সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিধানসভায় বিজেপির প্রার্থী হতে চেয়ে আগ্রহীর সংখ্যাটা নেহাত কম নয়। রাজ্য দপ্তরে জমা পড়ছে বায়োডাটাও। কিন্তু তাতে বিশেষ লাভ হবে কিনা সংশয় রয়েছে দলের অন্দরেই। শোনা যাচ্ছে, আবেদনের ভিত্তিতে নয়, বঙ্গে বিজেপির প্রার্থী নির্ধারণ হবে সমীক্ষার ভিত্তিতে। যে সমীক্ষার রিপোর্ট আবার জমা পড়বে খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের দপ্তরে। আসলে এবার দলের প্রার্থী নির্বাচনের ভারও নিজেদের হাতে নিতে চাইছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
বঙ্গের ভোট ঘোষণা হতে আর মেরেকেটে আড়াই মাস। স্বাভাবিকভাবেই দুই প্রধান রাজনৈতিক শক্তির প্রার্থী হওয়ার জন্য আগ্রহ রয়েছে। তৃণমূলে যেমন বহু টিকিট প্রত্যাশী, বিজেপিতেও তেমনি টিকিটের আগ্রহ কম নয়। সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই ২৯৪টি আসনে প্রার্থী হতে চেয়ে হাজারের বেশি আবেদন দলের কাছে জমা পড়েছে। নিয়মিত বঙ্গ বিজেপির নির্বাচনী পর্যবেক্ষক ভূপেন্দ্র যাদব এবং তাঁর সহকারী বিপ্লব দেব রাজ্য-নেতৃত্বের সঙ্গে প্রার্থী বাছাই সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করছেন। কিন্তু শোনা যাচ্ছে, ২০২১ সালের মতো এবার আর প্রার্থী বাছাইয়ের ভার রাজ্য নেতাদের হাতে থাকবে না। সবটাই নিয়ন্ত্রিত হবে দিল্লি থেকে। আরও বলা ভালো, অমিত শাহর দপ্তর থেকে। ইতিমধ্যেই স্বরাষ্ট্র দপ্তরের মাধ্যমে বিভিন্ন এজেন্সি রাজ্যের ২৯৪ আসনে গোপনে সমীক্ষা করেছে। সেই সমীক্ষার রিপোর্ট জমাও পড়েছে। সেই সমীক্ষার ভিত্তিতে নিয়মিত খোঁজখবর নেওয়া চলছে। বিধানসভা-ভিত্তিক অন্তত তিন জন প্রার্থীর নাম সর্বোচ্চ নেতৃত্বের কাছে পাঠাচ্ছে সংশ্লিষ্ট সমীক্ষক সংস্থা। নজর রাখা হচ্ছে দলের জেলা ও রাজ্য স্তরের রিপোর্টেও।
২০২১ থেকে একটা বিষয়ে শিক্ষা নিয়েছে গেরুয়া শিবির। এবার আর প্রার্থী তালিকায় 'দুর্নীতিগ্রস্ত' দলবদলু, বা চিত্র তারকাদের আধিক্য থাকবে না তালিকায়। তুলনায় গুরুত্ব দেওয়া হবে দীর্ঘদিন দলের সঙ্গে যুক্ত, স্বচ্ছ্ব মুখে। এবার বেশ কিছু নতুন 'পরিচিত' মুখও টিকিট পেতে পারেন। আবার বেশ কিছু বর্তমান বিধায়কের নাম কাঁটা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এবার টিকিট পেতে পারেন, অর্জুন সিং। নিজের গড় ভাটপাড়া থেকেই লড়তে পারেন অর্জুন, সেক্ষেত্রে ছেলেকে শিল্পাঞ্চলের অন্য কোনও আসনে পাঠানো হতে পারে। বারাকপুরে প্রার্থী হতে পারেন কৌস্তভ বাগচি। উত্তর কলকাতার কোনও আসনে তাপস রায়, বরানগরে সজল ঘোষের নাম ভাবা হচ্ছে। প্রার্থী হতে ইচ্ছুক দিলীপ ঘোষ, লকেট চট্টোপাধ্যায়, অমিতাভ চক্রবর্তীরা। তবে দিলীপ যে কেন্দ্রে লড়তে চাইছেন, সেই খড়গপুরে হিরণকে সরানো নাও হতে পারে। লকেট নিজের পুরনো লোকসভা কেন্দ্রের বাইরে কোনও কেন্দ্রে দাঁড়াতে পারেন। আবার অমিতাভ চক্রবর্তী উত্তরবঙ্গের কোনও নিরাপদ আসন চাইছেন। শোনা যাচ্ছে, অন্তত ১০-১৫ জন বিধায়কের টিকিট কাটা যেতে পারে। কারও কারও আসন বদলের সম্ভাবনা আছে।
শেষ পর্যন্ত যে-ই প্রার্থী হতে চান, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অনুগ্রহ ছাড়া সেটা সম্ভব হবে না। কারণ এবার সবটাই ঠিক হবে দিল্লি থেকে। প্রশ্ন হচ্ছে, বঙ্গ বিজেপিতে ইতিমধ্যেই 'দিল্লির দাদাগিরি' নিয়ে অসন্তোষ একাধিকবার প্রকাশ্যে এসেছে। যে হিন্দিভাষী নেতারা বাংলার ভাষা, সংস্কৃতির সঙ্গে একাত্ম নন, তাঁরাই যদি টিকিট নির্ধারণ করেন তাহলে দলীয় নেতাদের মধ্যে অসন্তোষ আরও বাড়তে পারে।
