অর্ণব আইচ: ভিজে বিড়াল হয়ে হস্টেলে ঢোকে ছাত্ররা। বের হয় বাঘ হয়ে। যাদবপুরের মেন হস্টেলের যে বাড়িটিতে নাবালক ‘ছাত্র’ খুনের অভিযোগ, তারই সামনে রয়েছে প্রমাণ মাপের র্যাগিং বিরোধী একটি বোর্ড। তাতে র্যাগিং সম্পর্কে সাবধান করা হয়েছে ছাত্রদের। আর সেই হস্টেলেরই দেওয়ালে দেওয়ালে, প্রায় প্রত্য়েক ঘরের কাছে আঁকা ‘মুর্যাল’ই প্রমাণ করে যে, র্যাগিং বা নতুন ছাত্রদের উপর নির্যাতন সিনিয়র বা প্রাক্তনীদের কাছে অত্যন্ত সাধারণ ব্যাপার। প্রাক্তনী ও প্রথম বর্ষের ছাত্রটা যে কোনও নিয়মকে তোয়াক্কা না করেই এই হস্টেলে থাকে, তারই প্রমাণ এই দেওয়াল লিখন, ‘‘এই যাদবপুরের গায়, কত বয়স মিশে যায়।’’ আবার দোতলা থেকে তিনতলায় উঠতে গেলেই চোখে পড়ে ভয়ার্ত বিড়ালের ছবি। তার পাশে ইংরেজিতে তিরের আকারে লেখা ‘হস্টেল লাইফ’। পাশে বাঘের ছবি। হস্টেল জীবনই যে বিড়াল থেকে একজনকে বাঘ করে তুলতে পারে, তা বুঝিয়েছে হস্টেলের ‘দাদা’রা। অতএব ‘দাদা’দের কাছে নতুনদের আত্মসমর্পণ যে করতেই হবে।
[আরও পড়ুন: দ্রুত ছাত্রভোট, ‘অশান্ত’ যাদবপুরের ভার নিয়েই আরজি নয়া উপাচার্যের]
৯ আগস্ট ঘটনার দিন প্রথমে চারতলার ১০৪ নম্বর ঘরে নাবালক ছাত্রটিকে নিয়ে গিয়ে চিঠি লেখার জন্য জোর করা হয়। সেই ফাঁকা ঘরে ঝুলছে জামাকাপড়। রয়েছে সেই টেবিলটি, যেখানে বসে লেখানো হয় চিঠি। ছাত্রটিকে তিনতলায় ৬১ ও ৭০ নম্বর ঘরে র্যাগিং করা হয়। এর পর যে ৬৫ নম্বর ঘরে ঢুকে ছেলেটি দরজা বন্ধ করে বাঁচার চেষ্টা করেছিল, সেই ঘরে কেউ থাকে না। সেই ঘরের দরজার দিকে তাকালেই আটকে যায় চোখ। দরজার উপরে বড় অক্ষরে লেখা ‘দাদা আসবো’। এই ঘরে যে নতুন ছাত্রদের আসতে গেলে ‘দাদা’দের অনুমতি নিতে হয়, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আবার কেউ দরজার সামনে লিখেছে, ‘‘এই ঘরে কম।’’ বাথরুমের সামনে লেখা একটি কবিতা, যা অশ্লীল ইঙ্গিত করে। ৭৮ নম্বর ঘরের দরজায় স্পষ্ট লেখা, রাত বারোটার পর ঢুকতে হবে ঘরে। র্যাগিংয়ের সময় নতুন ছাত্রদের দেওয়ালে লিখতে বলা হয় সহপাঠিনী বা বান্ধবীদের নাম। তারই প্রমাণ মেলে হস্টেলের ৩৮ নম্বর ঘরের পাশের দেওয়ালে। দেওয়ালের মাঝখানে লাল রঙের হৃদপিন্ড আঁকা প্রেমের চিহ্ন। সেই চিহ্ন ঘিরে অন্তত ৩২ জন নারীর নাম। যাদবপুর-কাণ্ডের পরই দেওয়ালে দাবার ছক এঁকে বোঝানোর চেষ্টা হয়েছে রাজ্য, পুলিশ, ছাত্র, সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা। বিভিন্ন ঘরের দেওয়ালে রয়েছে কবিতা লেখা। তবে এখন বেশিরভাগ ঘরেই তালা। এদিকে, পুলিশ জানিয়েছে, র্যাগিংয়ের কিছু ভিডিও ও মেসেজ উদ্ধার করতে এক ছাত্রের মোবাইল আটক করে পুলিশ। আতঙ্কে ওই ছাত্রটি হস্টেলে আত্মহত্যার পরিকল্পনা করে বলে দাবি অন্য ছাত্রদের। যদিও আতঙ্কগ্রস্ত ওই ছাত্রটিকে উদ্ধার করে তার পরিবারের কাছে পাঠিয়েছে পুলিশ।