বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, নয়াদিল্লি: প্রবল শৈত্যপ্রবাহে জবুথুবু অবস্থা গোটা উত্তর-পশ্চিম ভারতের। প্রভাব পড়েছে কংগ্রেসের অন্দরেও! দলের অন্দরে শীতল হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। দলের হাইকমান্ডের মেরুদন্ড দিয়ে শীতল হাওয়া বইয়ে দিচ্ছে কয়েকটি চরিত্র। ফের সংগঠিত হচ্ছে রাহুল গান্ধী বিরোধী শিবির? এই শিবিরে দিগ্বিজয় সিং, সাংসদ শশী থারুর বা মধ্যপ্রদেশের 'ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি' কমল নাথ রয়েছেন। এঁদের আগে পিছনে বেশ কয়েকজন শীর্ষনেতার প্রচ্ছন্ন সমর্থন রয়েছে বলে মনে করছে দলের একাংশ। দলের কোন কোন নেতা এই অংশের সঙ্গে রয়েছে, তা নিয়ে চলছে কাটাকুটি খেলা।
শুরুটা করেন কেরলের সাংসদ শশী থারুর। তাঁর ধারাবাহিক কর্মকাণ্ড ও বক্তব্য বারবার দল ও হাইকমান্ডকে অস্বস্তিতে ফেলেছে। সাম্প্রতিককালে তাতে আরও একটি নাম যুক্ত হয়েছে। তিনি রাজ্যসভার সাংসদ দিগ্বিজয় সিং। শনিবার দিগ্বিজয় তাঁর এক্স হ্যান্ডলে আরএসএসের সাংগঠনিক শক্তির প্রশংসা করেছিলেন লালকৃষ্ণ আডবানীর পায়ের সামনে নরেন্দ্র মোদি বসে আছেন এমন ছবি তুলে ধরে৷ দিন সাতেক আগে দিগ্বিজয় আর একটি পোস্ট করেছিলেন কংগ্রেসের পরিকাঠামো এবং রাহুল গান্ধীকে নিশানা করে৷ সেখানে তাঁর দাবি ছিল, দলের সংগঠনে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ প্রয়োজন৷ অথচ দলের শীর্ষ নেতৃত্ব তা বুঝতে পারছেন না৷ মধ্যপ্রদেশের তিন বারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, বর্তমানে কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ দিগ্বিজয়ের এই অবস্থানকে রবিবার সমর্থন করেছেন দলে বিদ্রোহী হিসেবে চিহ্নিত শশী থারুর৷ এ দিন দিল্লিতে কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার ফাঁকে থারুর বলেন, ‘আমিও চাই দলের সংগঠন আরও সুদৃঢ় হোক৷’ গোটা ঘটনায় কংগ্রেসের অন্দরে নতুন করে একটি মেরুকরণের সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
থারুর ও দিগ্বিজয়কে এর আগে কোনও ইস্যুতে প্রকাশ্যে একে অপরের প্রশংসা করতে দেখা যায়নি৷ তা হলে হঠাত্ দু’জন কেন এই ভাবে বেসুরো হচ্ছেন? দুই নেতারই আসল লক্ষ্য যে রাহুল গান্ধী, তা বুঝতে বাকি নেই কারও৷ এর পরেই উঠছে প্রশ্ন, শুধু কি দিগ্বিজয় ও থারুরই এই বিরুদ্ধ স্রোতে সাঁতার কাটছেন, না কি তাঁদের সঙ্গে আছেন আরও অনেকে? তালিকা করতে বসে কাটাকুটি খেলছে দলর হাইকমান্ড। সূত্রের খবর, এই বিক্ষুব্ধ অংশের পিছনে রয়েছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কমলনাথ। বাংলার প্রাক্তন সাংসদ অধীর চৌধুরিকেও সন্দেহের তালিকায় রাখছে হাই কম্যান্ড। কারণ, দলের শীর্ষ নেতাদের অনুমোদন না নিয়েই বিভিন্ন ইস্যুতে বারবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি লেখেন। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখাও করেন। বিষয়টি হাই কমান্ড ভালভাবে নিচ্ছে না বলে সূত্রের খবর।
এর আগে কংগ্রেসের অন্দরে গুলাম নবি আজাদের নেতৃত্বে যে বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী তৈরি হয়েছিল, তার অভিমুখও ছিল রাহুলের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে৷ বহু কষ্টে সেই বিক্ষোভে রাশ টানতে পেরেছে হাইকম্যান্ড৷ এই পরিস্থিতিতে থারুর ও দিগ্বিজয় কোনও নতুন রাজনৈতিক সমীকরণের জন্ম দেন কি না, বছর শেষে সে দিকেই চোখ থাকছে রাজনৈতিক মহলের।
