সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: টানা ৪০ দিন। বিশ্বের সর্বকালের সর্ববৃহৎ লকডাউনের পথে এগোচ্ছে ভারত। আর এর পরিণতি যে কতটা ভয়াবহ হতে পারে, তার জ্বলন্ত প্রমাণ দিল্লির নিগমবোধ ঘাটের কাছের একটি শ্মশানের এই ছবি। যাতে দেখা যাচ্ছে অনাহারে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকরা শেষকৃত্য সারতে আসা মৃতের পরিজনদের উচ্ছিষ্ট পচা কলা বেছে বেছে নিয়ে যাচ্ছেন, খাবেন বলে। খিদের জ্বালায় তাঁরা এতটা মরিয়া যে, শশ্মানে পড়ে থাকা পচা ফল খেতেও আপত্তি নেই তাঁদের।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২১ দিনের লকডাউন ঘোষণা করতেই দুর্বিষহ হয়ে ওঠে পরিযায়ী শ্রমিকদের জীবন। কাজ খুইয়ে, অস্থায়ী বাসস্থান খুইয়ে দিশেহারা হয়ে উঠেছেন তাঁরা। ওদের কাছে মাথা গোঁজার জন্য বাড়ি নেই, রোজগারের জন্য কাজ নেই, খাবার জন্য অন্ন নেই। তারপর আরও ১৯ দিনের জন্য বেড়েছে লকডাউনের মেয়াদ। আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে জীবন। এখন বেঁচে থাকার ভরসা বলতে সরকারি সাহায্য (যা কিনা কখনও এসে পৌঁছায়, আবার কখনও এসে পৌঁছায় না) আর মনের জোর। কিন্তু, মনের জোর দিয়ে তো আর দিনের পর দিন অনাহারে বেঁচে থাকা যায় না। ‘পাপী পেট’ চায় খাবার। হোক না সে শ্মশানে পড়ে থাকা পচা ফল। হোক না শেষকৃত্যে ব্যবহার হওয়া উচ্ছিষ্ট। কিছুক্ষণের জন্য হলেও ওই খেয়ে পেটের জ্বালা তো জুড়োবে।
গত কয়েকদিনে লকডাউনের বহু নির্মম ছবি চোখে পড়েছে। কিন্তু এ জন্য অন্য মাত্রার। বাস্তব ছবিটিকে যেন আরও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। রুক্ষ মাটিতে পড়ে আছে অসংখ্য পাকা কলা। রোদের তেজে কোনও কোনওটা পুরো পচে গিয়েছে। কোনওটা হয়তো ভালও আছে। আর এই কলার স্তূপের পাশে ব্যাগ হাতে জড়ো হয়েছেন কিছু ক্ষুধার্ত শ্রমিক। পচা কলার মধ্যে বেছে বেছে খাওয়ার মতোগুলি সযত্নে ব্যাগে ভরে নিচ্ছেন তাঁরা। ‘এমনিতে তো কলা তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু বেছে বেছে ভালগুলো নিতে পারলে এখন চলে যাবে’, বলছিলেন একজন। আরেকজন বলছিলেন,’যেভাবেই হোক পেট তো ভরাতেই হবে। আর কলাতে পোকা তো আর পড়ে না।’ ক্ষুধার্ত শ্রমিকেদের নিজেকে দেওয়া এই সান্ত্বনাই হয়তো লকডাউনের সময় ‘দরিদ্র’ ভারতের বেঁচে থাকার একমাত্র সম্বল।
The post হায় ঈশ্বর! পেটের জ্বালা মেটাতে শ্মশানের ‘পচা’ কলাই ভরসা পরিযায়ী শ্রমিকদের appeared first on Sangbad Pratidin.