সোমনাথ রায়, পহেলগাঁও: শুধু হিন্দু নয়, পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিদের টার্গেট ছিল অকাশ্মীরিরা! গতকাল থেকে সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলি যে দাবি করছে তা খারিজ করলেন জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের উচ্চপদস্থ এক আধিকারিক। শুধু তাই নয়, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই পুলিশ কর্তার দাবি, যেভাবে হামলা চলেছে তাতে অনুমান, অন্তত ৮-১০ জন জঙ্গি মিলে এই নরসংহার চালায়।
পুলওয়ামার পর জম্মু ও কাশ্মীরের মাটিতে সবচেয়ে বড় জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছে গত মঙ্গলবার। বিকেলে পহেলগাঁওয়ে এক রিসর্টে পর্যটকদের উপর হামলা চালায় জঙ্গিরা। দাবি করা হচ্ছিল, পর্যটকদের ধর্মীয় পরিচয় দেখে দেখে হামলা চালানো হয়েছে। স্থানীয় সূত্রের দাবি, জঙ্গিরা এসেছিল সেনার পোশাক পরে। সব মিলিয়ে ৪০ রাউন্ড গুলি চলেছে। ইতিমধ্যেই হামলার দায় স্বীকার করেছে লস্করের টিআরএফ বা দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট। জানা যাচ্ছে, এই হামলার সঙ্গে যুক্ত থাকা জঙ্গিদের বেশিরভাগই পাকিস্তানি। ঘটনার পরই অ্যালার্ট মোডে চলে এসেছে সেনা। উপত্যকায় গিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
পহেলগাঁও নরসংহার প্রসঙ্গে এক বিএসএফ আধিকারিক ও পুলিশের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানালেন, যে রিসর্টে এই হামলা চলেছে ওই অঞ্চল বেশ দুর্গম। ওখানে যাওয়ার জন্য কোনও সড়কপথ নেই, নেটওয়ার্কের সমস্যা রয়েছে। হেঁটে বা খচ্চরের পিঠে চড়ে যেতে হয় ওখানে। ফলে হামলার চলার পর পুলিশের কাছে খবর পৌঁছতেও অনেক দেরি হয়। আধিকারিকদের দাবি, 'আমাদের কাছে যদি কোনও আগাম খবর থাকত তবে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতাম। কিন্তু এমনটা যে হতে পারে এমন কোনও খবর পুলিশ প্রশাসনের কাছে ছিল না।'
ওই পুলিশ কর্তার দাবি অনুযায়ী, "রিসর্টে যখন জঙ্গি হামলা চলে সেই সময় ওখানে এক হাজার জনের মতো সাধারণ মানুষ উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের মধ্য থেকে বেছে বেছে গুলি করা হয়েছে ঠিকই, তবে জঙ্গিদের টার্গেট হিন্দু-মুসলিম ছিল না। অকাশ্মীরিরাই ছিলেন জঙ্গিদের নিশানায়।" ওই পুলিশকর্তা আরও বলেন, "কপাল ভাল যে হামলাকারীরা এলোপাথাড়ি গুলি চালায়নি। যদি তেমন হামলা চলত তাহলে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হতে পারত।" এই হামলার প্রভাব যে দেশজুড়ে পড়তে পারে, সে আশঙ্কার কথাও এড়িয়ে যাচ্ছেন না ওই পুলিশকর্তা। দেশবাসীকে সতর্ক করে প্রশাসনের আর্জি, 'কোনও ধর্ম নয়, সন্ত্রাসবাদীদের একটাই পরিচয় সে সন্ত্রাসী। আর কিছু না। এই ঘটনাকে হাতিয়ার করে দেশের অন্দরে বিভেদ তৈরি হলে তা আসলে জঙ্গিদের উদ্দেশ্যই সফল হবে।'
২০১৯ সালের পর সেভাবে এত বড় কোনও জঙ্গি হামলা ঘটেনি জম্মু ও কাশ্মীরে। এই হামলার নেপথ্যে সরাসরি পাক যোগের ইঙ্গিত দিয়ে পুলিশ কর্তাদের অনুমান, আসলে জম্মু ও কাশ্মীর আগের তুলনায় অনেক শান্ত হয়ে হয়ে উঠেছিল। ফের পর্যটকরা কাশ্মীরমুখো হচ্ছিলেন। অন্যদিকে, সীমান্তের ওপারে অশান্তি চরম আকার নিয়েছে। বালোচিস্তান থেকে অধিকৃত কাশ্মীর সর্বত্র পাক সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এই অবস্থায় ঘরের আগুনে পুড়তে থাকা পাকিস্তান চাইছিল চেনা ছকে প্রতিবেশীকেও অশান্ত করতে। যার জেরেই হয়ত এই হামলা। এদিকে এই হামলার ঘটনার পর সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে প্রত্যাঘাতের দাবিতে সরব হয়ে উঠেছে গোটা দেশ।
