অভিরূপ দাস ও গৌতম ব্রহ্ম: ঘাড়ে বাঁধা ২৭ পাউন্ডের বাটখারা। রাস্তাঘাটে তাই নিয়েই হেঁটে চলেছে নয়া প্রজন্ম। সে ভারের চোট এমনই যে ক্রমশ বেঁকে যাচ্ছে গলা। আরও অবাক বিষয়! ঘাড়ে বাঁধা ওই বাটখারা খালি চোখে দেখা যাচ্ছে না। ঘাড় যত নিচু হচ্ছে ততই প্রকট হচ্ছে ওজন।
[ওষুধ নয়, ঘরোয়া টোটকায় সারান পেট খারাপ]
সারাদিন মোবাইল নিয়ে খুটখুট। রাস্তাঘাটে মোবাইলে টাইপ করতে করতেই পথ চলা। ঘরের ছেলেটা কি একটু কুঁজো হয়ে দাঁড়াচ্ছে? বেহালার দীপ্তার্ক জানিয়েছে, দু’সপ্তাহ ধরে রোজই তাঁর মাথাব্যথা করছিল। চিকিৎসকরা বলছেন, ওই মাথাব্যথাই ছিল অসুখের শুরু। পাকাপাকিভাবে টেক্সট নেক সিনড্রোম বাসা বেঁধেছে দীপ্তার্কর শরীরে। মহারাষ্ট্রের সাঞ্চেতি ইনস্টিটিউট কলেজ অফ ফিজিওথেরাপি ইতিমধ্যেই একটি সমীক্ষা চালিয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে মোট মোবাইল ব্যবহারকারীর আট শতাংশ ইতিমধ্যেই এই রোগের শিকার। ২৭ শতাংশ মোবাইল ব্যবহারকারী একেবারে খাদের কিনারায় পৌঁছে গিয়েছে!
টেক্সট নেক! এ কেমন নাম? চমকে যাচ্ছেন সকলেই। আদতে এ শব্দবন্ধনী যেন রোজকার জীবনের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে। রাস্তাঘাটে, সর্বত্র মাথা নিচু করেই হাঁটছে তরুণ থেকে মধ্যবয়স্ক। স্মার্টফোনের নেশায় সোজা হয়ে হাঁটতে দেখাই বিড়ম্বনা। সকলেই টেক্সট করতে ব্যস্ত। নেট সার্ফ করতে করতে পথ চলাটাই দস্তুর। আর এই টেক্সট করতে করতে ঘাড়-গলার বেহাল দশা। তাতেই তো জন্ম নিচ্ছে ‘টেক্সট নেক সিনড্রোম।’ পশ্চিমেই প্রথম আবিষ্কার এ রোগের। ক্রমশ তা পা রেখেছে এই শহরেও। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের অর্থোপেডিক সার্জন ডা. গৌতম ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, দীর্ঘক্ষণ নিচু হয়ে মোবাইল ব্যবহার করা ঘাড়, গলার পক্ষে অত্যন্ত হানিকারক। প্রবাসে এ অসুখের জন্ম অনেকদিন আগে। “সেখানে যে স্মার্টফোনের ব্যবহারও শুরু অনেকদিন আগে।” জানিয়েছেন অস্থির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। দেখা যাচ্ছে মাথা সোজা অবস্থায় শিরদাঁড়াকে কোনও অতিরিক্ত ওজন বহন করতে হয় না। কিন্তু অদ্ভুতভাবে মাথা যত নিচু হবে ঘাড়ের উপর চাপবে তত ওজন। কীরকম? অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সুজিতনারায়ণ নন্দী জানিয়েছেন, মাথা যদি সামনের দিকে ১৫ ডিগ্রি ঝুঁকে থাকে সেক্ষেত্রে ২৭ পাউন্ড ওজন চাপে গলার উপর। আর মাথা যদি ৩০ ডিগ্রি ঝুঁকে থাকে সেক্ষেত্রে ৪০ পাউন্ড ওজন যোগ হয় ঘাড়ের উপর! এতটা ওজন বহন করতে অসুবিধে হয় মেরুদণ্ডের। দীর্ঘদিন ধরে নিচু হয়ে হাঁটতে হাঁটতে তাই মেরুদণ্ডের স্বাভাবিক গঠন নষ্ট হয়ে যায়। শহরের ফিজিওথেরাপিস্টরা বলছেন, “ভাবুন একবার ৪০ পাউন্ড অতিরিক্ত ওজন ঘাড়ে চেপে রয়েছে। অস্থি তো বেঁকে যাবেই।”
কী করণীয়? চিকিৎসকদের পরামর্শ, মাথা হেট করে নয়, হাতটা সামান্য তুলে মোবাইলটাকে চোখের সামনে তুলে আনুন। এভাবে মোবাইল ব্যবহার করলে টেক্সট নেক এড়ানো সম্ভব। শুধু তাই নয় পনেরো মিনিটের বেশি নিচু হয়ে মোবাইল ব্যবহার ব্যবহার না করারও পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
[ পালটে গিয়েছে গলার স্বর! ক্যানসারের লক্ষণ নয়তো?]
The post দিনভর স্মার্টফোনে ব্যস্ত! জানেন, ঘাড়-গলার কী মারাত্বক ক্ষতি হচ্ছে? appeared first on Sangbad Pratidin.