বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, আমেদাবাদ: যেন সাক্ষাৎ দেবদূত। যেখানেই বিপর্যয় বা বিপদ সেখানেই হাজির নির্মাণ শ্রমিক রাজু প্যাটেল। চিকিৎসক পড়ুয়াদের ছাত্রাবাস থেকে ১০০ মিটার দূরে নিজের বাড়িতে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। বিকট আওয়াজে উঠে বসেন। বিপদ ঘণ্টা বেজে ওঠে তাঁর মাথায়। বুঝতে অসুবিধা হয়নি, মানুষ বিপদে পড়েছে। এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে ছুটে যান ছাত্রাবাসের সামনে। তখন চারিদিকে শুধু চিৎকার আর হাহাকার। কাজে নেমে পড়েন রাজু।
এলাকার কয়েকজনকে জুটিয়ে নেন। এরপর শাড়ি, ধুতি ও দড়ি জোগাড় করে ঝঁাপিয়ে পড়েন ছাত্রাবাসে আটকে থাকা আহতদের উদ্ধার কাজে। রাত পর্যন্ত কাজ করে বহু মানুষকে বাঁচিয়ে কুড়িয়ে পান ৮০ গ্রাম সোনার গয়না, ৮০ হাজার টাকা-সহ মূল্যবান জিনিসপত্র। সবই জমা দেন পুলিশের কাছে। ২০০৮ সালে গুজরাতে ধারাবাহিক বিস্ফোরণের সময়ও রাজুর কেরামতি দেখেছিল আমেদাবাদবাসী।
ভর দুপুরে যখন আমেদাবাদের মেঘানিনগরের চিকিৎসক পড়ুয়াদের ছাত্রাবাসের সামনে রাজু ও তাঁর সঙ্গীরা হাজির হন, তখন দাউদাউ করে জ্বলছিল আগুন। তাঁরাই জানান, প্রথম ১৫ থেকে কুড়ি মিনিট আশেপাশে যেতে পারছিলেন না। দ্রুত চলে আসে দমকল ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। তাঁদের সঙ্গে উদ্ধার কাজে হাত লাগান। ছাত্রাবাসের তিনতলা থেকে ছ’তলা পর্যন্ত আটকে থাকা মানুষকে উদ্ধার করতে শাড়ি, ধুতি, চাদর জোগাড় করেন। একে একে আটকে থাকা মানুষকে উদ্ধার করে রাজু বাহিনী। কিন্তু সকলকে বাঁচাতে না পারায় আফশোস তাঁর। বলেন, “আগুনের লেলিহান শিখা কাছে যেতে দিচ্ছিল না। তাই চোখের সামনে অনেককেই মরতে দেখতে হল।”
এখানেই শেষ নয়। চিরুনি হাতে ধ্বংসাবশেষে বেঁচে যাওয়া জিনিস খুঁজতে থাকেন। তাতে নগদ টাকা, সোনার গয়না ছাড়াও পাসপোর্ট, একটি গীতা উদ্ধার করেন। মঙ্গলবার রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্ষ সাংভি জানান, উদ্ধার হওয়া সব জিনিস পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন রাজু। সেগুলি যাঁদের জিনিস তাঁদের ফেরতের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ২০০৮ সালেও এমনভাবেই বিপদগ্রস্তদের বাঁচাতে কার্যত আগুনে ঝঁাপ দিয়েছিলেন রাজু। দু’টি ঘটনা চিরকাল মনে থাকবে বলে জানান তিনি।
