেই আমেরিকার যুদ্ধ শুরু হল। সেদিন আমেরিকার এয়ারলাইন্‌স তার বিশেষ বিমান ‘ফ্লাইট ৭৭’ থেকে বিস্ফোরণ ঘটায় ‘ওয়েস্ট ওয়াল’-এ। ১৮৯ জন মানুষের মৃত্যু হয়। আর, সেজন্যই ডোনাল্ড রামসফেল্ড পেন্টাগনের ব্রিফিং রুমে সাংবাদিক বৈঠক করেছিলেন। তখন তিনি মিডিয়াকে অসত্য বলে বিপথে চালিত করার বিষয়ে চার্চিলের উদাহরণ দিয়ে বলেছিলেন যে, বিশ্বযুদ্ধের সময় অ্যালাইজ, একদম বিশেষ দিনের আগে সাংঘাতিক একটা ডিসইনফর্মেশন ক্যাম্পেন চালিয়েছিল, যার নাম দিয়েছিল ‘অপারেশন বডিগার্ড’। শুধুমাত্র জার্মানদের সংশয়ে রাখার জন্য, বিপথগামী করার জন্য এই প্রচারটা করা হয়েছিল। আসল যে আক্রমণ, তা হয় পশ্চিম ইউরোপে, ১৯৪৪ সালে।

এখন এই অশান্ত আফগানিস্তানে যা হচ্ছে এবং আমেরিকা যা করেছে বা করছে বা আগামী দিনে যা করতে চলেছে- তার কতটুকুই বা আমরা জানি! ভৌগোলিক দূরত্ব তো আছেই, তাছাড়াও, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিষয়ে আমাদের তথ্য জানার ক্ষমতাই বা কতটুকু? যেটুকু বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হচ্ছে বা দেখানো হচ্ছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে, সেখান থেকে কিছু তথ্য পড়ে আমরা নিজেদের মতামত জ্ঞাপন করছি মাত্র। চেনা কিছু রাজনেতা, গোয়েন্দা-কর্তা আর অবসরপ্রাপ্ত অফিসারদের সঙ্গে কথা বলেছি আমি। কিছু মার্কিন বা অন্য দেশের কূটনীতিকও আছেন তার মধ্যে। এই বিষয়ে আমি সবজান্তা- এই দাবি কখনওই করছি না। কিন্তু যা ঘটছে, তা দেখে কতগুলো প্রশ্ন তো উত্থাপন করতেই পারি, যেসব প্রশ্নের উত্তর আমার নিজেরও সঠিক জানা নেই।

বলা হচ্ছে, আফগানিস্তানে যে এমন একটা কাণ্ড হবে, সেটা ভারত জানত না। আমেরিকাও যা করেছে তা আচমকা, এবং এই ঘটনার মধ্যে একটা অপ্রত্যাশিত বিষয় রয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প তো অনেক দিন আগেই দোহা-তে চুক্তি পর্যন্ত করেছিলেন যে, এই বছরের ৩১ আগস্ট মার্কিন সেনা প্রত্যাহার হবে। সঠিক সময়ে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার না-করার জন্য তালিবানরা ট্রাম্পের উপর চটেও গিয়েছিল। কেননা, ট্রাম্প আরও আগেই সেনা প্রত্যাহার করার কথা বলেছিলেন। প্রেসিডেন্ট ওবামা-ও যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছিলেন, এবং ২০১৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর আমেরিকা ন্যাটো-র অফিশিয়ালদের নিয়ে কাবুলে, তাদের সেনা সদরে। একটা অনুষ্ঠান পালন করেছিল সেই দিনটাকে মনে রাখার জন্য। একটা মাল্টিন্যাশনাল কালার গার্ড প্যারেড হয়েছিল, সেখানে আবহ সংগীত চলছিল। ফোর স্টার জেনারেল একটা বক্তৃতা দিয়েছিলেন। আমেরিকার নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক শক্তির তরফে একটা গ্রিন ফ্ল্যাগ উড়িয়ে এই বার্তা দেওয়া হয়েছিল যে, আফগানিস্তানের এই সংঘাতের অবসান হতে চলেছে।

[আরও পড়ুন: শুধু তালিবান নয়, দূর করতে হবে তালিবানি মানসিকতাকেও]

