অর্ণব আইচ: দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর মডিউলকে ভিত্তি করে সারা দেশজুড়ে অন্তত দেড়শো যুবক ও তরুণের মগজধোলাই করে ‘সদস্য নিয়োগ’ আল কায়দার (al-Qaeda)। ভারতীয় আল কায়দা বা ‘আকিস’-এর শীর্ষনেতা আবু তালহার সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে, এরকম অন্তত দেড়শো জনের সন্ধান পেয়েছেন কলকাতা পুলিশের (KP) গোয়েন্দারা।
যদিও গোয়েন্দাদের মতে, এই সংখ্যাটি কয়েকশো হতে পারে। গোয়েন্দারা প্রায় দশটি অ্যাপ চিহ্নিত করেছেন, যেগুলির মাধ্যমে যোগাযোগ করে আল কায়দা তথা আকিসের জঙ্গিরা। এই রাজ্য-সহ সারা দেশের বিভিন্ন শহরে আল কায়দার নেটওয়ার্ক ও স্লিপার সেল তৈরির ব্যাপারে অনেকটাই এগিয়েছিল জঙ্গি নেতা একরামুল হক ওরফে আবু তালহা। সম্প্রতি কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্সের দেওয়া খবরের ভিত্তিতেই ঢাকা থেকে এই আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষনেতা আবু তালহাকে গ্রেপ্তার করেছেন বাংলাদেশের গোয়েন্দারা।
সূত্রের খবর অনুযায়ী, আবু তালহার জেরা সম্পর্কিত রিপোর্ট নিতে ঢাকায় পৌঁছেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের একটি টিম। বিদেশ মন্ত্রকের সাহায্য নিয়ে আবু তালহাকে কলকাতায় নিয়ে আসার চেষ্টাও করছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। কারণ, এই দেশেই তার বিরুদ্ধে রয়েছে দশটি অভিযোগ। মধ্যপ্রদেশের ভোপাল ও গুজরাটের আহমেদাবাদ থেকে ধৃত প্রায় এক ডজন আল কায়দা জঙ্গির মুখেও শোনা গিয়েছে আবু তালহার নাম।
[আরও পড়ুন: পাঁচশো-হাজার ‘ঘুষে’ই মেট্রোর লাখো টাকার লোহা-তামা চুরি! গ্রেপ্তার ৩ নিরাপত্তারক্ষী]
তদন্তে গোয়েন্দাদের কাছে খবর, জয়নগর, মথুরাপুর, বাসন্তী নিয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় মডিউল তৈরি করে ভারতীয় আল কায়দা ‘আকিস’-এর নেতা আবু তালহা। যদিও বেশিরভাগ সময় বিহার, অসম, উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাটে ঘুরে বেড়াত সে। ভারতীয় আল কায়দার ‘দাওয়া’ শাখার প্রধান ছিল আবু। তার মূল কাজ ছিল সদস্য নিয়োগ ও স্লিপার সেল তৈরি। এই কাজের জন্য বাংলাদেশ থেকে চোরাপথে আল কায়দার সদস্যদের নিয়ে এসে প্রথমে জয়নগর, মথুরাপুরের স্লিপার সেলের সদস্যদের বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করত। এভাবেই জয়নগর মডিউল তৈরি করে সে। এর পর তাদের ট্রেনের টিকিট কেটে দিয়ে দেশের বিভিন্ন শহরে পাঠানোর ব্যবস্থা করত তালহা।
বেশ কয়েকটি অ্যাপের মাধ্যমে আকিস নেতা ওয়াসিম ওমর, বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের নেতা মওলানা ওসমান গনি ও শেখ তামিম আল আদনানির সঙ্গে যোগাযোগ করে নেটওয়ার্ক তৈরির ব্যাপারে নির্দেশ নিত। সে বিভিন্ন শহর ও রাজ্যের গ্রামাঞ্চল ঘুরে ও লোক মারফৎ খবর নিত, ধর্মীয় রীতি বেশ করে মানছে কোন যুবক ও তরুণরা। তাদের মোবাইল নম্বর জোগাড় করে প্রথমে হোয়াটসঅ্যাপ বা টেলিগ্রামের মতো গ্রুপে যোগ করে প্রত্যেকদিন তাদের বিভিন্ন ধর্মীয় মেসেজ ও ছবি, ভিডিও পাঠানো হয়।
যারা এতে প্রতিনিয়ত উত্তর দেয়, তাদেরই টার্গেট করে জঙ্গি সংগঠনের ‘দাওয়া’ শাখা। ক্রমে তাদের সঙ্গে অন্যান্য কয়েকটি ‘অতি সুরক্ষিত’ অ্যাপে কথা বলতে শুরু করে তালহা ও সংগঠনের অন্য সদস্যরা। ক্রমাগত তাদের মগজধোলাইয়ের পর কখনও তালহা, আবার কখনও বা অন্য সদস্যরা কয়েকজনকে নিয়ে বৈঠক করে স্লিপার সেল তৈরি করে। এভাবে অন্তত দেড়শো জনের মগজধোলাই করেছে ‘আকিস’। কলকাতার গোয়েন্দাদের কাছে সেই তথ্য আসার পর তাদের তালিকাও তৈরি করতে শুরু করেছেন তাঁরা। এদের মধ্যে একটি বড় অংশই ভিনরাজ্যের বাসিন্দা।
মগজধোলাইয়ের পর অনেকেই আকিসের সদস্য হিসাবে নিযুক্ত হয়েছে। স্লিপার সেল তৈরি করা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের সাহায্যও করতে শুরু করেছে আকিসের নেতাদের। আবু তালহার আসল নাম যে একরামুল হক অথবা তার আসল ডেরা কোথায়, তা অনেক সদস্যেরই অজানা। ভারতীয় আল কায়দার ওই ‘সদস্য’রা নতুন করে কোনও জঙ্গি কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়েছে কি না, তা জানার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।