বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, মাদুরাই: কয়েক বছরে মিটিং মিছিলে কালোচুলের সমাহার বেড়েছে। আন্দোলনের প্রথম সারিতেও ছাত্র যুবরা। কিন্তু ভোটবাক্সে প্রতিফলনের লক্ষণ নেই। জনসমর্থন তলানিতে। রাস্তায় নেমে আন্দোলন হলেও জনসংযোগে ব্যাপক খামতি। ঘাটতি কোথায়? অনুসন্ধানে বসে পরিসংখ্যানে তাকালেই পার্টির আসল রোগ ধরা পড়ছে। দেখেও না দেখার প্রবণতা উত্তরোত্তর বেড়ে যাওয়াতেই এই পরিস্থিতি বলে মনে করছে সিপিএমের একাংশ। কয়েকটি রাজ্যে পার্টির সদস্যা সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও বাংলায় কোনও হেরফের নেই। ফলে গ্রামে গিয়ে জনসংযোগ গড়ে তোলার কর্মী অপ্রতুল। এই রোগের নিরাময় কীভাবে সম্ভব, ভাবতেই চুল ছিড়তে হচ্ছে বাংলার কমরেডকুকূলের নেতাদের।
'১১ সালে বাংলায় ক্ষমতাচ্যুত হতেই সিপিএমের অন্দরে শুরু হয় রক্তক্ষরণ। রোগ নিরাময়ে বারবার 'চিকিৎসক' পরিবর্তন হলেও রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়নি। পার্টি কংগ্রেসে বঙ্গ সিপিএমের তরফে যে পরিসংখ্যান দেওয়া হয়েছে তাতেই তা স্পষ্ট। গত ৪ বছরের পরিসংখ্যান দেখলে চমকে উঠছেন পার্টি কংগ্রেসে হাজির লালঝান্ডা বহনকারী নেতারাই। যে পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে তাতে '২১ সালে বাংলায় পার্টির সদস্য সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে ১ লক্ষ ৬০ হাজার ৮২৭ জন। এক বছরের মধ্যে ৬ হাজার কমে দাঁড়ায় ১ লক্ষ ৫৪ হাজার ৩২২। আবার ২৩ সালে সামান্য বেড়ে হয় ১ লক্ষ ৫৭ হাজার ৪৭ জন। আর ২৪ সালে সদস্য বৃদ্ধি পায় মাত্র ১ হাজার। সেখানে তামিলনাড়ু, তেলেঙ্গানা, মহারাষ্ট্র ও কেরলে সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। সবচেয়ে বেশি সদস্য বৃদ্ধি হয়েছে তেলেঙ্গানা ও তামিলনাড়ুতে।
প্রশ্ন উঠেছে, এত সংখ্যক নতুন প্রজন্মের ছাত্র-যুবদের মিটিং মিছিলে দেখা গেলেও সদস্য সংখ্যা প্রায় একই জায়গায় আটকে কেন? তাহলে নিঃশব্দে রক্তক্ষরণ চলছে? পার্টির এক প্রবীণ নেতার মতে, একের পর এক ভরাডুবি অব্যাহত থাকায় অনেকেই সদস্য পুর্ননবীকরণ করছেন না। পার্টির 'পারফরম্যান্সে' হতাশ। গত কয়েক বছরে ধরে পুরনো সদস্যদের মধ্যে যে হতাশা দেখা দিয়েছিল তা কাটিয়ে উঠতে ব্যর্থ বর্তমান প্রজন্মের নেতৃত্ব। তাই নতুন মুখের ভিড় বাড়লেও সদস্য সংখ্যায় কোনও হেরফের হচ্ছে না। যতদিন না ভোটবাক্সে সাফল্য আসবে ততদিন এই পরিস্থিতির পরিবর্তন সম্ভব নয় বলে মনে করছে পার্টির একাংশ।
অন্যদিকে, শুক্রবারও রাজনৈতিক রণকৌশলের লাইনের উপর আলোচনায় বিজেপির তৃণমূলকে সমান শত্রু চিহ্নিত করার পক্ষে জোর সওয়াল করেন বাংলার দুই প্রতিনিধি পলাশ দাস ও মোনালিসা ঘোষ। বাংলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা, ধর্মীয় মেরুকরণ ও তৃণমূল বিজেপির আঁতাতের অভিযোগ করেন এই দুই সদস্য। আলোচনা শেষে প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির লাইনকেই মান্যতা দেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত হয়েছে, সর্বভারতীয় স্তরে বিজেপি ও আরএসএস এবং রাজ্যে বিজেপির পাশাপাশি তৃণমূলকেও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসাবে দেখবে পার্টি। এদিন রাতে আলোচনার জন্য সাংগাঠনিক খসড়া প্রতিবেদন পেশ করেন ভি ভি রাঘবালু। এই আলোচনায় সদস্য সংখ্যা নিয়ে বাংলার পরিস্থিতি নিয়ে কি যুক্তি সাজানো হয় সেদিকে নজর পার্টি কংগ্রেসে হাজির প্রতিনিধিদের।