সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ইরানে বিমান ধ্বংসের কারণ নিয়ে উঠে আসছে নানা দাবি, পালটা দাবি, পরস্পরবিরোধী তথ্য। এতে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে দুনিয়া জুড়ে। কেন ও কীভাবে বিমানটি ধ্বংস হয়েছিল তা নিয়ে রহস্য ও ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।
ইউক্রেন দাবি করেছে, বিমানটিকে মাঝ আকাশেই বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরে সেই দাবি থেকে সরে এসে তারা ফের দাবি করে, আমেরিকা বা ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতেই ধ্বংস হয়েছে ওই যাত্রীবাহী বিমানটি। ইউক্রেন ইঙ্গিত দিয়েছে, আমেরিকার যুদ্ধবিমান ইরানের আকাশে আগ্রাসন ঘটিয়েছে এটা মনে করেই ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে ইরানের বায়ুসেনা। এই ভয়াবহ ভুলের খেসারত দিয়েছে নিরীহ যাত্রীবাহী বিমানটি। ইরানি মিসাইলের আঘাতে ধ্বংস হয়েছে মাঝ আকাশেই। মৃত্যু হয়েছে ১৭৬ জন বিমানযাত্রীর। একই কথা বলেছে আমেরিকাও। আমেরিকার দাবি, শত্রুর যুদ্ধবিমান হিসাবে ভুল করে ওই বোয়িং যাত্রীবাহী এয়ারবাসকেই ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ধ্বংস করেছে ইরান। এখন তারা নিজেদের ভুল অস্বীকার করছে। অন্যদিকে, ইরান দাবি করেছে, মাটিতে ভেঙে পড়ার আগেই আগুন ধরে গিয়েছিল দুর্ঘটনাগ্রস্ত ওই বিমানটিতে। ইরানের তদন্তকারী সংস্থা এক প্রেস বিবৃতিতে জানিয়েছে, বিমানটির ইঞ্জিনে ও ডানায় আগুন ধরে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান রেকর্ড করে ইরানের অসামরিক বিমান সংস্থা ও তদন্তকারী সংস্থা জানিয়েছে, ওড়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই বিমানটিতে আগুন ধরে যায় এবং সেটি মাটিতে ভেঙে পড়ে। বিমানবন্দরের আশপাশের বহুতলগুলির লোকজনদের বয়ানও তাই বলছে। এই খবর প্রকাশ করে ইরানের সরকারি সংবাদসংস্থা জানিয়েছে, বিমানটির ইঞ্জিনে ‘যান্ত্রিক ত্রুটি’ ছিল। একই মন্তব্য করে তেহরানের ইউক্রেন দূতাবাসও। কিন্তু কী ধরনের যান্ত্রিক ত্রুটি হয়েছিল বা কোন ইঞ্জিনে আগুন ধরল তা বলেত পারেনি ইরানের তদন্তকারী সংস্থা। উদ্ধারকারী দলও কোনও সূত্র পায়নি। তবে ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ওলেকসাই হনচারুক যে নাশকতার তত্ত্ব প্রচার করেছেন তা খারিজ করে দিয়েছে ইরান।
তবে ইউরোপিয়ান, কানাডিয়ান ও রুশ বিশেষজ্ঞরা ঘটনার ছবি ও তথ্য বিশ্লেষণ করে বলেছেন, এটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনা নয়। ইঞ্জিন বিগড়েই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। ইরান-আমেরিকা যুদ্ধের আবহে এই ঘটনা ঘটেছে বলে এটাকে অনেকে যুদ্ধের সঙ্গে মিলিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু কীভাবে ও কেন আগুন ধরল ইঞ্জিনে নাকি বিমানের ভিতরেই কেউ অসাবধানতাবশত গ্যাস লাইটার ব্যবহার করেছিলেন তা স্পষ্ট নয়।
[আরও পড়ুন: থমথমে মধ্যপ্রাচ্য, শান্তি স্থাপনে ‘বন্ধু’ ভারতের সাহায্য চাইল ইরান]
১৭৬ জন যাত্রী নিয়ে তেহরানের ইমাম খামেনেই বিমানবন্দর থেকে রওনা দিয়েছিল বিমানটি। যাচ্ছিল ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের বোরিস্পিল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশে। বুধবার সকাল ৬টা বেজে ১৫ মিনিট নাগাদ আকাশে ওড়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই সেটি ভেঙে পড়ে।ইউক্রেনিয়ান এয়ারলাইন্সের দুর্ঘটনাগ্রস্ত বোয়িং ৭৫২ বিমানটি ছিল তিন বছরের পুরনো। বিমানটির ব্ল্যাকবক্সের ফরেনসিক পরীক্ষা করছে ইরান সরকার। তারা জানিয়েছে, এই ব্ল্যাকবক্স তারা ইউক্রেন সরকার বা আমেরিকা কাউকেই দেবে না।
বুধবার বিমান ধ্বংসের পরই পশ্চিম এশিয়ার সোশ্যাল মিডিয়ায় রটে যায়, ইরানের উচ্চপদস্থ কয়েকজন গুপ্তচর ও সেনা অফিসার ছিলেন ধ্বংস হওয়া বিমানে। তাঁরা ইউক্রেন হয়ে রাশিয়া যাচ্ছিলেন গোপন কাজের অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে। তাঁদের হত্যা করতেই নাশকতা চালিয়ে বিমানটি ধ্বংস করেছে মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ-র এজেন্টরা। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই সব রটনা ইরান সরকার গুজব ও ভিত্তিহীন বলে আগেই খারিজ করে দিয়েছে।
The post মিসাইলের আঘাতেই ইরানে ভেঙে পড়ে বোয়িং বিমান! তুঙ্গে জল্পনা appeared first on Sangbad Pratidin.