ওবামা সেই দিনটিকে বলেছিলেন, ‘A milestone for our country.’ তিনি বলেছিলেন, “আমেরিকা এখন অনেক বেশি নিরাপদ এবং ১৩ বছরের যুদ্ধের অবসান ঘটতে চলেছে। এর নেপথ্যে মার্কিন সেনার আত্মত্যাগ আছে এবং আফগানিস্তানেও ‘কমব্যাট মিশন’ বন্ধ হবে। আমেরিকার ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘতম যুদ্ধ আমরা দায়িত্ব নিয়ে বন্ধ করতে চলেছি।” এটা তো কোনও গোপন ঘটনা নয়। এমনকী, ওয়াশিংটন যখন চেয়েছিল সেনা প্রত্যাহারের পর একটা ছোট গোষ্ঠী সেখানে থেকে যাক, যারা আফগানিস্তানের সেনাবাহিনীকে সাহায্য করবে ‘কাউন্টার টেররিজম’-এ, সমস্ত ‘আল কায়দা’ আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য, হামিদ কারজাই তখন বলেছিলেন যে, মার্কিন সৈন্যদের না থাকাই ভাল। তারা আফগানদের বাড়িঘর যখন-তখন ‘রেড’ করে বসে এবং সেটা নিয়ে সমস্যা জটিল থেকে জটিলতর হয়। কারজাইয়ের মতো লোক কিন্তু এ-কথাও বলেছিলেন, যদি পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে হয়, তাহলে আফগান আইনের অধীনে সমস্ত সন্ত্রাসবাদীর প্রসিকিউশন হোক। মার্কিন শক্তিকে যতটা কমিয়ে দেওয়া যায়, ততই আফগানিস্তানে গণতন্ত্র গঠন সুবিধাজনক হবে। এরপর ‘ফেয়ারওয়েল কাবুল’ বলে আমেরিকান সেনাবাহিনী ৩১ আগস্ট চলে গেল- শান্তিপূর্ণ হস্তান্তর হল ক্ষমতার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তালিবানদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই তা করল। এমনকী, সেই চুক্তিতে নতুন সরকার গঠনের ক্ষেত্রে ‘তালিবান’ শব্দটা থাকবে, না কি ‘আফগান সরকার’ বলা হবে- তা নিয়েও আলাপ-আলোচনা হয়েছে। ‘ইউনাইটেড নেশনস’ পর্যন্ত সেই আলোচনায় অংশ নিচ্ছে। তাহলে এই যে-যুদ্ধবিরতি বা যুদ্ধের অবসান বা সেনা প্রত্যাহার- তার স্ক্রিপ্টটা তো সকলের জানা!

এই যে বলা হচ্ছিল, তালিবানের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদি আলোচনা করতে চান না, তিনিও তো আলোচনা করতে বাধ্য হচ্ছেন। এগুলোকে আমি বলি, ‘নির্বাচনী রাজনীতি’ বা ‘পলিটিক্স অফ অপটিক্স’। আসলে, সবসময় তো একটা ‘ট্র্যাক টু’-ও ছিল। তা না হলে, ১৫-১৬ আগস্ট যুদ্ধবিরতির চুক্তির আগে অজিত ডোভাল তালিবানের কিছু নির্বাচিত নেতার সঙ্গে বৈঠক করতে দোহাতে গিয়েছিলেন কেন? সুতরাং এমন নয় যে, ভারতের প্রতিনিধিরা তালিবানের সরকার গঠনের প্রক্রিয়াটা জানতেন না। এখানে ভারতের সমস্যা বাড়ল কেন? আসলে ভারত চায়নি মার্কিন সেনা প্রত্যাহার হোক। তাছাড়া, প্রত্যাহার হলেই সন্ত্রাস যে এই তীব্রতায় হতে পারে, তা আমেরিকা যেমন ভাবেনি, ভারতও ভাবেনি। ভারতের বিদেশনীতি যে সর্বতোভাবে আমেরিকার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে আফগানিস্তানের প্রশ্নে, সেটাও ভারতের পক্ষে মোটেই ভাল কথা নয়। নরেন্দ্র মোদিকে রাশিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান ভ্লাদিমির পুতিনকে ফোন করতে হচ্ছে, এইটুকু বার্তা দেওয়ার জন্য যে, ভারত কিন্তু এখনও ‘ন্যাটো’-র সদস্য হয়নি, ভারত কিন্তু এখনও চিন-রাশিয়া-ইরানের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখেই চলতে চায়, এত যুদ্ধের পরেও চিন ও ভারতের দ্বিপাক্ষিক আলোচনা এখনও বন্ধ হয়নি।

