সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: নরেন্দ্র মোদির এবারের সফর তাঁর চতুর্থ মার্কিন সফর হলেও রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে ওবামা ও মোদির এটি সপ্তম সাক্ষাৎ৷ যা স্মরণীয় হয়ে রইল নিউক্লিয়ার সাপ্লাই গ্রুপ বা এনএসজি এবং মিসাইল টেকনোলজি কন্ট্রোল রেজিম (এমটিসিআর)-এর সদস্য পদের জন্য ভারতকে সমর্থনের প্রশ্নে মার্কিন প্রেসিডেন্টের তরফে সবুজ সঙ্কেত মেলায়৷ এমটিসিআর-এর সদস্যপদ পাওয়ার ফলে উচ্চ প্রযুক্তির ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন কেনা বা তৈরির ক্ষেত্রে আর কোনও বাধা থাকল না ভারতের৷ পাশাপাশি, রাশিয়ার সঙ্গে যৌথ প্রযুক্তিতে ভারত ‘ব্রহ্মস’ নামের যে সুপারসনিক ত্রুজ মিসাইল বানিয়েছে, তা তৃতীয় কোনও দেশকে বিক্রি করার ক্ষেত্রেও আর কোনও অসুবিধা হবে না৷ তবে এমটিসিআরের সদস্য হওয়ায় ভারত ৩০০ কিমি-র বেশি দূর পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র বানাতে পারবে না৷ এমটিসিআর-এর সদস্য সব দেশই ভারতকে সদস্য করার ব্যাপারে তাদের সম্মতি জানিয়েছে৷
হোয়াইট হাউসে বৈঠকের পর সংবাদমাধ্যমের সামনে যৌথ বিবৃতিতে ওবামা বলেন, “এনএসজি এবং এমটিসিআর-এর সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রে ভারতকে সমর্থন জানিয়েছি৷” মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানান, অসামরিক পরমাণু চুক্তির বিষয়ে অগ্রগতি নিয়েও মোদির সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে৷ তিনি জানান, ভারত-আমেরিকার মধ্যে মৈত্রীর সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর৷ মোদির নেতৃত্বেরও তারিফ করেছেন ওবামা৷ অন্যদিকে, মোদি বলেছেন, “আমার বন্ধু প্রেসিডেণ্ট ওবামা যেভাবে এমটিসিআর এবং এনএসজি-র সদস্য হওয়ার প্রসঙ্গে ভারতকে সমর্থন এবং সাহায্য করেছেন, তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ৷ বিশ্বের দু’টি বৃহত্তম গণতন্ত্র যেভাবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছে, তা দেখে আমি গর্বিত৷ এর পর আবার জি-২০ সম্মেলনে দেখা হবে আমাদের৷ জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে একযোগে কাজ করব আমরা৷ আমেরিকায় আমাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য মার্কিন কংগ্রেসকে ধন্যবাদ৷ মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ৷” চিন-পাক আপত্তি সত্ত্বেও ভারতকে এনএসজিতে অন্তর্ভুক্ত করতে সায় দিয়েছে আমেরিকা৷ সন্ত্রাস ছাড়াও দূষণহীন শক্তি-সম্পদ, জলবায়ু পরিবর্তন, আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং সাইবার নিরাপত্তা নিয়েও মোদি এবং ওবামার মধ্যে কথা হয়েছে৷ ২০১৭-র জুন মাসের মধ্যে আমেরিকার সংস্থা ওয়েস্টিংহাউসের সঙ্গে ভারতের এনপিসিআইএলের চুক্তি হবে৷ দুই তরফে আলোচনা-পর্যালোচনার ফাঁকে হোয়াইট হাউসের ক্যাবিনেট রুম-এ কেজো মধ্যাহভোজে মোদিকে আপ্যায়িত করেন মার্কিন প্রেসিডেণ্ট৷ মধ্যাহ্নভোজে ছিলেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বিডেনও৷
আর মাত্র কয়েকমাস পরেই দু’দফার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরে যাচ্ছেন বারাক ওবামা৷ দেশজুড়ে প্রাদেশিক স্তরে জোরকদমে চলছে ভোটের প্রস্তুতি৷ এই অবস্থায় মোদি-ওবামার বৈঠক কতটা কার্যকর বা ফলপ্রসূ হবে তা নিয়ে সমালোচকরা নানা প্রশ্ন তুলেছেন ইতিমধ্যেই৷ কিন্তু ওবামার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক ছাড়াও মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার আমন্ত্রণ নিশ্চিতভাবেই মোদির মুকুটে আরেকটি পালক৷ রাজীব গান্ধী, নরসিংহ রাও, অটলবিহারী বাজপেয়ী এবং মনমোহন সিংয়ের পর তিনিই পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী যিনি এই আমন্ত্রণ পেলেন৷ এর আগে ১৯৪৯ সালে জওহরলাল নেহরুকে আমন্ত্রণ জানানো হয় হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভ-এ বক্তব্য রাখার জন্য৷