সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্রধান বিচারপতি হিসেবে শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টে শেষ হল ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের কর্মজীবন। আনুষ্ঠানিকভাবে ১০ নভেম্বর তাঁর অবসরের দিন হলেও শনি ও রবিবার সুপ্রিম কোর্ট বন্ধ থাকায় শুক্রবারই বিদায় সম্ভাষণ অনুষ্ঠান করা হয় সুপ্রিম কোর্টে। ২০২২ সালের ৯ নভেম্বর প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি। যদিও শীর্ষ আদালতের বিচারপতি হিসেবে ৮ বছরের কর্মজীবন তাঁর। কর্মজীবনে বিচারপতি চন্দ্রচূড় একাধিক ঐতিহাসিক রায় দিলেও অমীমাংসিত হয়ে রয়ে গেল বহু মামলা। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বাংলার গুরুত্বপূর্ণ ৫টি মামলা।
একনজরে দেখে নেওয়া যাক বাংলার যে ৫টি মামলার নিষ্পত্তি দেখে যাওয়ার সুযোগ পেলেন না বিচারপতি চন্দ্রচূড়।
আর জি কর ধর্ষণ-খুন
এই তালিকায় সর্বপ্রথম উল্লেখ করা যেতে পারে আর জি কর মামলা। সরকারি হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসককে খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় সাড়া পড়ে গিয়েছিল গোটা দেশে। এই ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে হস্তক্ষেপ করে প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ। ১৮ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়েরের পর ২০ আগস্ট হয় প্রথম শুনানি। গত বৃহস্পতিবার এই মামলায় সিবিআইয়ের তদন্ত রিপোর্ট দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি। এর আগে অবশ্য চিকিৎসকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা এবং হাসপাতালে সিসিটিভি বসানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। এছাড়া সিভিক নিয়োগ নিয়েও প্রশ্ন তোলে আদালত। আগামী ১০ ডিসেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি।
মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি
মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি সংক্রান্ত ইস্যুতে গত জানুয়ারিতে কলকাতা হাই কোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ও ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতি সৌমেন সেনের মধ্যে সংঘাত চরম আকার নেয়। সিঙ্গল বেঞ্চের সিবিআই তদন্তের নির্দেশ খারিজ করে ডিভিশন বেঞ্চ। পালটা সেই রায়ে ত্রুটির অভিযোগে ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ খারিজ করে সিবিআইকে তদন্ত চালানোর নির্দেশ দেয় সিঙ্গল বেঞ্চ। এই টালমাটাল পরিস্থিতিতে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে হস্তক্ষেপ করে শীর্ষ আদালত। ২৭ জানুয়ারি এই মামলাটি প্রথমবার শীর্ষ আদালতে ওঠে। শেষ বার শুনানি হয় ২৯ জানুয়ারি। আগামী ১৮ নভেম্বর এই মামলার শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে।
ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল
দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় রাজ্যে ১২ লক্ষের বেশি ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল করেছিল কলকাতা হাই কোর্ট। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে শীর্ষ আদালতে যায় রাজ্য। বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চে ১৮ জুন প্রথমবার শোনা হয় মামলাটি। যদিও হাই কোর্টের নির্দেশের উপর কোনও স্থগিতাদেশ দেয়নি সুপ্রিম কোর্ট। এই মামলায় আদালত রাজ্যের কাছে জানতে চায়, কারা ওবিসি, কীসের ভিত্তিতে দেওয়া হয় শংসাপত্র? আগামী ১৩ নভেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে।
রাজভবনে শ্লীলতাহানি
পশ্চিমবঙ্গের রাজভবনে এক অস্থায়ী মহিলা কর্মীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠে খোদ রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে। থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়। তবে এই ঘটনায় পদের ভিত্তিতে সাংবিধানিক রক্ষাকবচ পান রাজ্যপাল। মামলা গড়ায় শীর্ষ আদালতে। ১৯ জুলাই মামলার প্রথম শুনানি হয় প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককেও এই মামলায় যুক্ত হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এর পর অবশ্য মামলার তেমন কোনও অগ্রগতি হয়নি।
২৬ হাজার চাকরি বাতিল
শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে রাজ্যের ২৬ হাজার চাকরি বাতিল করে দেয় কলকাতা হাই কোর্ট। পাশাপাশি, বেতন ফেরত দিতে বলা হয়। ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির অভিযোগে গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করা হয়। এই ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেন চাকরিহারাদের কয়েকজন। পাশাপাশি পৃথক মামলা করে শিক্ষা দপ্তর, এসএসসি এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। ২৪ জুলাই মামলার প্রথম শুনানি হয়। আগামী ১৯ নভেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানি।