সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভারতকে পঞ্চম প্রজন্মের এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান দেবে আমেরিকা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে এমনই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। পাশাপাশি আরও প্রতিরক্ষা সরঞ্জামও সরবরাহ করার কথা দিয়েছেন তিনি। এই যুদ্ধবিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এক সংযোজন হতে চলেছে বলছে ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ। কিন্তু অন্য মতও রয়েছে। উঠে আসছে নানা প্রশ্ন। 'ব্যবসায়ী' ট্রাম্প কি এই যুদ্ধবিমান দেওয়ার কথা বলে অন্য উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে চাইছেন?
বেঙ্গালুরুতে চলছে ১৫তম 'অ্যারো ইন্ডিয়া'। এশিয়ার বৃহত্তম যুদ্ধবিমানের প্রদর্শনী। শুক্রবারই শেষ হচ্ছে তা। ভারতীয় বায়ুসেনার ইয়ালাহাঙ্কা স্টেশনের ওই শোয়ে প্রদর্শিত হয়েছে এফ-৩৫। দুবছর আগের 'অ্যারো ইন্ডিয়া'তেও তার দেখা মিলেছিল। কিন্তু এবার ওই যুদ্ধবিমানকে ফের ভারতের আকাশে উড়তে দেখে বিশেষজ্ঞরা আন্দাজ করতে পেরেছিলেন মোদির সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠকে ওই যুদ্ধবিমান কেনার সিদ্ধান্ত নিতে পারে কেন্দ্র। শেষপর্যন্ত তাই হয়েছে। শক্তিশালী ওই যুদ্ধবিমান পঞ্চম প্রজন্মের। এমন যুদ্ধবিমান ভারতের কাছে নেই। রাফালে দিয়ে কিছুটা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটালেও এফ-৩৫-এর অন্তর্ভুক্তি ভারতীয় বায়ুসেনার ভাঁড়ারে প্রথম পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান। কিন্তু সত্যিই কি এই বিমান ত্রুটিমুক্ত?
মার্কিন সংস্থা 'লকহিড' নির্মিত এফ-৩৫ বহু দেশের ভাঁড়ারে যুক্ত হয়েছে। এর প্রযুক্তি অত্যন্ত উন্নত। রয়েছে সেন্সর ফিউশন ও অভূতপূর্ব যুদ্ধ-বহুমুখী দক্ষতা। তবু এর রাডারের ত্রুটি, ল্যান্ডিংয়ের সমস্যা নিয়েও কথা হয়েছে। মাত্র কয়েকদিন আগে, ২৮ জানুয়ারি আলাস্কায় মহড়ার সময় ভেঙে পড়েছিল একটি এফ-৩৫এ লাইটনিং ২ ফাইটার জেট। শেষপর্যন্ত চালক উপস্থিত বুদ্ধির জেরে রক্ষা পেলেও বিষয়টি গোটা বিশ্বেরই নজরে রয়েছে। এর আগেও মাঝে মাঝেই এই বিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। বলা হচ্ছে ইঞ্জিন, ল্যান্ডিং গিয়ার ও সফটওয়্যার সিস্টেমে সমস্যার কারণেই দুর্ঘটনাগুলি ঘটেছে। এমন এক যুদ্ধবিমান নিজেদের ভাঁড়ারে পেয়ে কি আদৌ কোনও লাভ হবে ভারতের? প্রশ্ন উঠছে।
পাশাপাশি আরও একটি প্রসঙ্গ উঠে আসছে। এই উন্নত প্রযুক্তির পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমানটির দাম আকাশছোঁয়া। আমেরিকার সামরিক খাতে যা খরচ তার সঙ্গে সেটি মানানসই হলেও ভারতের ক্ষেত্রে এটা একটি বেশিই 'দামি' নিঃসন্দেহে। অথচ প্রধানমন্ত্রী মোদি বারবার 'আত্মনির্ভর' হয়ে ওঠার ডাক দিয়েছেন। সেক্ষেত্রে এত দাম দিয়ে আমেরিকার থেকে যুদ্ধবিমান না কিনে দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে কোনও বিমান নির্মাণের পরিকল্পনা কেন করা হল না? উঠছে এই প্রশ্ন।
আর এক্ষেত্রে অনেকেই 'ব্যবসায়ী' ট্রাম্পের 'চাল' দেখতে পাচ্ছেন। মসনদে বসেই আমেরিকাকে ফের 'গ্রেট' করার পণ করেছেন তিনি। শুল্ক চাপানোর হুমকির পাশাপাশি অন্যান্য পথেও রোজগার বাড়াতে চান ট্রাম্প। তাই ভারতের মতো দেশ যদি 'স্বাবলম্বী' হয়ে ওঠে পুরোপুরি, সেক্ষেত্রে এত বড় বাজারটি ফসকে যাবে। সেকথা মাথায় রেখেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট এফ-৩৫ ভারতের হাতে তুলে দিতে চাইছেন না তো? এই প্রশ্নও কিন্তু ঘুরপাক খাচ্ছে।আপাতত এফ-৩৫ যেন এক 'শাঁখের করাত'-এর মতো হয়ে উঠেছে।
