shono
Advertisement

অভিশপ্ত প্রেমে আজও পর্যটকদের বিপদে ফেলে এই প্রাসাদ!

গোলকোন্ডা দুর্গের দেওয়ালেও আজও ঘুরে বেড়ায় প্রেমের ছায়া। অতৃপ্ত ত্রিকোণ প্রেম। সুলতান আবদুল্লা কুতুব শাহ, তারামতী আর প্রেমমতীর ত্রিকোণ প্রেম। The post অভিশপ্ত প্রেমে আজও পর্যটকদের বিপদে ফেলে এই প্রাসাদ! appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 11:47 PM May 24, 2016Updated: 06:19 PM May 24, 2016

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্রেম বড় রহস্যময়। এই নশ্বর শরীর একদিন মিশে যায় আকাশে-বাতাসে, কিন্তু প্রেম জেগে থাকে।
গোলকোন্ডা দুর্গের দেওয়ালেও আজও ঘুরে বেড়ায় এই প্রেমেরই ছায়া। অতৃপ্ত ত্রিকোণ প্রেম। সুলতান আবদুল্লা কুতুব শাহ, তারামতী আর প্রেমমতীর ত্রিকোণ প্রেম।
গোলকোন্ডা দুর্গ অবশ্য শুরু থেকেই অভিশপ্ত। হিন্দু কাকতীয় বংশের হাতে তৈরি এই দুর্গ যে দিন থেকে প্রথমে কুতুবশাহি সুলতান এবং তার পরে মুঘলদের হাতে গিয়েছে, রক্তে ধুয়ে গিয়েছে দুর্গপ্রাকার। হিংসা আর জয়-পরাজয়ের মাঝে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থেকেছে বটে গোলকোন্ডা, কিন্তু মানজীবন বিফল হওয়ার অতৃপ্তি ঘুরপাক খেয়েছে দুর্গের ভিতরেই। তার হাত থেকে নিষ্কৃতি পায়নি গোলকোন্ডা।
সেই তরবারির ঝনঝনির মাঝেই একদিন গোলকোন্ডা পেয়েছিল সুরের তরানা। সেই সুর এক দিকে যেমন ঝঙ্কার তুলত তারামতীর কণ্ঠে, তেমনই ঘুঙুর হয়ে বেজে উঠত প্রেমমতীর পায়ে।
কুতুবশাহি বংশের সপ্তম শাসক আবদুল্লা কুতুব শাহর সময়ে এভাবেই গোলকোন্ডাকে সুরজালে বেঁধে রেখেছিল দুই নর্তকী। তারামতী আর প্রেমমতী।
তবে, গোলকোন্ডাকে ঘুঙুরের ছন্দে বাঁধলেও সুলতানকে বাহুডোরে বাঁধতে পারেনি প্রেমমতী। তার প্রেম থেকে গিয়েছিল নাচমহলের চৌহদ্দিতেই। সুলতান তার প্রেম স্বীকার করেছিলেন ঠিকই, কিন্তু প্রেমমতীকে স্বীকার করেননি।

Advertisement

তারামতী মহল

সুলতানকে নিজের করে পেয়েছিল শুধু তারামতী। তার গানের টানে সাড়া দিয়েছিলেন কুতুবশাহি শাসক।
পরিণাম তার পর বদলে যায় পরিণয়ে। তারামতীকে বিয়ে করে বেগমের মর্যাদা দেন আবদুল্লা কুতুব শাহ। তারামতীর সামান্য গানমহল বদলে যায় বারোটি দরজা সমৃদ্ধ অপরূপ স্থাপত্যে। তার নাম হয় তারামতী বারদ্বারি।
প্রেমমতী কিন্তু পড়ে থাকে উপেক্ষা আর অনাদরেই। সুলতান এক সময়ে ভুলে যান তার অস্তিত্বের কথাও। যে নাচমহলে সুলতানের সামনে হৃদয়ের সবটুকু উজাড় করে নিজেকে অর্পণ করত প্রেমমতী, সেখানেও ধুলো জমে।
সুলতানের সবটুকু নিয়ে যে তখন শুধু বিরাজ করছে তারামতীই!
প্রেমমতী তার পরে আর অপেক্ষা করেনি। অভিমান তাকে নিয়ে যায় স্বেচ্ছামৃত্যুর পথে। আত্মহত্যা করে ব্যর্থ প্রেমের জ্বালা জুড়ায় প্রেমমতী।
কিন্তু, তার অতৃপ্তি আজও প্রাসাদ ছেড়ে যায়নি। সন্ধে হলেই প্রাসাদের আনাচে-কানাচে শোনা যায় প্রেমমতীর ঘুঙুরের শব্দ।
তবে, ত্রিকোণ প্রেম যে শুধু একজনকেই দগ্ধায়, তা তো নয়! প্রেমমতী শরীর ছেড়ে যাওয়ার পরে হয়তো সুখেই ছিল বেগম তারামতী, তার প্রাণপ্রিয় সুলতানের সঙ্গে। কিন্তু, সেই সুখে মিশে ছিল চোখের জল আর রক্তের দাগ।
তাই, মৃত্যুর পরে গোলকোন্ডা ছেড়ে যেতে পারেনি তারামতীও। আর, তারামতীকে ছেড়ে যাননি সুলতান আবদুল্লা কুতুব শাহ-ও!
তবে, জীবনে না হলেও মৃত্যুর পরে প্রেমমতীর পাশে থাকতে পেরেছে তারামতী। দুর্গে ঠিক পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে তারামতী আর প্রেমমতীর সমাধি। দুর্গের ভিতরেই সমাধিস্থ করা হয় তাঁদের নশ্বর দেহকে।
কিন্তু, প্রেম বয়ে চলে জীবন থেকে মৃত্যুর ধারায়। শরীর শেষ হয়ে গেলেও প্রেম আজও দুর্গের দেওয়ালে মাথা কুটে মরে।

