যেমন ভাবেন, তেমনই এগোন। আপনার ভাবনা নির্দিষ্ট, রাস্তা নির্ধারিত, গন্তব্যও পরিকল্পিত। টার্গেট স্থির না করে, আপনি এক কদমও বাড়ান না। কী তাই তো? এই সমস্ত বৈশিষ্ট্যগুলি যদি আপনার সঙ্গে হুবহু মিলে যায়, তাহলে বিমার জগতে অন্তত আপনার জন্য ‘পারফেক্ট ম্যাচ’ হতে পারে ইউলিপ। অর্থাৎ ইউনিট লিঙ্কড ইনসিওরেন্স প্ল্যান। যদি নির্দিষ্ট কোনও লগ্নি-লক্ষ্য থাকে, তাহলে ইউলিপ করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। পরামর্শে নীলাঞ্জন দে
ইনসিওরেন্স গ্রাহক যদি নির্দিষ্টভাবে কোনও ‘ইনভেস্টমেন্ট গোল’ অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে চান, তাহলে ইউলিপ ব্যবহার করতে পারেন। বিমা এবং বিনিয়োগ, দুই-ই, পাবেন এখানে। বাজারে অনেক ধরনের ইউলিপ পাবেন, বৈশিষ্ট্যগুলি পরীক্ষা করে তবেই বেছে নিন। তবে মনে রাখুন, মূল বিষয়টি সব প্রোডাক্টের জন্য সমান-পারফরম্যান্স এক্ষেত্রে ‘মার্কেট-লিঙ্কড’, একান্তই বাজার-নির্ভর।
[আরও পড়ুন: অবসরের পর আর্থিক নিশ্চয়তা চান, অবশ্যই জেনে রাখুন এই তথ্যগুলি]
যদি ‘ওয়েলথ ক্রিয়েশন’ আপনার উদ্দেশ্য হয়, সাবেক বিমা ছাড়াও, তাহলে বেশ কিছু ইউলিপ আপনার নজর কাড়বে। মনে রাখতে হবে, এ যুগে তুলনায় কমবয়সি অনেকেরই অকালপ্রয়াণ হচ্ছে। আধুনিক সময়ের এক বিরাট সমস্যা যে স্বাস্থ্য-জনিত, তা আমরা সকলেই মানি। জীবন বিমা তাই ‘নেসেসিটি’ তথা প্রয়োজনীয়তার মধ্যেই পড়ে। তা মার্কেট-মুখী হলে আখেরে লাভ আপনারই। ইউলিপের মাধ্যমে রিটার্ন পেলে তা বাচ্চার শিক্ষা, বা নিজের বাসস্থানের জন্য যদি খরচ করতে পারেন, তাহলে তো ভালই হয়। নিজের রিস্ক প্রোফাইল সম্বন্ধে ধারণা করে নিন, তারপর নির্দিষ্টভাবে সঠিক ইউলিপ বেছে নিতে হবে। যে কোনও ইউলিপের প্রধান বৈশিষ্ট্য তার ইনভেস্টমেন্ট পোর্টফোলিও। যদি আপনার রিস্ক নেওয়ার ব্যাপারে অসুবিধা না থাকে, তবে ইকুইটি-নির্ভর প্ল্যান বেছে নিন। বাজারের ওঠাপড়ায় অসুবিধা হলেও, প্রফিট করার সুযোগ থাকবে। ‘রিস্ক’ তথা ‘ঝুঁকি’ যদি তেমনভাবে নিতে না চান, তাহলে আপনার জন্য ডেটই ভাল।
ইউলিপ-এর উদাহরণ : বাজাজ অ্যালায়াঞ্জ লাইফ গোল অ্যাসুয়র আট ধরনের ফান্ড এবং চারটি বিভিন্ন ইনভেস্টমেন্ট স্ট্র্যাটেজ-সহ এই ইউলিপটি আমরা বেছে নিয়েছি তাদের বৈচিত্র্যের কথা ভেবে, আমাদের কোনও বিশেষ পক্ষপাত নেই। ষাট বছরের কমবয়সি গ্রাহকগণ নিতে পারবেন। পাঁচ থেকে শুরু করে কুড়ি বছরের টার্ম নেওয়া সম্ভব। মান্থলি প্রিমিয়াম দিতে পারেন, আবার দরকার বুঝে বছরে কেবল একবারই। তবে মান্থলি ইত্যাদি মোডের ক্ষেত্রে মিনিমাম অ্যামাউন্টের শর্ত আছে। ইচ্ছুক গ্রাহকরা যেন বাজাজ অ্যালায়াঞ্জ-এর সঙ্গে কথা বলে বিশদে জেনে নেন। যা আমরা বিশেষভাবে উল্লেখ করতে চাই তা হল ইনভেস্টমেন্টের বৈচিত্র্য। মিডক্যাপ, ব্লুচিপ, বন্ড – একাধিক বিকল্প আছে, সেগুলি আলাদাভাবে বোঝা প্রয়োজন।
