সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: শুক্রবার বিহারের সংশোধিত ভোটার তালিকার খসড়া প্রকাশ করল নির্বাচন কমিশন। পাশাপাশি, সেটি তুলে দেওয়া হয়েছে সকল রাজনৈতিক দলগুলির হাতে। এদিন দুপুর তিনটে নাগাদ কমিশন তাদের ওয়েবসাইটে খসড়া তালিকাটি প্রকাশ করেছে। তবে তার আগেই বিরোধীদের হট্টগোলে উত্তাল হয় সংসদ। ইতিমধ্যেই প্রকাশিত এই খসড়া তালিকা নিয়ে লোকসভায় আলোচনার জন্য স্পিকারকে চিঠি দিয়েছে বিরোধীরা।
কমিশন জানিয়েছে, এদিন সকাল ১১টা নাগাদ ৩৮ জন জেলাশাসকদের মাধ্যমে বিহারের সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলির হাতে খসড়া তালিকাটি তুলে দেওয়া হয়েছে। তালিকায় রাজ্যের ২৪৩টি বিধানসভা কেন্দ্রের মোট ৯০ হাজার ৮১৭টি বুথের পরিসংখ্যান দেওয়া হয়েছে। সংশোধিত খসড়া তালিকা এবং গোটা প্রক্রিয়া নিয়ে সংসদে বিশেষ আলোচনার দাবি জানিয়েছে বিরোধীরা। ইতিমধ্যেই তারা চিঠি দিয়েছে লোকসভার স্পিকারকে। সেখানে বলা হয়েছে, “বিধানসভা ভোটের আগে বিহারে ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।” গোটা বিষয়টিকে নজিরবিহীন বলেও আখ্যা দিয়েছে তারা। বিরোধীদের এই চিঠিতে সই করেছে কংগ্রেস, তৃণমূল, আরএসপি, সমাজবাদী পার্টি, এনসিপি (শরদ পাওয়ার), ডিএমকে, শিবসেনা (উদ্ধব গোষ্ঠী), আরজেডি, এবং অন্যান্য আরও কয়েকটি দল।
বিহারে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ করছে নির্বাচন কমিশন। যাকে বলা হচ্ছে ‘স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন’। অবৈধ অনুপ্রবেশকারী- সহ অযোগ্য ভোটারদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার লক্ষ্যেই এই পদক্ষেপ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে কমিশন। তারা বলেছে, যাতে শুধুমাত্র যোগ্য ভারতীয় নাগরিকরাই ভোটদানের অধিকার পান সেটা নিশ্চিত করতেই এই সংশোধনী। আর এই খসড়া তালিকা সেই প্রক্রিয়ারই অংশ। বিহারের পরে এক এক করে অন্যান্য রাজ্যগুলিতে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ হবে। এই বিশেষ নিবিড় সংশোধন নিয়ে আগেই প্রবল আপত্তি জানিয়েছেন বিরোধীরা। তাঁদের দাবি, এর ফলে বহু বৈধ ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়বেন। বস্তুত কমিশনের এই ভোটার তালিকা সংশোধনীকে ঘুরপথে এনআরসি করার চেষ্টা হিসাবেও দেগে দিয়েছে বিরোধী শিবির।
এই পরিস্থিতিতে সম্প্রতি একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে কমিশন। সেখানে জানানো হয়েছে, বর্তমান ভোটার তালিকা খসড়া মাত্র। কোনও বৈধ ভোটারের নাম বাদ গেলে তাঁরা এই বিষয়ে আবেদন করার জন্য এক মাস অবধি সময় পাবেন। আগামী ১ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ওই আবেদন করা যাবে। এই সময়ের মধ্যে যথাযথ প্রমাণ দিয়ে তাঁরা নিজেদের নাম পুনরায় তালিকাভুক্ত করার সুযোগ পাবেন। কমিশনের প্রশ্ন, এর পরেও রাজনৈতিক দলগুলি কেন শোরগোল করছে?
কমিশনের অভিযোগ, এমন একটা ধারণা তৈরি করা হচ্ছে, যে খসড়া তালিকাই চূড়ান্ত তালিকা। যদিও কমিশনের নির্দেশিকা অনুযায়ী তা নয়। কমিশনের আরও প্রশ্ন, রাজনৈতিক দলগুলি কেন বুথ স্তরের এজেন্টদের বলছে না যে ১ অগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নিজেদের দাবি এবং আপত্তির কথা জানাতে? রাজনৈতিক দলগুলির এই বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া উচিত বলেই মনে করে নির্বাচন কমিশন।
