সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: এক দেশ, এক ভোট। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির 'ড্রিম প্রোজেক্ট' নিয়ে প্রবল আপত্তি কংগ্রেসের। হাত শিবিরের শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছে, রাজ্য ও কেন্দ্রের ভোট একসঙ্গে হলে জাতীয়তাবাদের ধুয়ো তুলে রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনগুলিতেও সুবিধা পাবে বিজেপি। যদিও পালটা যুক্তিও আছে। এবং সেটা বেশ জোরালো।
কংগ্রেসেরই একটা অংশ মনে করছে, লোকসভা এবং বিধানসভা ভোট যৌথভাবে হলে জাতীয় দল হিসাবে বিজেপির পাশাপাশি লাভবান হবে হাত শিবিরও। কেন? ওই শিবিরের যুক্তি, গত কয়েক দশকে সমাজবাদী পার্টি, এনসিপি, তৃণমূল কংগ্রেস, ডিএমকে, আরজেডি, জেএমএমের মতো আঞ্চলিক দল রাজ্যে রাজ্যে কংগ্রেসের ভোটব্যাঙ্কে পুষ্ট হয়ে রাজনীতি করছে। এই দলগুলি আদর্শগতভাবে কংগ্রেসের মতোই। তবে এদের অ্যাডভান্টেজ হল, এরা নিজেদের রাজ্যের স্থানীয় ইস্যুকে সামনে রেখে ভোট ময়দানে বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে। বিজেপির উগ্র জাতীয়তাবাদের সামনে বিধানসভা নির্বাচনগুলিতে অন্তত আঞ্চলিক ইস্যু তুলে এই দলগুলি সফল। কিন্তু কংগ্রেস জাতীয় দল হওয়ার দরুণ এই আঞ্চলিক আবেগকেও কাজে লাগাতে পারছে না।
কংগ্রেস নেতারা মনে করছেন, লোকসভা এবং বিধানসভা ভোট একসঙ্গে হলে স্থানীয় ইস্যুর তুলনায় বেশি গুরুত্ব পাবে জাতীয় ইস্যু। কারণ এখনও দেশের অধিকাংশ ভোটার লোকসভা এবং বিধানসভায় আলাদা আলাদা দলকে ভোট দেওয়ার মতো সচেতন নন। ফলে আঞ্চলিক দলগুলির গুরুত্ব কমে গিয়ে ভারতীয় রাজনীতি বিজেপি এবং কংগ্রেস এই দুই মেরুকে ঘিরে আবর্তিত হতে পারে। তাতে বিজেপির মতো কংগ্রেসও লাভবান হবে। সাম্প্রতিক অতীতেও উত্তরপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, কেরলের মতো রাজ্যে দেখা গিয়েছে, বিধানসভা ভোটে সেভাবে দাগ কাটতে না পারলেও লোকসভায় মোটামুটি ভালো ফল করেছে হাত শিবির। বস্তুত সম্প্রতি একাধিক নির্বাচনে দেখা গিয়েছে হাতে যথেষ্ট ইস্যু থাকা সত্ত্বেও সাংগঠনিক দুর্বলতার দরুণ বিজেপিকে হারাতে পারেনি হাত শিবির। কংগ্রেস নেতাদের একাংশ মনে করছেন, জোরালো জাতীয় ইস্যু থাকলে বা কেন্দ্রীয় নেতারা জনমানসে প্রভাব বিস্তার করার মতো প্রচার করতে পারলে সাংগঠনিক দুর্বলতা ঢেকে ফেলা যায়। সেটা সম্ভব হবে একমাত্র লোকসভা এবং বিধানসভা ভোট একসঙ্গে হলেই।
এখন প্রশ্ন হল, এক দেশ, এক ভোটে যদি কংগ্রেস সুবিধাই পায়, তাহলে হাত শিবিরের এত বিরোধ কেন? ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, কংগ্রেসের বিরোধিতার একাধিক কারণ রয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম প্রধান কারণ হল শরিকি চাপ। ইন্ডিয়া জোটের শরিক সব আঞ্চলিক দলই নীতিগতভাবে এই প্রস্তাবের বিরোধী। তাছাড়া, লোকসভা এবং বিধানসভা ভোট একসঙ্গে হলে কংগ্রেসের যে সুবিধা পাওয়ার কথা, সেই সুবিধা নেওয়ার মতো প্রভাবশালী এবং জনপ্রিয় কেন্দ্রীয় নেতা কংগ্রেসের হাতে নেই। রাহুল গান্ধী বা প্রিয়াঙ্কা গান্ধীরা জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন বটে, তবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ধারেকাছে নেই। বরং সে তুলনায় একাধিক রাজ্যে কংগ্রেসের রাজ্য নেতারা বেশ শক্তিশালী। যেমন, কর্নাটকে ডিকে শিবকুমার, সিদ্ধারামাইয়ার মতো নেতারা রাহুল গান্ধীদের সাহায্য ছাড়াও ক্ষমতা দখল করতে পারেন।
তাছাড়া গোটা দেশকে এক সুতোয় বাধার মতো কেন্দ্রীয় কোনও ইস্যুও কংগ্রেসের হাতে নেই। বিজেপি যেমন স্রেফ হিন্দুত্বের জিগির তুলে আসমুদ্র হিমাচল এক সুতোয় বেঁধে ফেলতে পারে, সেটা করার মতো কোনও হাতিয়ার কংগ্রেসের হাতে নেই। রাহুল গান্ধী জাতিগত জনগণনা, বা সংবিধান বদলের মতো ইস্যু তুলছেন বটে, সেই ইস্যুগুলিও গোটা দেশে সমানভাবে প্রভাবশালী নয়। ফলে একসঙ্গে লোকসভা এবং বিধানসভা ভোট হলেও অদূর ভবিষ্যতে অন্তত কংগ্রেস সেটার সুবিধা নেওয়ার মতো জায়গায় নেই। বরং, আলাদা আলাদা ভোট হলেই আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে জোট করে রাজ্যে রাজ্যে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাটাকেই শ্রেয় বলে মনে করছে হাত শিবির।