সঞ্চয়-এর বক্তব্য- এই জাতীয় প্ল্যান নিয়ে তখনই আপনি ভাবনাচিন্তা করবেন যখন আপনাকে দীর্ঘমেয়াদে সম্পদ বাড়াতে হবে। ডেট, ব্যালেন্স, ইকুইটি – সব আছে, কিন্তু ঠিকঠাক না বাছতে পারলে মুশকিলে পড়বেন কারণ তাহলে রিটার্ন তেমন ভাল নাও হতে পারে। সোজাসাপ্টা প্রোডাক্ট, বেশি ঘোরপ্যাচ নেই।
ট্যাক্স সংক্রান্ত তিনটি জ্ঞাতব্য বিষয়-
–আপনার দেওয়া প্রিমিয়াম সেকশন 80C-র আওতায় আসবে।
–ডিডাকশন পাবেন বছরে দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত।
–ম্যাচুরিটি বেনিফিট সেকশন 10(10D)-র খাতে এলিজিবল হবে।
ইউলিপের চার্জেস
সকলেই ইদানিং ইনসিওরেন্স প্রোডাক্টগুলির চার্জেস নিয়ে সরব। যে কোনও ফাইন্যান্সিয়াল ক্ষেত্রেই, সে ব্যাঙ্কই হোক বা মিউচুয়াল ফান্ড, নানাবিধ চার্জেস, রিটার্নের উপর আঘাত আনে, একথা তো বলাই বাহুল্য।
ইউলিপ প্রোডাক্টের চার্জগুলি কী? জেনে নিন।
(১) প্রিমিয়াম অ্যালোকেশন চার্জ : প্রিমিয়ামের এক অংশ, আপফ্রন্ট ডিডাকশন হিসাবে ধরা হয়। বলা হয়, বিমা সংস্থার কিছু প্রাথমিক খরচ থাকে পলিসি ইস্যু করার খাতিরে। আন্ডাররাইটিং করাতে হয়, ডিস্ট্রিবিউশন-সংক্রান্ত খরচও থাকে। সব মিলিয়ে, এই খরচ বাদ যায়, তারপরই পলিসিহোল্ডারের টাকা বিনিয়োগ করা হয়।
(২) মর্টালিটি চার্জ : ইউলিপ তো লাইফ কভারও দেয়, তাই ইনসিওরেন্স কোম্পানিকে গ্রাহকের মৃত্যুতে টাকা দিতে হয় প্ল্যানের শর্ত অনুযায়ী। মর্টালিটি চার্জ তারই প্রতিফলন। এটি নির্ভর করে বয়স, স্বাস্থ্য, কত টাকার কভারেজ নেওয়া হচ্ছে, এমনই কিছু শর্তের উপর।
(৩) ফান্ড ম্যানেজমেন্ট চার্জ : ইউলিপ তো পলিসি হোল্ডারদের টাকা মার্কেটে বিনিয়োগ করে, রিটার্ন যাতে যথাযথ হয় সে ব্যাপারে সচেষ্ট থাকে। IRDA, মানে বিমা নিয়ন্ত্রক, ফান্ড ম্যানেজমেন্ট চার্জ একটি লিমিটের মধে্য রাখার নিয়ম করেছে। সাধারণত, বন্ড বা অন্য ডেট সিকিউরিটিজ দিয়ে গঠিত পোর্টফোলিও হলে এই ফান্ড ম্যানেজমেন্ট চার্জ কম হয়। এছাড়াও, পলিসি অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের জন্য চার্জ ধার্য করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে ইউনিট বিক্রি (রিডেম্পশন) করে এই চার্জ নেওয়া হয়ে থাকে।
সর্বশেষে, সারেন্ডার চার্জ–
যদি পলিসি হোল্ডার আগেভাগে প্রিমিয়াম দেওয়া বন্ধ করে তাঁর প্ল্যানটি সারেন্ডার করেন। ডিসকনটিনুয়ান্স-এর সম্বন্ধে জেনে নেওয়া উচিত প্রথম প্রিমিয়ামটি দেওয়ার সময়ই। পরিশেষে বলি, ইদানীং ইউলিপের দুনিয়ায় কিছু বিশেষ ধরনের প্ল্যান অাসছে – নতুন বিনিয়োগকারীরা যেন অবশ্যই সেগুলি নিয়ে পড়াশোনা করে নেন। লাইফ কভার কি থাকবে? এই প্রশ্নটি যেন চাপা না পড়ে যায়। এছাড়াও, যদি ‘লয়ালটি অ্যাডিশন’জাতীয় সুবিধা পাওয়া যায়, সেগুলি নিয়েও জেনে রাখা উচিত।
বিঃদ্রঃ
ছোটদের ফিউচার প্ল্যানিং করতে পারবেন ভাল কোনও ইউলিপ দিয়ে, মনে রাখুন। ইনভেস্টমেন্ট হরাইজন নিয়ে আপনার ধারণা যেন সঠিক হয়, তাহলে সুবিধা হবে। প্রয়োজনে টপ-আপ নেওয়ার ব্যাপারে দ্বিধা করবেন না। ইউলিপ রিস্ক-ফ্রি নয়, মার্কেটে উত্থানপতন লেগেই থাকে। আপনার ভ্যালুও বাড়বে কমবে সেইভাবে।
(লেখক লগ্নি পরামর্শদাতা)