সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: বিজেপি সরকারের নামবদলের কোপে জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী। মনরেগা বা MGNREGA (Mahatma Gandhi National Rural Employment Guarantee Act)-এর নাম পরিবর্তন করে বিকশিত ভারত গ্যারান্টি ফর রোজগার অ্যান্ড আজীবিকা মিশন (গ্রামীণ) বা VB-G RAM-G করার প্রস্তাব দিয়েছে কেন্দ্র। মঙ্গলবার সংসদে এই বিল পেশ হতেই প্রতিবাদে সরব হল তৃণমূল। এই ঘটনাকে গান্ধীজির অপমান বলে তোপ দাগার পাশাপাশি বিলটিকে সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর দাবি তোলা হয়েছে।
মঙ্গলবার বিলটি এদিন সংসদে পেশ হওয়ার আগে আলোচনা প্রতিবাদে সরব হন দমদমের তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। তিনি বলেন, "রামজি দেশজুড়ে পণম্য। কিন্তু এই দেশগঠনের নেপথ্যে গান্ধীজীর কৃতিত্ব অনেকখানি। দেশের স্বাধীনতায় তাঁর অবদান কেউ অস্বীকার করতে পারেন না।" শুধু তাই নয়, রাজ্যগুলির প্রতি কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিরুদ্ধে সরব হয়ে সৌগত বলেন, এই প্রকল্পে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ ৯০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৬০ শতাংশ করা হচ্ছে। এর ফলে রাজ্যগুলির উপর চাপ বাড়ছে। কেন্দ্রের পেশ করা এই বিলকে সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর দাবি তোলেন সৌগত।
মোদি সরকারের পেশ করা এই বিলের বিরুদ্ধে একযোগে সরব হয়েছে, কংগ্রেস-সহ বাকি বিরোধী দলগুলিও। এদিন কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর বলেন, "গান্ধীর রামরাজ্য আসলে সামাজিক রামরাজ্য। সেখানে গ্রামস্বরাজের কথা বলা হত। কিন্তু বিজেপি যা করছে তা দেখে ছেলেবেলায় শোনা এক গান মনে পড়ছে, 'দেখো দিবানো এ কাম না করো, রাম কা নাম বদনাম না করো।'" ওয়ানড়ের সাংসদ প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বলেন, "গ্রামীণ মানুষকে রোজগার দিতে এই প্রকল্প চালু হয়েছিল। আইনের গুরুত্ব কতখানি ছিল তা বোঝা যায় আইন পাশের সময়। সেই সময়ে সর্বসম্মতিতে পাশ হয়েছিল এই আইন। যখন আপনারা গ্রামে যাবেন দেখবেন কারা ১০০ দিনের কাজ কারা করেন। দেশের প্রান্তিকতম মানুষের জন্য এই আইন। সব প্রকল্পের নাম বদলের এত উদ্যোগ কেন বিজেপির।" বিলটি সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব দেন তিনি। বিরোধীদের তরফে স্পষ্টভাবে জানানো হয়, "রামের নামে কোনও সমস্যা নেই, কিন্তু মহাত্মা গান্ধীকে অপমান করার কোনও অধিকার নেই এই সরকারের।" বিলটি পেশ হওয়ার পর ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখানোর পাশাপাশি ওয়াক আউট করে বিরোধীরা। তবে বিরোধীদের আপত্তি উড়িয়ে সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কিরের রিজিজু স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, বিরোধীরা যতই প্রতিবাদ করুক, রামজি বিল পাশ হবেই।
কী রয়েছে এই বিলে?
মনরেগার মতো হলেও, এই বিলে নতুন কিছু বিষয় যুক্ত করেছে মোদি সরকার। মনরেগায় বছরে ন্যূনতম ১০০ দিন কাজের গ্যারান্টি দেওয়া হয়েছিল। এখানে সেটা ১২৫ দিন কাজের গ্যারান্টি। মনরেগায় টানা ১৫ দিন কাজ করার পর দেওয়া হত মজুরি। নয়া বিলে, প্রতিদিনের কাজের মজুরি দেওয়ার হবে সপ্তাহান্তে। এবং মনরেগার প্রকল্পের আর্থিক অনুদানের দায়িত্ব সম্পূর্ণরূপে ছিল কেন্দ্রের উপর। কিন্তু এই ‘রামজি’ বিলের প্রতিটি রাজ্য-কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ৬০:৪০ অনুপাতে প্রকল্পের টাকা দেবে কেন্দ্র।
