সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ইন্ডিয়া জোটের অন্দরে বিরাট ফাটলের ইঙ্গিত! গত কয়েকদিন ধরে সাম্প্রদায়িক হিংসায় উত্তাল উত্তরপ্রদেশের সম্ভল সফরে যাচ্ছিলেন রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। তাঁদের এই সফরের সমালোচনায় সরব হলেন ইন্ডিয়া জোটের শরিক সমাজবাদী পার্টি। কংগ্রেস সাংসদদের এই সফরকে 'ছবি তোলার রাজনীতি' ও 'নিছক লোক দেখানো' সফর বলে কটাক্ষ করল সপা।
সংসদ অধিবেশনকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন ধরেই টানাপোড়েন চলছিল বিরোধী শিবিরে। সংসদে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের ডাকা বিক্ষোভ কর্মসূচিতে যোগ দিতে দেখা যায়নি সমাজবাদী পার্টি ও তৃণমূলকে। আদানি ইস্যুতে কংগ্রেসের এই বিক্ষোভের পক্ষে ছিলেন না তৃণমূল ও সপা। এই ঘটনায় সপার তরফে স্পষ্টভাবে জানানো হয়, আদানি ইস্যুর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ সম্ভলে হিংসার ঘটনা। এই ইস্যুতে বিরোধীদের সরব হওয়া উচিত। তবে কংগ্রেস সংসদে সপার দাবিকে গুরুত্ব দেয়নি। এর পর বুধবার সকালে সম্ভলের রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা সম্ভলের উদ্দেশে রওনা দিতেই কড়া সুরে আক্রমণ শানাল সপা। এদিন সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাতকারে সপা সাংসদ রামগোপাল যাদব বলেন, "বার বার আবেদন করা সত্ত্বেও কংগ্রেস দল সংসদে সম্ভলের ঘটনা নিয়ে কোনও আলোচনার দাবি জানায়নি। এর পর রাহুল গান্ধী সম্ভলের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। একে আর কী বলা যায়, উনি ছবি তোলার রাজনীতি করছেন ও নিছক লোক দেখানোর জন্য ওখানে যাচ্ছেন।''
তবে শুধু সপা নয়, সংসদে কংগ্রেসের এই স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে সপার পাশাপাশি সরব হয়েছে তৃণমূলও। এই বিষয়ে রাজ্যের শাসকদলের বক্তব্য, শুধু আদানি আদানি করে সংসদ অচল করে রাখলে বিজেপিরই সুবিধা। সংসদ অচল হলে মানুষের সমস্যা তুলে ধরার জায়গা পাওয়া যায় না। তাছাড়া শুধু একটা দুর্নীতির ইস্যু তুলে জনমানসে প্রভাব ফেলা যাবে না। তাই সংসদ অধিবেশনে বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি, বাংলার বঞ্চনা, বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বাংলার পাওনা টাকা আটকে রাখা, সার-সংকট, মণিপুরে হিংসা-সহ উত্তর-পূর্বের সমস্যার কথা তুলে ধরতে হবে।
এই ঘটনায় জাতীয় রাজনীতিতে অন্য অঙ্ক কষতে শুরু করেছে রাজনৈতিক মহল। সাম্প্রতিক হরিয়ানা, মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যগুলিতে কংগ্রেসের বিরাট ব্যর্থতার পর বিজেপি বিরোধী লড়াইয়ে কংগ্রেসের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে। বিজেপিকে হারাতে কংগ্রেস যে ব্যর্থ দল তা ক্রমশ প্রমাণিত সত্য হয়ে উঠছে। এই অবস্থায় ইন্ডিয়া জোটের শরিক হলেও সেখানে কংগ্রেসের আধিপত্য মানতে নারাজ বহু শরিক। ফলে জোটের শীর্ষস্তরে যে অম্লরস তৈরি হচ্ছে তা চুঁইয়ে চুঁইয়ে নড়বড়ে করে তুলছে ইন্ডিয়া জোটের ভিত। রাজনৈতিক মহলের দাবি, তবে কী ইন্ডিয়ার মধ্যেই অকংগ্রেসি জোটের সুপ্ত বীজ অঙ্কুরিত হতে শুরু করেছে। বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মুখ হিসেবে সামনের সারিতে উঠে আসছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তাঁকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে সমাজবাদী পার্টি ও আম আদমি পার্টির মতো জোটের গুরুত্বপূর্ণ দলগুলি। যদিও কংগ্রেসের মতো সর্বভারতীয় দলকে বাদ দিয়ে অদূর ভবিষ্যতে যদি আঞ্চলিক দলগুলিকে নিয়ে অকংগ্রেসি জোট গড়ে ওঠেও, সেক্ষেত্রে জাতীয় রাজনীতির প্রেক্ষিতে তা কতদূর সফল হবে তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই।