আলাপন সাহা: সানরাইজার্স (SRH) ম্যাচের আগের দিন সাংবাদিক সম্মেলনে ডোয়েন ব্র্যাভোকে প্রশ্নটা করা হয়েছিল। কেকেআর (KKR) মেন্টর নতুন করে বিতর্ক তৈরি করতে চাননি। তাই ঘুরিয়ে উত্তর দিয়ে যান। আইপিএলের (IPL 2025) বিজনেস এন্ড আসতে বহু দেরি। দিন দশেক হল টুর্নামেন্ট শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে পিচ-বিতর্ক নিয়ে যে প্রবল হইচই শুরু হয়েছে, মনে হয় না আগে কখনও আইপিএলে তা হয়েছে। চেন্নাই সুপার কিংস কোচ স্টিফেন ফ্লেমিং বলেছেন, তাঁরা ঘরের মাঠে খেলার কোনও সুবিধে পাচ্ছেন না। লখনউ সুপার জায়ান্টস মেন্টর জাহির খান একই কথা বলেছেন। অজিঙ্ক রাহানে বৃহস্পতিবার যা বলে গেলেন, তাতে নতুন করে আবার না বিতর্ক শুরু হয়ে যায়। কেকেআর অধিনায়ক পরিষ্কার বলে যান "পিচ দেখে আমি খুশি। ঘরের মাঠে হোম টিমের পছন্দ মতো পিচই হওয়া উচিত।"
রাহানেরা এদিন পছন্দ মতো পিচ পেলেন। ম্যাচও জিতলেন অনায়াসে। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের কাছে কুৎসিত হারের পর ঘরের মাঠে ঘুরে দাঁড়ানো। ম্যাচ শেষে প্রেস কনফারেন্সে ভেঙ্কটেশ আইয়ারের কথা শুনেই বোঝা যাচ্ছিল টিমের অন্দরমহলে ফুরফুরে আবহ ফিরে এসেছে। পিচ নিয়ে প্রশ্নের সামনে পড়তে হল নাইট সহ-অধিনায়ককেও। ভেঙ্কটেশ বলেন, "আমরা ম্যাচ জিতেছি। অবশ্যই চাইব এরকম উইকেট হোক। কম্পিটেটিভ উইকেট ছিল। আমাদের বোলাররা খুব ভালো বোলিং করেছে। ইডেনে 'পার' স্কোর করেছিলাম। যেরকম উইকেট ছিল, যেরকম কন্ডিশন ছিল, বোলাররা পুরোপুরি কাজে লাগিয়েছে। আমি বলব না-উইকেট এরকম হওয়া উচিত কিংবা ওরকম হওয়া উচিত। আমরা সবাই প্রোফেশনাল। পিচ যেরকমই হোক না কেন, তার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। ঘরের মাঠে যদি আমরা নিজেদের পছন্দমতো উইকেট পাই, ভালোই হবে।"
আফসোস শুধু একটাই। কেকেআরের এরকম দুর্ধর্ষ জয়ের দিনেও গ্যালারির অর্ধেক ভরল না। এদিন বড্ড অচেনা লাগল ইডেনের গ্যালারিকে। কেকেআর ইডেনে মরশুমে দ্বিতীয় হোম ম্যাচ খেলল। কোথায় সেই ভিড়? ডি ব্লক একেবারে ফাঁকা। বাকি কয়েকটা ব্লকগুলোর অবস্থাও কম-বেশি এক। আগের ম্যাচে ক্লাব হাউসের আপার টিয়ারে একটা সিট খালি ছিল না। বৃহস্পতিবার অর্ধেক ভরল না। আরসিবি ম্যাচের পরিস্থিতি কী ছিল একবার ভাবুন। দু'ঘণ্টা আগে থেকে স্টেডিয়াম চত্বরের সামনে গিজগিজে ভিড়। এদিন তার ছিটেফোটাও ছিল না। জার্সি, টুপি নিয়ে বিক্রেতারা গোমড়া মুখে বসে। কেনার লোক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। শেষ কবে আইপিএলে ম্যাচে এমন দৃশ্য দেখেছে ইডেন!
অনেকে বলছিলেন, টিকিটের এবার অত্যাধিক দাম করেছে কেকেআর। তাছাড়া কেকেআর আর সানরাইজার্স দুটো টিমে বিরাট-রোহিত কিংবা মহেন্দ্র সিং ধোনির মতো কোনও দেশজ মহাতারকা নেই। যাঁদের ক্রিকেটীয় আকর্ষণ সুদূরপ্রসারী। যাঁদের দেখতে অন্য রাজ্য থেকেও সমর্থকরা ছুটে আসেন পাগলের মতো। এদিন তো আবার মাঠে শাহরুখ খানও ছিলেন না। সিএবির তরফ থেকে জানানো হল, রাত নটা পর্যন্ত ইডেন দর্শকের সংখ্যা ৩৪ হাজার। যাঁরা এসেছিলেন, তাঁরা ফিরলেন তৃপ্তি নিয়ে। ভেঙ্কটেশ রানে ফিরেছেন। রিঙ্কু সিং ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন। বরুণ চক্রবর্তী যথারীতি দুর্দান্ত। কেকেআর পেসাররাও দুর্দান্ত বোলিং করে গেলেন। সবচেয়ে বড় কথা, ঘরের টিমের জয়ে ফেরা। পরের ম্যাচ থেকে টিকিটের দাম কমিয়ে দিয়েছে কেকেআর। এরপরও ইডেন গ্যালারির চেনা ছবি না ফিরলে, সেটাই হবে মহা আশ্চর্যের।