সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সন্ত্রাস রপ্তানির জেরে পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনা বন্ধ রেখেছে ভারত। এহেন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত হয় সিন্ধু কমিশনের ১১৮তম বৈঠক। সিন্ধু জলচুক্তির অন্তর্গত জলবণ্টন নিয়ে দুই পক্ষেরই বিভিন্ন দাবি নিয়ে আলোচনা হয় ভারত ও পাকিস্তানের প্রতিনিধিদের মধ্যে। সেখানেই নয়াদিল্লি স্পষ্ট জানিয়ে দেয় যে চুক্তির শর্ত মেনেই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরি হয়েছে।
ভারতের বিদেশমন্ত্রক বিবৃতিতে জানিয়েছে, দু’পক্ষের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ আলোচনায় হয়েছে। বৈঠকে স্থির হয়েছে, সিন্ধু জলচুক্তির শর্ত মতে আলোচনার মাধ্যমে মতপার্থক্যগুলির সমাধান করে নেওয়া হবে। ‘পারমানেন্ট ইন্দাস কমিশন’ বা সিন্ধু জল কমিশনের আগামী বৈঠক পাকিস্তানে (Pakistan) হবে। আজকের বৈঠকে কমিশনের শেষ বার্ষিক রিপোর্টটি সই করা হয়। এদিন পাকিস্তানের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন সৈয়দ মহম্মদ মেহের আলি শাহ। ভারতের তরফে নেতৃত্ব দেন ইন্দাস ওয়াটার কমিশনার একে পাল। পাকিস্তানের তরফে জারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “বন্যা সতর্কতা থেকে শুরু করে প্রকল্পগুলির পরিদর্শন ও বার্ষিক রিপোর্ট সংক্রান্ত একাধিক বিষয়ে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।”
[আরও পড়ুন: ‘আমরাই শীর্ষে’, ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে আমেরিকাকে পিছনে ফেলার দাবি চিনের]
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন আলোচনার পরে ১৯৬০ সালে বিশ্ব ব্যাংকের মধ্যস্থতায় সিন্ধু জলচুক্তিতে সই করে ভারত ও পাকিস্তান। চুক্তি মতে শতদ্রু, বিপাশা, রবি নদীর জল ব্যবহার করার পূর্ণ অধিকার রয়েছে ভারতের। সিন্ধু, ঝিলম ও চন্দ্রভাগার অধিকাংশ জলের ভাগ পেয়েছে পাকিস্তান। তবে ওই নদীগুলিতে শর্তসাপেক্ষে বাঁধ তৈরি করতে পারে ভারত (India)। সেইমতো জম্মু-কাশ্মীরে ঝিলম নদীতে কিষেণগঙ্গা ও চন্দ্রভাগায় রাতলে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে তুলেছে ভারত। আর এতেই প্রবল আপত্তি ইসলামাবাদের। পড়শি দেশটির অভিযোগ, কিষেণগঙ্গা ও রাতলে প্রকল্পের নকশায় ত্রুটি রয়েছে। ফলে সিন্ধু জলচুক্তির শর্ত লঙ্ঘিত হয়েছে। বিষয়টি মেটাতে বিশ্ব ব্যাংকের কাছে সালিশি আদালত গড়ার আরজি জানায় পাকিস্তান। নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞকে দিয়ে প্রকল্পের নকশা পরীক্ষা করানোর আর্জি জানায় ভারত। শেষ পর্যন্ত অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে নয়াদিল্লি অনুমতি পায়।
বিশ্লেষকদের মতে, কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে বারবার আওয়াজ তুলে ব্যর্থ হয়েছে পাকিস্তান। ভারত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে কাশ্মীর অভ্যন্তরীণ বিষয়। এনিয়ে কোনও তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ মেনে নেওয়া হবে না। তাই এবার জলবণ্টন নিয়ে নয়াদিল্লিকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে বেকায়দায় ফেলতে চাইছে ইসলামাবাদ। কূটনীতিকরা মনে করেন, উচ্চ অববাহিকায় থাকা রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের উচিত নিজের অধিকার সম্পর্কে আন্তর্জাতিক স্তরে সরব হওয়া।