shono
Advertisement

প্রবাসে বসেও মিলবে বাংলার স্বাদ, পুজোয় তালের তৈরি জ্যাম-জেলি যাচ্ছে বিদেশে

জঙ্গলমহলে আয়ের দিশা দেখিয়েছে তালের ব্যবসা।
Posted: 08:04 PM Sep 15, 2021Updated: 08:04 PM Sep 15, 2021

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: গোপালের জন্মদিন পার হয়েছে তো কি! মা দুগ্গার সঙ্গে যে ছেলেমেয়েরাও রয়েছেনl পেটুক গণেশ তো আছেন-ইl তাই পুজোর পেটপুজোতে পুরুলিয়ার (Purulia) জঙ্গলমহলের তাল থেকে তৈরি তালের মাড়ি, জ্যাম পাড়ি দিচ্ছে বিদেশে। লসঅ্যাঞ্জেলস থেকে লন্ডন। বনমহলের সুস্বাদু তালের এই উপকরণের বরাত পেয়েছে পুরুলিয়া জেলা তাল শিল্প সমবায় সমিতি।

Advertisement

গোপাল ঠাকুর তথা শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিনের আগেও পাত্র ভরতি তালের মাড়ি, তালের জ্যাম পাড়ি দিয়েছে আমেরিকা-লন্ডনে। আর পুজোতেও এই বরাত মিলেছে। তাই বিদেশে থাকা বাঙালিদের রসনা মেটাতে জঙ্গলমহলের ওই সমবায় সমিতির এখন ব্যস্ততার শেষ নেই। তবে শুধু বিদেশ নয়। কলকাতা ও শহরতলি, দুর্গাপুর-বর্ধমান, শিলিগুড়ি, ঝাড়খন্ড-সহ অন্যান্য রাজ্যেও পুজোর মুখে জঙ্গলমহলের এই তালের উপকরণ যাবে। এই সমবায় সমিতি বছরখানেক ধরে কাজ শুরু করতেই হু হু করে বরাত আসায় তালের আরও নানান সুস্বাদু উপকরণ-সহ খেজুর গুড়, টম্যাটোর শস, আঁখের গুড় তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে জঙ্গলমহলের এই সমবায় সমিতি।

[আরও পড়ুন: চেনা বিরিয়ানি নয়, নতুন ধরনের মোগলাই খানা চেখে দেখুন কলকাতার এই রেস্তরাঁয়]

ছবি: অমিতলাল সিংদেও।

রুখাশুখা পুরুলিয়া জেলা জুড়েই তালগাছের ছড়াছড়ি। চোখ খুললেই যেন লম্বা তালগাছ চোখে পড়ে। এই জঙ্গলমহলের তালকে ঘিরে অতীতে একাধিক বেসরকারি সংস্থা সরকারি সাহায্যে নানান কাজকর্ম শুরু করে। সেই কাজ যেমন এগোচ্ছে তেমনই গত বছর থেকে এই তাল শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পুরুলিয়া জেলার তাল শিল্প সমবায় সমিতি গঠন হয়েছে। যার মাথায় রয়েছে মূলত স্বনির্ভর পুরুষ-মহিলা সদস্যরাই।

জঙ্গলমহল বরাবাজার ব্লকের ভাগাবাঁধ গ্রাম পঞ্চায়েতের ভাগাবাঁধ, রাউতোড়া গ্রামকে ঘিরেই এই শিল্প তথা তালের প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। তৈরি হয়েছে দু’টি ইউনিট। ভাগাবাঁধ ও রাউতোড়ার ইউনিটে ১২ জন করে প্রায় ২৪ জন দিনভর কাজ করছেন। আর যারা প্রতিদিন তাল কুড়িয়ে সমবায় সমিতির হাতে হাতে তুলে দিচ্ছেন তাদের সংখ্যাটা প্রায় ১৫ জন। ফলে এই শিল্পকে ঘিরে জঙ্গলমহলে যেন একটা আলাদা কর্মসংস্থান। যা পুজোয় দেশ বিদেশ থেকে আসা নানান বরাতে আরও প্রসারিত করেছে।

ছবি: অমিতলাল সিংদেও।

এই কর্মকাণ্ডটা শুরু হয়েছিল আজ থেকে বছর তিনেক আগে ২০১৮ সালে। সেই সময় জেলা গ্রামোন্নয়ন সংস্থার ডেপুটি প্রজেক্ট ডিরেক্টর সুশান্তকুমার পাত্র দেখেছিলেন, এই জেলায় কীভাবে পড়ে পড়ে তাল নষ্ট হয়। বিশেষ করে বরাবাজার ব্লকের ভাগাবাঁধ গ্রাম পঞ্চায়েতের এই অঞ্চলে রাস্তায় পড়ে থাকা তাল নষ্ট হয়ে জ্বালানির কাজে ব্যবহার পর্যন্ত হত। তাই ওই ডেপুটি প্রজেক্ট ডিরেক্টর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরামর্শ নিয়ে এই ভাগাবাঁধ গ্রামের তালের প্রক্রিয়াকরণে স্বনির্ভর গোষ্ঠীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ শুরু করেন। এর মধ্যেই তিনি বদলি হয়ে চলে যান কলকাতায় সমবায় বিভাগে। বর্তমানে সমবায় দপ্তরের উপনিয়ামক সুশান্তকুমার পাত্র বলেন, “ওই তাল শিল্প সমবায় সমিতি যেভাবে কাজ করছে তা নজরকাড়া। তাদের হাতে তৈরি সুস্বাদু তালের উপকরণ যাচ্ছে বিদেশেও। পুজোতেও নানান বরাত মিলেছে। আমরা সমবায় থেকে ওই সমিতি কে সব রকম ভাবে সাহায্য করছি।”

[আরও পড়ুন: মিষ্টি তৈরির প্রধান উপাদান বিস্কুট! অতিথিদের চমকে দিতে রইল সহজ ৪ রেসিপি]

ছবি: অমিতলাল সিংদেও।

জঙ্গলমহলে আয়ের দিশা দেখিয়েছে এই তালের ব্যবসা। তেমনই আলাদাভাবে কর্মসংস্থানের দরজা খুলে গিয়েছে। তাই এখন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য জবা মাহাতো, প্রথমী মাহাতোদের হাতে হাতে আসছে কড়কড়ে টাকার নোট। পুজোর মুখে এই শিল্প যে আরও প্রসারিত। এখানেই শেষ নয়। জঙ্গলমহল পুরুলিয়ার রুখা পরিবেশের কথা মাথায় রেখে সামাজিক বনসৃজনে ওই সমিতি ১০ হাজার তাল গাছ রোপন করারও পরিকল্পনা নিয়েছে। এই সমিতির সম্পাদক মনামী অধিকারী বলেন, “রাস্তার পাশেই নষ্ট হয়ে থাকা তালকে যে আমরা একটা ক্ষুদ্র শিল্পের চেহারা দিতে পেরেছি এটা ভেবেই ভালো লাগছে। আশা করছি দেশ-বিদেশ মিলিয়ে পুজোর বরাত মন্দ যাবে না।”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement