বেশ কিছু ব্যাংকের শেয়ার এখন পড়ন্ত। আর এই তালিকায় রয়েছে প্রথম সারির কিছু নামও। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটাই সেরা সময় এই ব্যাংকগুলির স্টক কেনার। কারণ, ব্যাংক স্টক, যা প্রধান ইনডেক্সগুলির একটা বড় অংশ, স্বল্প মূল্যে মিললে মধ্য-দীর্ঘমেয়াদে নতুন সুযোগ আনবে। ব্যাখ্যা করলেন নীলাঞ্জন দে
একাধিক ব্যাংকিং শেয়ার এই মুহূর্তে বেশ নিচের দিকে নেমে যাওয়ার জন্য নতুন লগ্নিকারীদের সুবিধা হয়েছে। তুলনায় সস্তায় বড় ব্যাংকের স্টক আজ কেনা সম্ভব এবং এক শ্রেণীর বিনিয়োগকারীর জন্য তা বেশ আশাপ্রদ। ব্যাংক স্টক, যেটি প্রধান ইনডেক্সগুলির এক বড় অংশ, যদি স্বল্প মূল্যে পাওয়া যায় তাহলে তো মধ্য বা দীর্ঘমেয়াদের জন্য নতুন সুযোগ আনবে। মাঝারি-মাপের ব্যাংকের স্টকও এখন তুলনামূলকভাবে আকর্ষণীয় দামে ক্রয়-বিক্রয় করা সম্ভব। ভাল ব্যাংকের শেয়ার কিনে, ধীরে-সুস্থে জমানো উচিত বলে মনে করেন অনেকেই।
[আরও পড়ুন: সাবধান থাকুন ভুইফোঁড় সংস্থা থেকে, বাজারে লগ্নি করতে ভরসা রাখুন বিশ্বস্ত নামে]
এই প্রসঙ্গে বলা উচিত যে, প্রথমেই ব্যাংক ইনডেক্স আপনার নজরে পড়বে, এবং সহজেই বুঝবেন ‘ভ্যালু বাইয়িং’ করার অনেক সুযোগ আপনার সামনে আজ উপস্থিত। উল্লেখযোগ্য, নিফটি এবং সেনসেক্স, দুই প্রধান সূচকই ব্যাংকের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। বৃহৎ ব্যাংকের মধ্যে SBI, HDFC এবং ICICI ও Axis ছাড়াও নির্দিষ্ট কিছু সরকারি ব্যাংক (যেমন PNB) আপনার পোর্টফোলিওতে থাকতে পারে কি না তা বুঝে নিতে হবে। অপেক্ষাকৃত মাঝারি মাপের প্লেয়ার (যেমন Kotak Mahindra) নিয়েও এমন চিন্তাভাবনা করতে পারেন। একেবারে অন্যদিকে আছে ছোট বা ইদানীংকালে স্থাপিত নতুন কিছু ব্যাংক। উদাহরণ হিসাবে স্মল ফাইন্যান্স ব্যাংকের কথা বলা চলে। সামান্য কয়েক বছরই হল এগুলি বাজারে পা রেখেছে।
এদেশে ব্যাংকিং ক্ষেত্র ব্যাপক হারে বিস্তৃত, তাই অনেক ব্যাংকের পক্ষেই ভালভাবে ব্যবসা বাড়ার সুযোগ হয়েছে। লোন নিয়ে উৎসাহ-চাহিদা সবই বাড়ছে, তাই ঋণদাতা হিসাবে ব্যাংকের গুরুত্ব যথেষ্ট। তবে এই প্রসঙ্গে দু-চারটি তর্ক জোরাল রকমভাবে চালু, এও বলে রাখা বাঞ্ছনীয়।
লোনের ব্যবসায় বিরাট প্রতিযোগিতা যে আছে তা তো বলাই বাহুল্য। নানাবিধ ফাইন্যান্স কোম্পানি এ ব্যাপারে খুবই সচেষ্ট। তবে তার থেকেও বড় অসুবিধা হল NPA (নন-পারফর্মিং অ্যাসেট), যা অনেক বড় প্লেয়ারদের চিন্তায় ফেলেছে। অবশ্য, এটা ঠিক যে ব্যাংকিং নীতির পরিবর্তনের ফলে NPA-এর বিষয়ে নতুন নিয়মকানুনও এসেছে, তাতে উপকারই হবে বলে অনেকের ধারণা। এছাড়াও, গত দুই বছরে, পাবলিক সেক্টর ব্যাংকের ক্ষেত্রে সরকার ‘কনসলিডেশন’ করার নীতি নিয়েছে। তাই সংখ্যায় কম হওয়ার পরও, বৃহৎ ব্যাংকের ব্যালেন্স শিট আজ আরও কিছুটা স্ফীত হতে পেরেছে। সব মিলিয়ে নতুন শ্রেণির ক্রেডিট প্রোডাক্ট আনতে সক্ষম হয়েছে ছোট-মাঝারি সব ধরনের ব্যাঙ্কই। স্টকগুলির এই অবস্থা, হয়তো বাজারের সামগ্রিক হাল-হকিকতেরই প্রতিফলন। বেশিদিন আর এমন থাকবে না-এও মনে করা হচ্ছে। বাজারে ‘সাইক্লিক্যাল’ প্রবণতা সবসময়ই থাকে। অন্য কিছু সেক্টর যেমন আগে পিছিয়ে পড়েছিল, এখন এগিয়ে গিয়েছে। রিয়েল এস্টেট বাজার যেমন দ্রুত উত্থানের চিহ্ন দেখিয়েছে, যদিও আগে রিয়েল এস্টেট স্টকগুলির বেশিরভাগই নিচে চলে গিয়েছিল। ফার্মা সেক্টর কোম্পানিগুলির স্টকও ইদানীং এমন প্রবল পরিবর্তনের উদাহরণ হিসাবে দেখা যায়।