কোনও সন্দেহ নেই, নরেন্দ্র মোদি চিন ও পাকিস্তানের সঙ্গে যেভাবে সংঘাতের রাজনীতিতে গিয়েছিলেন, এমনকী, যেভাবে ভারতের ভিতর কাশ্মীর সমস্যার সমাধানে আলাপ-আলোচনার বদলে হুরিয়ত নেতৃত্বকে সম্পূর্ণ অবজ্ঞা করে ৩৭০ ধারাকে অবলুপ্ত করার পথে গিয়েছিলেন, সেই নিরিখে তালিবান সরকারের সঙ্গে এনগেজমেন্ট কেমন যেন অস্বস্তিদায়ক! কাশ্মীরি জঙ্গিদের ক্ষেত্রে শান্তি প্রক্রিয়ার বদলে সংঘাতের পথে যাওয়া হয়েছে। এখন তালিবানের সঙ্গে কথা বলা দেখে মনে হচ্ছে, এই সরকার কাশ্মীরের ক্ষেত্রে যে নীতি অবলম্বন করছে, আফগানিস্তানের ক্ষেত্রে তা করছে না। সুতরাং, সন্দেহ নেই, ভারতের বিদেশনীতিতে আফগানিস্তান নিয়ে যথেষ্ট দুর্বলতা ও ব্যর্থতা প্রকাশ পাচ্ছে। এমনকী, তড়িঘড়ি দূতাবাস তুলে নেওয়াতেও তা প্রকাশিত। যেখানে রাশিয়া-চিন, পাকিস্তান-তুরস্কের দূতাবাস আছে এবং তারা তালিবান সরকারকে বৈধতা দিচ্ছে, সেখানে ভারতের দূতাবাস সম্পূর্ণ না তুলে একটা টোকেন দূতাবাস অন্তত রাখা উচিত ছিল। কিন্তু এর ইতিবাচক দিকটা হল, কাবুলে ছিলেন যে-সমস্ত কূটনীতিক, তাঁরা এখন সক্রিয় এবং দোহাতে ভারতের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে তালিবান সরকারের আলাপ-আলোচনা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে।

এক্ষেত্রে আমেরিকার মাধ্যমে শুধু নয়, ভারতের উচিত সরাসরি তালিবান (Taliban) সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা। ভারতের আফগান-নীতি দু’মুখো। মুখে তালিবান সরকার যা-ই বলুক না কেন, ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার কথা বলুক বা কাশ্মীরের ব্যাপারে নাক না গলানোর কথা- তলে তলে কাশ্মীরের জঙ্গিগোষ্ঠী, আইএসআই এবং হাক্কানি গোষ্ঠীর হাত ধরে তালিবানিরা যে ভারতের ভিতরে আরও বেশি ছায়াযুদ্ধে যাবে না, বা কাশ্মীরে আরও জটিলতা তৈরি করার চেষ্টা করবে না- তার কোনও গ্যারান্টি নেই। এই তালিবান দ্বিচারিতার কথাও মাথায় রাখতে হবে। ভারতের ভিতরে যাতে তালিবানি শক্তি কোনওরকম সন্ত্রাসের চেষ্টা না করতে পারে- সে-ব্যাপারে অনেক বেশি সজাগ হতে হবে। উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচন আসছে, সেখানে তালিবানকে সামনে রেখে মেরুকরণের রাজনীতি করতে গিয়ে বিদেশনীতিতে যাতে কোনও সমস্যা না হয়, সেটা দেখতে হবে। কেননা, অন্যদিকে ভারতকে আফগানিস্তান সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। না হলে লাভ হয়ে যাবে চিন-রাশিয়া-ইরান অক্ষের।

