সুনীপা চক্রবর্তী, ঝাড়গ্রাম: জঙ্গলমহল। নামেই পরিচিতি টের পাওয়া যায়। শাল, পিয়াল, মহুলের সারিতে ঘেরা একরের পর একর জঙ্গলমহল। বাংলার চার জেলা – বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রামের (Jhargram) বিস্তীর্ণ অংশ জঙ্গলমহলের মধ্যেই। জঙ্গলের পথ – সে এক অপূর্ব মায়াবী পরিবেশ। কিন্তু সম্প্রতি বিপন্ন এই জঙ্গলমহলের একটা বড় অংশই। ঝাড়গ্রামে বছরের একটা নির্দিষ্ট সময়ে জঙ্গলে আগুনের ঘটনা উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। বেশ কয়েক বছর ধরে জেলার অরণ্য এলাকায় এ ধরনের ঘটনায় যেমন বাস্তুতন্ত্র ক্ষতির মুখে পড়ছে, তেমনই সমস্যায় পড়ছেন স্থানীয়রাও। ক্ষোভ বাড়ছে তাঁদের। বনদপ্তরের নজরে বারবার বিষয়টি আনা সত্ত্বেও কিছুতেই সুরাহা মিলছে না। ফলে বিপদ বেড়েই চলেছে।
এ যেন ফি বছরের ঘটনা। শীতের শুরু আর শীত শেষের মুখে জঙ্গলের শুকনো পাতায় আগুনের হলকা – চেনা ছবি হয়ে গিয়েছে এখন। ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ি এলাকার মালাবটির জঙ্গল এর সাক্ষী। সেদিকে তাকালেই সবুজ নয়, চোখে পড়ছে ধোঁয়া, ভেসে আসছে পোড়া গন্ধ। সকলেই বুঝে যাচ্ছেন, জঙ্গলে আগুন (Forest fire) লেগেছে। নষ্ট হচ্ছে গাছপালা। বিপন্ন জঙ্গলে ছোট ছোট পোকামাকড়, সাপ, জঙ্গলে থাকা অন্যান্য বন্যপ্রাণ। বাস্তুচ্যুত হচ্ছে এরা। বছর কয়েক ধরে এই সময়ে অগ্নিকাণ্ডের আঁচ পেয়ে তারা আগে থেকেই জঙ্গল ছেড়ে চলে আসছে লোকালয়ের দিকে। ব্যাপক প্রভাব পড়ছে জঙ্গলের বাস্তুতন্ত্রে। এভাবেই ধ্বংস হচ্ছে শাল-মহুলের জঙ্গল।
[আরও পড়ুন: নির্বাচনের আগে ফের রাজ্য থেকে উদ্ধার আধপোড়া নোট, তুঙ্গে জল্পনা]
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সম্প্রতি কয়েক বছর ধরে জঙ্গলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার কথা বারবার বনদপ্তরের নজরে আনা হয়েছে। কিন্তু লাভ হয়নি কিছুই। দুষ্ট চক্রদের কাউকে ধরতে তেমন উদ্যোগী হয়নি প্রশাসন। অরণ্য প্রকৃতিকে এভাবে বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়ার নেপথ্যে কে বা কারা, তার খানিকটা আন্দাজ এখন করতেই পারেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পাতা ঝরার মরশুমে শুকনো পাতা, কাঠে জ্বালানি সংগ্রহের জন্য একদল মানুষজন ফি বছর এই সময়ে জঙ্গলে আগুন লাগিয়ে দেন বলে অভিযোগ। অরণ্যসুন্দরী ঝাড়গ্রামের প্রকৃতি সযত্নে আগলে রাখার বদলে চলে এমন বেআইনি কাজ।আক্ষেপ একটাই, প্রশাসন দেখেও যেন দেখে না কিছুই।
ছবি ও ভিডিও: প্রতিম মৈত্র।