সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: দেশের ৩ কোটি ৫৯ লাখেরও বেশি বাড়িতে এখনও পৌঁছনো যায়নি পানীয় জলের কল।
২০১৯ সালে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে ঘটা করে হর ঘর জল মিশন ঘোষণা করেছিলেন নরেন্দ্র মোদি। কথা ছিল, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের প্রতিটি বাড়িতে পৌঁছে যাবে পানীয় জলের কল। অথচ এখনও প্রায় ১৮.৫৫ শতাংশ অর্থাৎ দেশের ৩ কোটি ৫৯ লাখ ১৩ হাজার ৮৬২টি বাড়িতে পৌঁছনো যায়নি পানীয় জলের কল। সবথেকে বাজে অবস্থা কেরল (৪৫.২০%), ঝাড়খণ্ড (৪৪.৯০%), পশ্চিমবঙ্গ (৪৩.৫১%) ও রাজস্থান (৪২.২৫%)-এর কয়েক লাখ বাড়িতে এখনও পৌঁছতে পারেনি প্রধানমন্ত্রীর সাধের প্রকল্প।
গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর তৃণমূল কংগ্রেসের লোকসভা দলনেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লিখিত প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক জানিয়েছিল, সেই সময় পর্যন্ত দেশের চার কোটি বাড়িতে ছিল না পানীয় জলের কল। অর্থাৎ গত এক বছরে দেশের ৪০ লাখ বাড়িতে পানীয় জলের কল পৌঁছতে পেরেছে শিবরাজ সিং চৌহানের মন্ত্রক। তালিকার দিকে চোখ বোলালেই স্পষ্ট বঞ্চিত রাজ্যগুলির তালিকায় শেষ তিনটি রাজ্যই অবিজেপি শাসিত। এই প্রকল্পের বাস্তবায়নের 'ডেডলাইন' বারবার ব্যর্থ হওয়ার পিছনে অনেক ক্ষেত্রেই বিজেপি দায়ী করে অবিজেপি সরকারগুলির অসহযোগিতাকে। অথচ এক সময় যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বর্তমান গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী, সেই মধ্যপ্রদেশও রয়েছে 'পিছিয়ে থাকা' রাজ্যের তালিকায়। শেষের দিক থেকে পাঁচ নম্বরে। ২০২০ সাল থেকে বিজেপি শাসনে থাকা মধ্যপ্রদেশের ২৭.০৭% বাড়িতে এখনও নেই পানীয় জলের কল। অর্থাৎ এর মাধ্যমেই প্রমাণ হয়ে যায়, রাজ্যের অসহযোগিতার তত্ত্ব কতখানি ঠুনকো।
এখনও পর্যন্ত যে রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির সব বাড়িতে পানীয় জলের কল পৌঁছনোর কাজ শেষ হয়েছে, সেই তালিকায় নজর বোলালে আবার দেখা যাবে এর মধ্যে বেশিরভাগ রাজ্যই তথাকথিত 'ছোট'। আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, দাদরা ও নগর হাভেলি এবং দমন ও দিউ, পুদুচেরি, মিজোরাম, অরুণাচলপ্রদেশ ও গোয়া। ১০ লাখের বেশি বাড়ি থাকা এমন যে ক'টি রাজ্যের সব ঘরে জল পৌঁছনো গিয়েছে, তার মধ্যে আছে শুধু হিমাচলপ্রদেশ, হরিয়ানা, পাঞ্জাব, তেলেঙ্গানা ও গুজরাত।
কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়নমন্ত্রক সূত্রে খবর, বাংলার ১ কোটি ৭৫ লাখ ৫২ হাজার ১৭৫টি বাড়ির মধ্যে ৯৯ লাখ ১৫ হাজার ৭৩৬টি বাড়িতে পৌঁছেছে পানীয় জলের কল। অর্থাৎ, ৭৬ লাখ ৩৬ হাজার ৪৩৯টি বাড়িতে এখনও নেই প্রধানমন্ত্রীর সাধের 'হর ঘর জল'-এর লাইন। তালিকার শেষ দুই রাজ্য কেরল ও ঝাড়খণ্ডের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা যথাক্রমে ৩৮ লাখ ৭৮ হাজার ৫৯৯ ও ৩৪ লাখ ৪৫ হাজার ৩৬২। তার মানে এ কথা কি স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে না যে, কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধা শুধু ডবল ইঞ্জিন সরকারের রাজ্যের জন্যই?