সুতরাং, ভারতের যেটা সবচেয়ে বড় সমস্যা- ভারত এবং পাকিস্তানের লড়াইয়ের একটা মস্ত বড় ময়দান তৈরি হল। কাশ্মীরকে নিয়ে বিরোধ তো আছেই, আফগানিস্তানের জন্য আবার নতুন করে ভারত-পাকিস্তানের রণক্ষেত্র তৈরি হওয়াটা মোটেই কাজের কথা নয়। ভারত এবং পাকিস্তানের লড়াই যাতে আরও তীব্র না হয় সেটা দেখতে হবে এবং শান্তিপ্রক্রিয়ার পথে ভারতকে যেতে হবে। ’৫৯-এর ফেব্রুয়ারি মাসে, নেহরু আফগান প্রেসিডেন্টকে দিল্লিতে বলেছিলেন যে, দেশভাগের পরে আলাদা বাউন্ডারি তৈরি হয়েছে বটে, কিন্তু ভারত-আফগানিস্তানের প্রাচীন পারস্পরিক সম্পর্ক এবং তার সঙ্গে জড়িত মিউচুয়াল ইন্টারেস্টগুলো ভুলে গেলে চলবে না। দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বজায় রাখা খুব প্রয়োজনীয়। ভারত-আফগানিস্তানের এই কূটনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে ভাবনাচিন্তা করার সময় এসেছে এই তালিবানি সরকার গঠনের সময়।

একটা জিনিস পরিষ্কার, আমেরিকার দীর্ঘ ৩০ বছরের লড়াই কার্যত ব্যর্থ। আফগানিস্তানের রাজনীতিতে এইভাবে নাক গলানো ভুল ছিল, ঠিক যেভাবে একটা সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন নাক গলিয়ে ভুল করেছিল। বিন লাদেন-পারভেজ মুশারফের হাতে হাত মিলিয়ে আমেরিকা সিআইএ-র সাহায্যে রাশিয়াকে টাইট দেওয়ার যে চেষ্টা করেছিল, তা যেমন ভুল ছিল, তেমনই রাশিয়ার সেনা প্রত্যাহারের পর আফগানিস্তানের স্ব-শাসন বজায় রাখতে না দেওয়াও ভুল ছিল। একটা সময় ব্রিটেন কাবুল দখল করেছিল, তারপর তারা চলেও গিয়েছিল।

[আরও পড়ুন: অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পথে ভারতে থাকা আফগান শরণার্থীরা]

আফগানিস্তান এমন দেশ নয়, যেখানে মাদকচক্রের রমরমা, এবং এই আফিম উৎপাদন কিন্তু সন্ত্রাসের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। ২২০ থেকে ২৫০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের আফিম প্রত্যেক বছর আফগানিস্তানের ভিতর থেকে উৎপাদিত হয়। সেই বিক্রির টাকা নিয়ে এই জঙ্গি সংগঠনগুলো অস্ত্রসম্ভার করে, আক্রমণ বজায় রাখে, তাদের ট্রেনিং হয়, এছাড়াও আসে নানা বিদেশি শক্তির অর্থ। সুতরাং ইরানে যেরকম তেল আছে, আফগানিস্তানে তা নেই। ধূ-ধূ মরুভূমি। আমেরিকা চায়নি, সেটাও অন্য কারও হাতে চলে যাক। এর ফলে পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতর হয়েছে।

ভারতের এখন তাই স্বনির্ভর বিদেশনীতির মাধ্যমে আফগানিস্তানের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা ছাড়া অন্য কোনও বিকল্প রাস্তা আছে বলে আমার মনে হয় না। চিন-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে যেরকম বলা হয়, কূটনীতি চাই, কিন্তু সতর্কতার সঙ্গে- সেরকম আফগানিস্তানের তালিবান সরকারের সঙ্গে সতর্কভাবে ‘কূটনৈতিক বন্ধুতার সম্পর্ক’ বা এনগেজমেন্টে ভারত এখন যেতে বাধ্য। ১৯৬৩ সালে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী যা বলেছিলেন সেটাই স্মর্তব্য- রাজনীতির প্রথম রুল কী জানেন? আফগানিস্তানকে কখনও আক্রমণ করবেন না।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement