স্টাফ রিপোর্টার: রাজ্যের প্রাপ্য নিয়ে সংসদে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনের করা মন্তব্যের কড়া জবাব দিল নবান্ন। শুক্রবার সংসদে নির্মলা অভিযোগ করেন, পশ্চিমবঙ্গ জিএসটি ক্ষতিপূরণের সেসের দাবি সংক্রান্ত শংসাপত্র জমা দেয়নি। কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের খরচ হিসেবে কেন্দ্রকে ১,৮৪১ কোটি টাকা মেটায়নি। গ্রাম সড়ক যোজনায় কেন্দ্রের প্রশ্নের ব্যাখ্যাও দেয়নি। নির্মলার এই তিন অভিযোগের জবাব নবান্নর তরফে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে দেওয়া হয়।
নবান্নর দাবি, জিএসটি ক্ষতিপূরণ বাবদ কেন্দ্রের কাছেই রাজ্যের পাওনা রয়েছে ২,৪০৯ কোটি ৯৬ লক্ষ টাকা। নবান্নর বক্তব্য, ২০১৭-র ১ জানুয়ারি থেকে ২০২২-এর ৩০ জুন পর্যন্ত রাজ্যগুলিকে কেন্দ্র জিএসটির ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। জিএসটি বাবদ যে রাজস্ব রাজ্যের আদায় হওয়ার কথা, বাস্তবে তার চেয়ে যেটা কম হবে সেটা কেন্দ্রের ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৫ বছর ধরে দেওয়ার কথা। বছরের শুরুতে এই ক্ষতিপূরণ হিসেব করা হয় সুনিশ্চিত রাজস্ব থেকে মোট রাজস্ব আদায় যতটা কম হচ্ছে তা দিয়ে।
[আরও পড়ুন: অল্ট বালাজির প্রধান পদ ছাড়লেন একতা কাপুর ও তাঁর মা শোভা কাপুর, কিন্তু কেন?]
তার ভিত্তিতে রাজ্যগুলি ক্ষতিপূরণের দাবি করে থাকে। কিন্তু, বছর শেষে অডিটর জেনারেলের হিসাবের পর প্রকৃত জিএসটি আদায়ের হিসেবটি মেলে। সেটি মিললে দেখা যায় কেন্দ্র যে ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে প্রাপ্য তার চেয়ে অনেকটা বেশি। কারণ এজির হিসেবের পর জানা যায়, জিএসটি আদায়ের কতটা সরকারকে ফেরত দিতে হচ্ছে। নবান্নর দাবি, প্রথম দুই বছর অর্থাৎ, ২০১৭-১৮ এবং ২০১৮-১৯-এ এই নেট রাজস্ব আদায়ের উপর
ভিত্তি করে কেন্দ্র জিএসটির ক্ষতিপূরণ দিয়েছিল। কিন্তু, ২০১৯-২০, ২০২০-২১ এবং ২০২১-২২’এর ৩০ জুন পর্যন্ত যে ক্ষতিপূরণ কেন্দ্র দিয়েছে তা গ্রস জিএসটির হিসেবে। এতে রাজ্যের ক্ষতিপূরণে প্রকৃত হিসেব থাকে না। ফলে জিএসটি ক্ষতিপূরণ হিসেবে রাজ্যের এখনও কেন্দ্রের কাছে ২৪০৯ কোটি ৯৬ লক্ষ টাকা পাওনা।
কেন্দ্রীয় বাহিনীর খরচ হিসেবে কেন্দ্র রাজ্যের কাছে যে টাকা পায় বলে নির্মলা দাবি করেছেন, তাকে উড়িয়ে দিয়েছে নবান্ন। নবান্নর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নির্বাচনের সময় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের নির্দেশে। সেখানে রাজ্যের কোনও ভূমিকা থাকে না। যদিও রাজ্য কেন্দ্রীয় বাহিনীর যাতায়াত, খাওয়া-দাওয়া ও অন্যান্য কিছু খরচের এক বিরাট দায়িত্ব পালন করে। এই টাকা কেন্দ্রের দেওয়া উচিত। মাওবাদী অধ্যুষিত অঞ্চলে মোতায়েন করা কেন্দ্রীয় বাহিনীর খরচও কেন্দ্রের বহন করা উচিত বলে রাজ্যের দাবি। কারণ, মাওবাদী সমস্যা একটি জাতীয় সমস্যা।
একাধিক রাজ্যের মধ্যে সমন্বয় করে এই বাহিনী মোতায়েন করা হয়। তৃতীয়ত, প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার বিষয়ে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের সমস্ত শর্ত রাজ্য পূরণ করেনি বলে নির্মলা যে অভিযোগ তুলেছেন তাকে সম্পূর্ণ ভুল বলে দাবি করেছে নবান্ন। নবান্নর তরফে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের সমস্ত প্রশ্নের জবাব ২০২২-এর ২৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দেওয়া হয়েছে। ঠিকাদারদের জিএসটির ক্ষতিপূরণ বাবদ যে দাবি তা এখনও এজি’র কাছ থেকে রাজ্যের কাছে এসে পৌঁছয়নি। কিন্তু, সেটা তহবিল পাওয়ার ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক কোনও শর্তের মধ্যে পড়ে না বলে রাজ্যের দাবি।