বিরাট যদি বস হন। অনুষ্কা তাহলে বসের বউ। অধীনস্থ নির্বাচকেরা তাঁকে চা এগিয়ে দিয়েছেন বলে, ঝড় তুলেছেন ফারুখ ইঞ্জিনিয়ার। বসের বউরা কি সব সময় খাতির চান? লিখছেন অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়।
গাছের চেয়ে যেমন গাছের ছায়া সব সময়ই দীর্ঘ, ঠিক সেরকম, বসের থেকে বসের বউয়ের ছায়া আরও একটু লম্বা। যারা চাকরি করে, যাদের সারাদিন কেটে যায় অফিসের চিন্তায়, তাদের আরেকটু বেশি চিন্তাও করতে হয়- বসের বউকে কী করে খুশি রাখা যায়? অনুষ্কা শর্মা এবং ফারুখ ইঞ্জিনিয়ার নিয়ে এই যে নতুন বিতর্ক, তার কারণ খুব পরিষ্কার। আমাদের দেশ চলেই বলিউড আর ক্রিকেট দিয়ে। যে আমাদের ক্রিকেট টিমের কপ্টেন, সে আমাদের দেশেরও অন্যতম প্রধান মুখ। বিরাট কোহলির বউ হিসেবে যেদিন থেকে আমরা অনুষ্কা শর্মাকে চিনেছি, সেদিন থেকে সে কিন্তু শুধু হিরোইন নয়, আমাদের কাছে বসের বউই। সত্যিই A Sharma আর সে শর্মা নেই। এখন সে বদলে গিয়েছে। এখন সে চা খাবে না কফি খাবে, ওয়াইন খাবে না জল খাবে, সেই নিয়েও জোরালো চর্চা হবে।
[আরও পড়ুন: শৈলশহরে দেব, ‘সাঁঝবাতি’র শুটিং সেরে নাথুলায় সীমান্তরক্ষীদের কাছে সাংসদ ]
আগেও যে এরকমটা ছিল না তা নয়। একটা সময় ছিল যখন মার্শনিল গাভাসকর ‘ছায়া বস’ ছিলেন ইন্ডিয়ান ক্রিকেট টিমের। পরে রোমি নিখঞ্জ এসেছেন। ডোনা গাঙ্গুলি এসেছেন। সাক্ষী ধোনি এসেছেন। ফার্স্ট লেডি অফ ইন্ডিয়ান ক্রিকেট এখন অনুষ্কা শর্মা। আর ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার কী বলল, তাতে তার কিছু যাবে-আসবে না। ঘটনা এটাই যে, অনুষ্কা শর্মার পছন্দ-অপছন্দ-মর্জি, এগুলোও এখন ভারতীয় ক্রিকেটে কোথাও না কোথাও জরুর-ই ছায়া ফেলছে। (pun intended)
ব্যক্তিগতভাবে আমার ‘বসের বউ’ ভাগ্য খুব একটা ভাল নয়। বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে যাদের সঙ্গে কাজ করেছি, সেখানে এই ব্যাপারটার মধ্যে দিয়ে খুব একটা যেতে হয়নি। আমার প্রথম চাকরি ‘যুগান্তর’অফিসে। ট্রেনি জার্নালিস্ট হিসেবে জয়েন করেছিলাম। সম্পাদক দীপঙ্কর চক্রবর্তী খুব আমুদে মানুষ ছিলেন। বিভিন্নরকম নেশাটেশা করার যা শিক্ষা, লেখালিখির পাশাপাশি সেটাও উনিই আমায় দিয়েছিলেন। দীপঙ্করদা অকৃতদার ছিলেন। এমন নয় যে উনি মহিলা-সঙ্গ পছন্দ করতেন না। ওঁর কাছে মাঝে মাঝেই সন্ধের দিকে ঝাঁক বেঁধে সুবেশা তরুণীরা আসতেন। তাঁদের সঙ্গে উনি গল্পে মেতে উঠতেন। কাউকে কাউকে হয়তো একটু নেক নজরে দেখতেনও। সেই ঝামেলা কখনও কখনও আমাকে সামলাতে হয়েছে। বসের প্রিয় তরুণীর লেখা কারেক্ট করতে গিয়ে আমার বাড়ি ফিরতে ভোর হয়ে গিয়েছে। গভীর রাত পর্যন্ত অফিসে তার লেখা নিয়ে পড়ে থেকেছি, লেখাটা যাতে ঝুলে না যায়। এ কিন্তু বসের বউ নয়, বউয়ের মতো। আর ‘বউয়ের মতো’ যারা, তাদের নিয়েও সব সময়ই প্রচুর ঝঞ্ঝাট! আমি সাংবাদিক জীবনে যা শিখেছি, অনেকটা দীপঙ্করদার হাতে। অফিসিয়ালি তাঁর কোনও বউ ছিল না। ফলে যা ঘটেছে, নাথিং অফিসিয়াল অ্যাবাউট ইট!
‘যুগান্তর’-এর পর ঢুকলাম ব্ল্যাক ম্যাজিক কোম্পানিতে। সেখানে আমার বস ছিলেন রঙ্গন চক্রবর্তী। আশ্চর্য ব্যাপার যে, রঙ্গনদাও সেই সময় একা ছিলেন। ফলে ওই অফিসেও আমাকে আলাদা করে বসের বউকে নিয়ে কিছু ভাবতে হয়নি। এরপর যখন ‘রোববার’ শুরু হয়, আমার বস ছিলেন ঋতুপর্ণ ঘোষ। তিনিই কাগজের সম্পাদক। ঋতুদার স্ত্রী ছিল না। আর সত্যি বলতে স্ত্রীর দরকারও ছিল না। কারণ যে কোনও তুচ্ছ ব্যাপারে বায়না বাঁধানোর জন্য তিনি ছিলেন একাই একশো। তাঁকে সামলানোর মধ্যে খুব মধুর একটা ব্যাপার ছিল। ঋতুদার রাগ আমরা সবাই উপভোগ করতাম। তাঁর প্রেজেন্সটাই এমন ছিল যে, সব সময় আমাদের দপ্তর ভরিয়ে রাখত। ঋতুদার সমস্ত রকম খুঁতখুঁতানি, নানারকমের বাতিক, সব কিছু মিলিয়ে আজকে ‘রোববার’, ‘রোববার’ হয়েছে।
এখন আমার বস সৃঞ্জয় বসু। ‘রোববার’ শুরুর সময় সম্পাদকমণ্ডলীর অন্যতম মুখ ছিল সৃঞ্জয়ের স্ত্রী নীলাঞ্জনা। সে কোনওদিন বুঝতে দেয়নি যে, সে বসের বউ। অনেকবার আমরা একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করেছি। সেটা ও-ই খাইয়েছে সব সময়। তবে একটা কারণে আমি নীলাঞ্জনাকে একটু সমঝে চলি। তা হল- যে খেতে ভালবাসে, তাকে ও প্রবল খাইয়ে ছাড়বে। মাঝে মাঝে ও আমাকে আওয়াজ দেয়, কই তুমি তো খাওয়াচ্ছ না। অনেকবার বলেছি খাওয়াব, কিন্তু হয়ে ওঠেনি। এবার আমি সত্যি সত্যি নীলাঞ্জনাকে একবার খাওয়াতে চাই। বসের বউ হিসেবে নয়। বন্ধু হিসেবে।
রইল কিছু টিপস।
[আরও পড়ুন: শৈলশহরে দেব, ‘সাঁঝবাতি’র শুটিং সেরে নাথুলায় সীমান্তরক্ষীদের কাছে সাংসদ ]
প্রফেশনাল বনাম পার্সোনাল
বসের স্ত্রী আপনাকে হেয়ারস্টাইল নিয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন? এক কান দিয়ে শুনে অন্য কান দিয়ে বের করে দিন। কিন্তু পেশাদার কোনও পরামর্শ দিলে অবশ্যই সেটা শোনার চেষ্টা করুন।
সম্মান- বসের স্ত্রীর পরামর্শ যদি শোনার মতো না-ও হয়, তাঁকে সম্মান করতে শিখুন। তাঁর সঙ্গে ভদ্রভাবে কথা বলুন।
রাজনীতি নিয়ে আলোচনা নয়- তাঁর সঙ্গে আড্ডাচ্ছলে কথা বলার সময়ও সতর্ক থাকা দরকার। পছন্দের টিভি সিরিজ নিয়ে খোলাখুলি কথা বলতে পারেন। কিন্তু রাজনৈতিক মতামত তাঁর সঙ্গে শেয়ার না করাই মঙ্গল।
ওঁর ব্যক্তিগত কাজ এড়িয়ে যান- বসের স্ত্রী যদি আপনাকে দিয়ে তাঁর ব্যক্তিগত কাজ করাতে চান, মুখের উপর প্রত্যেকবার ‘না’ বলা সম্ভব নয়। কিন্তু বুদ্ধি করে বোঝানো দরকার যে, তাঁর কাজ করার জন্য অফিস আপনাকে টাকা দিচ্ছে না।
ধৈর্য ধরুন- বসের বউকে সহ্য করা একেবারে অসম্ভব? রাগের মাথায় চাকরি ছেড়ে দেবেন না তাই বলে। একটু মানিয়ে চলুন। পাশাপাশি নিজের সিভি আপডেটেড রাখুন, সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে যাতে দেরি না হয়।
স্ট্র্যাটেজি- ‘বসের বউ’ থেকে খুব দূরে চলে যাবেন না। আবার বেশি কাছে যাওয়ারও প্রয়োজন নেই।
The post কীভাবে সামলাবেন ‘বসের বউ’কে? রইল টিপস appeared first on Sangbad Pratidin.