সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কাজে অনেক চটপটে, ভুলও কম। তা সত্ত্বেও চাকরি নট। জাপানের নাগাসাকির এক বিলাসবহুল হোটেল ছাঁটাই করে দিল অন্তত ২৪৩ জনকে। হোটেলের অতিথিদের অভিযোগের ভিত্তিতেই এমন সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। অতিথিরা নাকি অভিযোগ করেছেন, কর্মীরা দ্রুতগতির হলে কী, মানুষের মন বুঝে প্রতিক্রিয়া মোটেই করছে না। তাই তাঁদের সঙ্গে আলাপচারিতায় সমস্যা হচ্ছে।
কী ভাবছেন? শুধু এই কারণেই এত জনের চাকরি চলে গেল? তাহলে আপনার ভাবনায় আরেকটু রসদ দিই। নাগাসাকির ‘হেন্ না’ হোটেলের যে ২৪৩ জনের চাকরি খোয়া গিয়েছে, তারা কেউ আমার, আপনার মতো কর্মী নয়। বুদ্ধি, শিক্ষা, মন – সবটা একত্রিত করে কাজ করে না। ওরা সবাই যন্ত্রমানব। হোটেলের আমন্ত্রণ বিভাগ থেকে শুরু করে লাগেজ বওয়া, ঘরের টুকিটাকি কাজ, খাবার পরিবেশন এমনকি অতিথিদের মনোরঞ্জনেও হাজির – রোবট। যেমন ইনপুট প্রোগ্রামিং, তেমনই আউটপুট। প্রত্যেক মানুষের স্বভাব, চরিত্র, মন বুঝে কথা বলার প্রোগ্রামিং তো করা নেই রোবট কর্মীদের।
রাশিয়ায় মাঝসমুদ্রে জাহাজে আগুন, ভারতীয় নাবিকদের মৃত্যুর আশংকা
২০১৫ সালে ‘হেন্ না’ হোটেল রক্তমাংসের কর্মীদের বাদ দিয়ে যন্ত্রমানবদের নিয়োগ করেছিল। মনে করা হয়েছিল, নির্ভুল এবং দ্রুতগতিতে কাজ হবে। খুশি হবেন অতিথিরা। বিশ্বের সবচেয়ে দক্ষ হোটেল হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য ছিল তাদের। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল উলটোটাই হচ্ছে। যন্ত্রমানবরা যত না দক্ষ কাজ করছে, তার চেয়ে বেশি সমস্যা তৈরি করছে। অনেক অতিথির সঙ্গেই দুর্ব্যবহার করছে। কারও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে, তো কারও কথাবার্তার মধ্যে গিয়ে উৎপাত করছে। অতিথিদের কথাবার্তা না বুঝে যান্ত্রিকভাবে কাজ করছে। এতে হোটেলের সুখ্যাতির বদলে কুখ্যাতিই হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে এতগুলো যন্ত্রমানবের জন্য গাদাগুচ্ছের অর্থ খরচ করতে মোটেই চায় না কর্তৃপক্ষ। তবে সকলের চাকরি অবশ্য যায়নি। এরই মধ্যে কেউ কেউ রয়েছেন, যাদের কাজে কোনও ত্রুটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। তারা চাকরিতে বহাল রয়েছে।
‘হেন্ না’ হোটেলের খবর শুনে অনেকে বলছেন, এমনটা হওয়ারই ছিল। মানুষের সঙ্গে কথাবার্তা, যোগাযোগের জন্য আরেকজন মানুষের বিকল্প হিসেবে রোবট মোটেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। জেটযুগে প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করে যতই তরতরিয়ে এগিয়ে চলুক বিশ্ব, শেষ পর্যন্ত মনের ভাব আদানপ্রদানের জন্য একজন মননশীল প্রাণীকেই খোঁজে মানুষও।