দুর্গের দেওয়ালে প্রেমমতীর ছায়া

সেই জন্যই সূর্য ডুবলে গোলকোন্ডা দুর্গে আর কাউকে থাকতে দেওয়া হয় না। এটা শুধুই সরকারি নিয়ম নয়।
ক্ষতি না করলেও অশরীরীদের নিয়ে যে অসুবিধে হয় শরীরী জগতে।
একটা সময়ে যখন সূর্যাস্তের পরেও যাওয়া যেত দুর্গের ভিতরে, সেই সময়ে অনেক আশ্চর্য ঘটনাই প্রত্যক্ষ করেছেন পর্যটকরা। তাঁদের কানে এসেছে গলা সাধার আওয়াজ। সেই সুর ধরে এগোতে এগোতে এক সময়ে দুর্গের গভীরে হারিয়ে গিয়েছেন পর্যটকরা, কিন্তু কারও দেখা মেলেনি। সেই সুর শোনার পরে অনেক কষ্ট করে তাঁদের চিনতে হয়েছে দুর্গের বাইরে যাওয়ার রাস্তা।
প্রেমমতীও থেকে গিয়েছে দুর্গেই। আজও সন্ধের পরে নিয়ম করে শোনা যায় তার ঘুঙুরের বোল। কখনও সেই ঘুঙুর নীরব হয়ে যায়, ভেসে আসে চাপা কান্নার আওয়াজ। সেই আওয়াজ ধরে এগোতে গিয়ে অনেকে দুর্গের দেওয়ালে প্রেমমতীর ছায়াও দেখেছেন। অনেক সময় আবার শুনতে পেয়েছেন রাগের মাথায় বাসন ছুঁড়ে ফেলার শব্দ। কবুতরখানার পাশে হামেশাই এমন শব্দ শোনা যায়।
আসলে, কাউকে প্রাণ ঢেলে ভালবাসা যে সব সময়েই কষ্টের। কষ্টের সেই মানুষটিকে কখনই নিজের করে না পাওয়া। সেই তাড়নাতেই আজও গোলকোন্ডায় ভালবাসা খুঁজে বেড়ায় প্রেমমতী।

তারামতী আর প্রেমমতীর সমাধি

তবে, আপনাকে যিনি ভালবাসেন, চোখের সামনে তার কষ্ট আর মৃত্যু দেখাটাও বড় যাতনার। পাপবোধেরও। সেই অসহায়তা থেকেই কি আজও গোলকোন্ডায় থেকে গিয়েছেন খোদ সুলতানও?
তারামতীও কি এক সময়ে নিজেকেই দোষ দিতেন প্রেমমতীর এই পরিণামের জন্য?
প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়া সহজ নয়।
সহজ কেবল তাঁদের নিজেদের মতো করে ছেড়ে দেওয়া। তাঁদের প্রেমের নিভৃতিতে বাধা না দেওয়া।
সেই জন্যই সন্ধে ঘনালে কেউ আর থাকেন না গোলকোন্ডায়।
আপনি কিন্তু ঘুরে আসতে পারেন গোলকোন্ডা থেকে। দিনের বেলায় ঘুরে দেখুন তারামতী বারদ্বারি, প্রেমমতী নাচমহল। একটু সময় নিয়ে থাকুন সেখানে। অনুভব করুন তাদের ত্রিকোণ প্রেম।
কে জানে, বহু যুগ পরে আপনার এই অনুভব, সহানুভূতি আর দীর্ঘশ্বাসই হয়তো একমাত্র প্রাপ্তি হবে তারামতী, সুলতান আবদুল্লা কুতুব শাহ আর প্রেমমতীর!

The post অভিশপ্ত প্রেমে আজও পর্যটকদের বিপদে ফেলে এই প্রাসাদ! appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement