সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: লাফিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা৷ সেই সঙ্গে বাড়ছে স্বজন হারানোর হাহাকার৷ ধবংসস্তূপ সরিয়ে মৃতদেহ উদ্ধারের কাজ চলছে পুরোদমে৷ মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৬৭, নিখোঁজ প্রায় তিন হাজার৷ ত্রাণ ও উদ্ধারে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে দুই প্রতিবেশী ফ্রান্স ও জার্মানি৷ কিন্তু বিদ্যুত্ ও জল সংকট চরমে৷ তার উপর মেঘলা আকাশ৷ মাঝে মাঝেই ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে ব্যাহত হচ্ছে উদ্ধারকাজ৷ আফটার শকের জেরে পায়ের তলায় মাটি মাঝে মাঝেই কেঁপে উঠছে৷ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন আশ্রয় শিবির ও তাঁবুতে রাত কাটানো হাজার হাজার বাসিন্দার মধ্যে৷ ভূমিকম্পের ২৪ ঘণ্টা পরে এটাই ইতালির অ্যামাত্রিচে শহরের করুণ দৃশ্য৷
বুধবার ভোররাতের এই ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল নরশিয়া শহরের ১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে৷ তবে সেখান থেকে ১৭০ কিলোমিটার দূরে রোমেও বেশ জোরদার কম্পন অনুভূত হয়েছে৷ ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অ্যামাত্রিচে, অ্যাকুমোলি, আমব্রিয়া, পেসারা দে ত্রোঁতো, আরকোয়েতা দে ত্রোঁতো-সহ একাধিক শহর ও গ্রাম৷ তবে অ্যামাত্রিচের ক্ষতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি৷ ভূমিকম্পের তীব্রতা ছিল ৬.২ রিখটার৷ তবে কম্পনকেন্দ্রটি ভূ-পৃষ্ঠ থেকে অনেকটাই কাছে হওয়ায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এতটা বেশি হয়েছে৷ রাত তিনটে ৩৬ মিনিটে মধ্য ইতালির বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে কম্পন অনুভূত হয়৷ যা স্থায়ী হয় বেশ কয়েক সেকেন্ড৷ এরপর বেশ কয়েকটি আফটার শক হয়েছে বলেও জানিয়েছে তারা৷ তীব্র কম্পন অনুভূত হয়েছে অ্যামাত্রিচে থেকে ২২০ কিলোমিটার উত্তর ও দক্ষিণের দুটি শহর বোলোনা এবং নেপলসেও৷ বৃহস্পতিবার সকালেও কয়েকবার আফটার শক অনুভূত হয়৷ ফের মাটি কেঁপে উঠতেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে উদ্ধারকারী দল ও বাসিন্দাদের মধ্যে৷ গোটা শহর এখন কংক্রিটের ধ্বংসস্তূপের তলায়৷ পুরোদমে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে বিপর্যয় মোকাবিলাকারী বাহিনী ও সেনা৷ মৃতদেহের হদিশ পেতে কাজে লাগানো হচ্ছে সেনাবাহিনীর কুকুর৷
বুধবার ভূমিকম্পের ২৪ ঘণ্টা পরে ভোরবেলায় হওয়া আফটার শকের গড় মাত্রা ছিল ৫.১ ও ৫.৪ রিখটার স্কেল৷ আরকোয়েতা দে ত্রোঁতো শহরের বাসিন্দা ৭০ বছরের বৃদ্ধ আরতুরো ওনেসি জানিয়েছেন, “আতঙ্কে আমি আর আমার পরিবারের কেউ সারা দিন-রাত ঘুমোতেই পারিনি৷ শুধু মনে হচ্ছে ছাদ বা দেওয়াল চাপা পড়ে মরে যাব৷” অ্যামাত্রিচে, অ্যাকুমোলি, আমব্রিয়া, পেসারা দে ত্রোঁতো শহরের বাসিন্দারা দিনের বেলা চালাচ্ছেন উদ্ধার কাজ৷ রাতে আশ্রয় নিচ্ছেন তাঁবুতে৷ কেউ বা খোলা আকাশের নিচে৷ অনেকেরই স্বজন নিখোঁজ৷ সন্দেহ, বহু শিশু, মহিলা, পুরুষ, বৃদ্ধ, বৃদ্ধা এখনও চাপা পড়ে রয়েছেন কংক্রিট, পাথর, দেওয়ালের তলায়৷ ২৭০ জন জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি৷ সেনা, পুলিশ, দমকল, স্বেচ্ছাসেবক মিলিয়ে পাঁচ হাজার মানুষ উদ্ধারকাজ চালাচ্ছেন৷ অসমর্থিত সূত্রের খবর, ভূমিকম্পের পর পাঁচটি শহর থেকে নিখোঁজ হয়েছেন হাজার খানেকেরও বেশি মানুষ৷ সন্দেহ করা হচ্ছে মাঝ রাতের ভূমিকম্পের সময় ঘুমের ঘোরে তাঁরা সবাই ধবংসস্তূপের তলায় চাপা পড়েছেন৷ যে শহরটির অর্ধেকটাই ধ্বংস হয়ে গিয়েছে সেই অ্যামাত্রিচে শহর ইতালির সবচেয়ে সুন্দর শহর হিসাবে ভোটে জিতেছিল৷ এটি ঐতিহাসিক ও হেরিটেজ শহর ছিল৷ শহরের অভিজাত হোটেল রোমার ৭০ জন অতিথি মারা গিয়েছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে৷ তার মধ্যে মাত্র সাত জনের দেহ উদ্ধার করা গিয়েছে৷
ইতালির প্রধানমন্ত্রী মাতেও রেনজি এবং তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যরা ভূমিকম্প বিধবস্ত শহরগুলি পরিদর্শন করছেন৷ তাঁরা উদ্ধারকাজ তদারকি করেন৷ প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, আমাদের চোখের জল মুছে, শোক ভুলে শহরগুলি পুনর্গঠনের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে৷ এই পরিস্থিতি সামাল দিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে সময় লাগবে৷ উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে ইতালির লা আকিলা শহর গুঁড়িয়ে যায় জোরালো ভূমিকম্পে৷ মারা গিয়েছিলেন ৩০০ জন৷ অন্যদিকে, ইতালির ভূমিকম্পে হতাহতদের প্রতি শোকপ্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তাঁর টুইট বার্তায় মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, “ভূমিকম্পে হতাহতদের পরিবার ও স্বজনের প্রতি সহানুভূতি জানাই৷” প্রসঙ্গত, আগামী মাসে চারদিনের সফরে তিনি ইতালি ও জার্মানি সফরে যাচ্ছেন৷ রাজ্যে বিদেশি নিয়োগ আনাই তাঁর সফরের প্রধান লক্ষ্য৷ মাদার টেরিজাকে ‘সেন্টহুড’ প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে তিনি ভ্যাটিকান সিটিতে যাবেন৷ সফরের আগেই ইতালিতে ভূমিকম্পের ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী উদ্বেগ ও দুঃখপ্রকাশ করেছেন৷ রোমের প্রথম মহিলা মেয়র ভার্জিনিয়া রাগ্গি পশ্চিমবঙ্গের প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রীকে রোম ও ভ্যাটিকান সিটিতে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন৷ তিনিই মুখ্যমন্ত্রীকে অতিথি হিসাবে স্বাগত জানাবেন বলে সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে৷