এখন প্রশ্ন, কোন স্টক ছেড়ে কোনটি বেছে নেবেন আপনি? প্রথমেই বলি নির্দিষ্ট কয়েকটি স্টকের ক্ষেত্রে প্রধান রেশিওগুলি দেখুন, সঙ্গে সাম্প্রতিক ট্রেডিং প্যাটার্নও দেখুন। যথেষ্ট ভলিউম আছে কি? হালের ট্রেন্ড দেখে কি বিশেষ কিছু বোঝা যাচ্ছে? বড় কোনও ঘোষণা হয়েছে কি? এই সমস্ত প্রশ্নের (এবং আরও বেশ কিছুর) উত্তর খুঁজুন। নিজের ব্রোকারের সঙ্গে আলোচনায় নিশ্চয়ই কয়েকটি নাম উঠে আসবে। সেগুলির তুলনামূলক বিচার করা চাই।
মনে রাখুন, যদি সরাসরি না কিনে ব্যাংকিং ফান্ড কেনেন, তাহলেও এই সেক্টরে আপনি নিজের ‘পজিশন’ তৈরি করে এগিয়ে যেতে পারবেন। আর যদি কিঞ্চিৎ ট্রেডিং করার মানসিকতা ও ইচ্ছা থাকে, তাহলে Banking ETF (এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড) নিতে পারেন। জানেনই তো, ETF-ও স্টকের মতোই ‘লিস্টেড’ হয়, দ্রুত বেচা কেনা করা সম্ভব হয় সে জন্য। ব্যাংকিং সংস্থাটির ‘ফান্ডামেন্টালস’ দেখে নেবেন, এই মুহূর্তে কত দামে পাওয়া যাচ্ছে তা নিয়ে প্রথমেই উত্তেজিত না হলেও চলবে। দাম অবশ্যই জরুরি শর্ত, তাও বলে রাখি। Current Market Price, উদাহরণ হিসাবে বলি, যদি ধরেন-তাহলে দেখবেন একাধিক ব্যাংক এই মুহূর্তে অনেকটাই পড়ে গিয়েছে। ৫২ সপ্তাহের সর্বোচ্চ স্তরের সঙ্গে এই তুলনা করলে তফাতটি বুঝতে পারবেন।
উদাহরণ : Punjab National Bank
কারেন্ট প্রাইস : Rs. ২৯.৭৫ (বৃহস্পতিবার)
৫২ সপ্তাহের সর্বোচ্চ : Rs. ৪৮.২০
ভলিউম : ৩,১৭,৩৪,১৯৫ শেয়ার
ভ্যালু : Rs ৯৪.৮৫ কোটি
তথ্য : ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ
এই ধরনের অন্য কয়েকটি স্টক খুঁজে পাওয়া শক্ত হবে না। তবে PNB-র তথ্য এখানে কোনও ধরনের পরামর্শ (কেনা বা বেচা) নয়, ব্রোকারের রিপোর্টের সঙ্গে না মিলে গেলে কেনার ব্যাপারে দু’বার ভাববেন।
নিচের তালিকায় গত এক বছরের পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে তুলনামূলকভাবে খারাপ ফল দেখিয়েছে এমন কয়েকটি ছোট ব্যাঙ্কের নাম দেওয়া হল। ব্রোকারদের মধ্যে থেকে আমরা মডেল পোর্টফোলিও তুলে ধরব বলে (কোনও পক্ষপাত ছাড়াই) Samco Securities-এর সাম্প্রতিক তালিকা দিচ্ছি। পাঠক যেন নিজস্বভাবে যাচাই করে নেন।
মোট (Rs) : ২৪,৬৬৫
মনে রাখুন Samco-র বাছাই শেষ কথা নয়।
অন্য মডেল পোর্টফোলিওর সঙ্গে তুলনা করে দেখুন। এখানে বেশিরভাগ স্টকই বড় মাপের। অনেক ছোট মাপের সংস্থার ভিত্তিতে গঠিত পোর্টফোলিও পাওয়া সম্ভব। নিজের রিস্ক প্রোফাইল যদি অনুমতি দেয়, তাহলেই চিন্তাভাবনা শুরু করতে পারেন।
(লেখক লগ্নি পরামর্শদাতা)