সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘হায়, জীবন এত ছোট কেনে?’ এই প্রশ্ন তো কেবল তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কবি’ উপন্যাসের সংলাপ মাত্র নয়। এ যেন আসলে মানব সভ্যতার গভীরে থেকে যাওয়া এক চিরকালীন আক্ষেপ। তবে সময় বদলেছে। উন্নতি হচ্ছে চিকিৎসা পদ্ধতির। কিন্তু যতই এগিয়ে যাক বিজ্ঞান, অনন্ত আয়ু তথা অমরত্ব বোধহয় কোনও দিনই পাবে না মানুষ। একটি নির্দিষ্ট বয়ঃসীমার বেশি টিকে থাকতে পারে না মানব শরীর। এক নয়া গবেষণায় উঠে এল এমনই দাবি।
‘নেচার কমিউনিকেশনস’ জার্নালে সম্প্রতি এই বিষয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে গাণিতিক মডেলিং পদ্ধতির সাহায্যে মানুষের সর্বোচ্চ আয়ু (Lifetime) কত হতে পারে তা নির্ণয় করা হয়েছে। আর সেই হিসেব বলছে, ১২০ থেকে ১৫০ বছরের বেশি আয়ু পাওয়া সম্ভব নয় মানুষের। কেননা ওই বয়সের পর অসুস্থতা ও ক্ষত সারিয়ে ওঠার মতো ক্ষমতা আর থাকে না মানব শরীরের। ফলে মৃত্যুকে এড়ানো অসম্ভব হয়ে যায়।
[আরও পড়ুন: বারাণসীতে হঠাৎ সবুজ হয়ে যাচ্ছে গঙ্গার জল! ছড়াচ্ছে আতঙ্ক, কী জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা?]
এই দাবিকে যদিও অকাট্য বলছেন না গবেষকরা। তবে তাঁদের দাবি, প্রভূত পরিমাণে তথ্য নিয়ে তাঁরা কাজ করেছেন। ফলে এই সম্ভাবনার জোরটাই অনেক বেশি। অন্যতম গবেষক নোভাটোর এক গবেষণাকারী সংস্থার অধ্যাপক জুডিথ ক্যামপিসি জানাচ্ছেন, ঐতিহাসিক ও বর্তমান সব ধরনের তথ্যই কাজে লাগানো হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘এটা অবশ্যই অনুমান। তবে যথেষ্ট পরিমাণে তথ্যের উপরে তৈরি করেই তা করা হচ্ছে।’’
ঠিক কী ধরনের তথ্য নিয়ে কাজ করেছেন গবেষকরা? আমেরিকা, ব্রিটেন, রাশিয়ার প্রায় ৫ লক্ষ মানুষের মেডিক্যাল ডেটা তথা তথ্য ঘেঁটে দেখা হয়েছে। কয়েক মাস ধরে এই সংখ্যক মানুষের রক্ত পরীক্ষা করা হয়েছে বারবার। দুই ধরনের অসুখ প্রতিরোধী শ্বেত রক্তকণিকা, তিনটি বিভিন্ন বয়সের শ্রেণি এবং নানা ধরনের আকারের রক্তকোষের উপরে ভিত্তি করে গবেষণা এগিয়েছে। সমস্ত তথ্যকে একত্রিত করে কম্পিউটার মডেল তৈরি করে তাঁদের ‘বায়োলজিক্যাল’ বয়স নির্ণয় করা হয়েছে। তারপর বিভিন্ন সময়ে নেওয়া রক্তের নমুনা বিশ্লেষণ করে তাঁদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা ও আঘাত সামলে ওঠার ক্ষমতার কতটা পরিবর্তন হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা হয়েছে। সেই হিসেব থেকে এই সিদ্ধান্তে এসেছেন গবেষকরা।
তবে এই তথ্যের পাশাপাশি মানুষের শারীরিক সক্ষমতার বিষয়টিও গবেষণার সময় বিচার করা হয়েছিল। সব মিলিয়ে দেখা গিয়েছে, কোনও মানুষের পক্ষেই ১৫০ বছরের বেশি আয়ু পাওয়া সম্ভব নয়। এই বয়ঃসীমা নিয়ে তর্ক থাকতে পারে, সে সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না গবেষকরা। কিন্তু জুডিথ ক্যামপিসির মতে, অমরত্ব একটা অসম্ভব আইডিয়া। তাঁর কথায়, ‘‘একটা বিষয় নিশ্চিত। আমাদের সকলকেই একদিন না একদিন মরতে হবে।’’