সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ৩ বছরের ছোট্ট মেয়েটি ভুগছিল মস্তিষ্কের টিউমারে। ক্রমশ বাড়ছিল অসুস্থতা। অস্ত্রোপচারের পরও বোঝা গিয়েছিল মৃত্যু নিশ্চিত। এই পরিস্থিতিতে ধর্মগুরুর পরামর্শে তার বাবা-মা তাকে 'সান্থারা' নামের জৈন ধর্মীয় অনুশীলনে দীক্ষিত করেন। 'মৃত্যু পর্যন্ত উপবাসের' এই অনুশীলন শুরুর পরই প্রাণ হারিয়েছে ভিয়ানা জৈন নামের ওই শিশু। ঘটনা মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরের। ওই দম্পতি আইটি কর্মী।
'গোল্ডেন বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে' নাম উঠেছে ভিয়ানার। সান্থারা ব্রত গ্রহণকারী বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ হিসেবেই এই স্বীকৃতি। গত ২১ মার্চ মৃত ওই শিশুর বাবা পীযূষ জৈন সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের সঙ্গে কথা বলার সময় বলেন, ''এই বছরের জানুয়ারিতে আমার মেয়ের ব্রেন টিউমার ধরা পড়ে। তার একটি অস্ত্রোপচারও করা হয়। এর পরে স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়। কিন্তু মার্চ মাসে ফের অবস্থার অবনতি ঘটে। ও খাবার ও পানীয় গ্রহণ করতে পারছিল না।''
এই পরিস্থিতিতে ২১ মার্চ পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে মেয়েকে নিয়ে জৈন ধর্মগুরু রাজেস মুনি মহারাজের কাছে যান। পীযূষ জানাচ্ছেন, ''মহারাজ আমার মেয়ের অবস্থা দেখে আমাদের বলেন ওর মৃত্যু কাছেই রয়েছে। ওকে এবার সান্থারা অনুশীলন করতে দেওয়া হোক। জৈন ধর্মে এর অপরিসীম গুরুত্ব। সেকথা ভেবেই আমরা সম্মত হই।'' ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান শেষ করার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ছোট্ট মেয়েটি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে বলে জানাচ্ছেন পীযূষ।
কেন শেষ মুহূর্তে মৃত্যুকষ্টে ভুগতে থাকা তিন বছরের একরত্তিকে এমন অনুশীলনের মধ্যে দিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন? এই প্রশ্নের জবাবে পীষূষ বলছেন, ''আমি বলে বোঝাতে পারব না সিদ্ধান্তটা নেওয়া আমাদের পক্ষে কতটা কঠিন ছিল। আমার মেয়ে ব্রেন টিউমারে খুব কষ্ট পাচ্ছিল। ওকে এভাবে দেখাটা আমার জন্য প্রবল যন্ত্রণাময় ছিল।'' ভিয়ানার মা জানাচ্ছেন, ''আমি চাই আমার মেয়ে পরের জন্মে যেন সুখী হয়।''
প্রসঙ্গত, আধ্যাত্মিক শুদ্ধি ও বিশ্বসংসারের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হওয়ায়ই সান্থারার মূল উদ্দেশ্য। এই ধর্মীয় আচার নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। ২০১৫ সালে রাজস্থান হাই কোর্ট জানিয়ে দেয় এহেন ধর্মীয় অনুশীলন ৩০৬ ধারা (আত্মহত্যায় প্ররোচনা) এবং ৩০৯ ধারায় (আত্মহত্যার চেষ্টা) শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যদিও পরে সুপ্রিম কোর্ট এই রায়ে স্থগিতাদেশ দেয়।
