সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: অস্থির বাংলাদেশে ওসমান হাদির মৃত্যুর পরে মাত্রা ছাড়িয়েছে নৃশংসতা। ময়মনসিংহে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে হিন্দু যুবক দীপু দাসকে। আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দুই সংবাদমাধ্যমের অফিসে। এই অবস্থায় দীপু দাসকে পিটিয়ে খুনের ঘটনায় ভারতের রাজনীতিবিদদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের প্রতি আচরণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কংগ্রেস নেত্রী ও সাংসদ প্রিয়াঙ্কা গান্ধী এবং অন্ধ্রপ্রদেশের উপ-মুখ্যমন্ত্রী পবন কল্যাণ। মোদি সরকারের উপরে চাপ বাড়িয়ে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর দাবি বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দায়িত্ব নিতে হবে কেন্দ্রকে।
শুক্রবার রাতে এক্স হ্যান্ডেলের এক পোস্টে কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বলেন, "বাংলাদেশে একদল জনতার হাতে হিন্দু যুবক দীপু চন্দ্র দাসের নৃশংস হত্যার খবর অত্যন্ত বিরক্তিকর। যেকোনও সভ্য সমাজে ধর্ম, বর্ণ বা পরিচয়ের ভিত্তিতে বৈষম্য, হিংসা এবং হত্যা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ।" প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত বাংলাদেশে হিন্দু, খ্রিস্টান এবং বৌদ্ধ সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান হিংসার বিষয়টি লক্ষ্য করা। পাশাপাশি, এদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে ঢাকাকে চাপ দিতে হবে বলেও দাবি করেন তিনি।
অন্যদিকে, অন্ধ্রপ্রদেশের উপ-মুখ্যমন্ত্রী পবন কল্যাণ এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, "ইতিহাস আত্মত্যাগকে স্মরণ করে। কিন্তু, যে মাটি একসময় ভারতীয় রক্তে স্বাধীন হয়েছিল, তা আজ নিরীহ সংখ্যালঘুদের রক্তে রাঙা হচ্ছে। ১৯৭১ সালে, আমাদের ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী নিপীড়িতদের পক্ষে দাঁড়িয়েছিল। আমাদের সাহসী সৈন্যরা কেবল যুদ্ধ করেনি; তারা বর্তমান বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের পরিচয় এবং মর্যাদার জন্য লড়াই করেছে। বাংলাদেশের জন্ম নিশ্চিত করতে প্রায় ৩ হাজার ৯০০ ভারতীয় সৈন্য তাদের জীবন উৎসর্গ করেন এবং ১০ হাজারেরও বেশি সৈন্য আহত হন। আমরা আমাদের জীবন দিয়েছি যাতে অন্যরা শান্তিতে বসবাস করতে পারে।" কল্যাণ আরও বলেন, আজকের সময়ে, 'শান্তি' কেবল একটি শব্দ, আর নিপীড়নই বাস্তব। বাংলাদেশে ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে এ বছরের জুলাইয়ের মধ্যে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ২ হাজার ৪০০টিরও বেশি হিংসার ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়েছে।
তিনি আর বলেন, 'আক্রমণের ধরণ স্পষ্ট এবং নিষ্ঠুর। গত বছর, আমরা ইসকনের সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের অন্যায় কারাদণ্ড এবং কমিউনিস্ট পার্টির নেতা প্রদীপ ভৌমিকের নৃশংস হত্যাকাণ্ড দেখেছি। এবার ময়মনসিংহে দীপু চন্দ্র দাসের ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড। এই যুবককে কেবল হত্যা করা হয়নি; তাকে এমন বর্বর অত্যাচার করা হয়েছে যা একবিংশ শতাব্দীকে লজ্জা দেয়।' উপ-মুখ্যমন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কাছে দেশে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানান।
বৃহস্পতিবার রাতে ময়মনসিংহে দীপু দাস নামে এক হিন্দু যুবককে পিটিয়ে খুন করেছে কট্টরপন্থীরা। জনসমক্ষে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁর দেহ। নারকীয় এই ঘটনায় কেঁপে উঠেছে গোটা বিশ্ব। দীপু হত্যাকাণ্ডে এখনও পর্যন্ত সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অন্যদিকে, নৃশংস এই ঘটনার পর ক্ষোভে ফেটে পড়েছে নিহতের পরিবার। "ছেলেকে কেন পুড়িয়ে মারা হল!", আর্তনাদ দীপুর বাবা রবি চন্দ্র দাসের।
