নব্যেন্দু হাজরা: বাজার থেকে এগুলো কী আলু নিয়ে আসো! একটু তো বেছে আনতে পারো। বাঁকা, ট্যারা, কানা, পচা। অর্ধেক ফেলে দিতে হয়। ব্যাগ ভরে আলু এনে গিন্নির নিত্য মুখ-ঝামটা খেতে খেতে খানিকটা গা-সওয়া হয়ে গিয়েছে ইনকাম ট্যাক্স কর্মী বিশ্বজিৎ শাসমলের। গিন্নিকে কিছুতেই বোঝাতে পারছেন না হাজার খুঁজেও তিনি গোল আলু পাচ্ছেন না। ফলে আলু নিয়েই নিত্য ঝামেলা ঘরে।
বিশ্বজিৎবাবু একা নন। ইদানীং এই ‘আলুর দোষে’ গাল-মন্দ খেতে হচ্ছে অনেক বাড়ির কর্তাকেই। কিছুতেই বোঝানো যাচ্ছে না, গোল পরিষ্কার আলুই দেখা যাচ্ছে না বাজারে। লম্বা-বেঁটে, কানা, বাঁকা আলুতেই ভরেছে বাজার। চেহারা দেখে বোঝা দায়, এ আলু নাকি অন্য কিছু। দামে কম, তাই বাছাই ছাড়াই তা শোভা পাচ্ছে ঝুড়িতে। ব্যবসায়ীরা একে জ্যোতি বলে বিকোলেও আদতে এ আলু জ্যোতি নয়। অন্তত তেমনটাই জানাচ্ছেন আলুচাষিরা। তাঁদের কথায়, জ্যোতি আলু গোল হয়। এমন অদ্ভুত দেখতে নয়। এগুলো পোখরাজ এবং এস সিক্স আলু। যেগুলো হিমঘরে বেশিদিন রাখা যায় না। পচে যায়। তাই মাঠ থেকে তুলে চাষির ঘরে রেখেই এই আলু বেচে দেওয়া হয়। এগুলোর দামও কম। যে জ্যোতি আলু মাঠ থেকে তোলা হচ্ছে, সেগুলো মজুত হচ্ছে হিমঘরে। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, মে মাস থেকে জ্যোতি আলু আসবে বাজারে। মার্চ-এপ্রিল পোখরাজ আর এস সিক্সই চলবে। মানে জ্যোতি মনে করে এই বাঁকা-ট্যারা আলুই বাজার থেকে ব্যাগ ভরে ঘরে নিয়ে যেতে হবে বাড়ির কত্তাকে।
[আরও পড়ুন: ‘কাজ না করলে বড়বাবুকে ঘেরাও করব’, পুলিশকে ‘লাস্ট ওয়ার্নিং’ দিয়ে বিতর্কে সিদ্দিকুল্লা]
আলুচাষিদের কথায়, এবছর আলুর ফলন ভাল। দামও কম। আর তাই ঝাড়াই-বাছাইও হচ্ছে না। চন্দ্রমুখীও হিমঘরেই যাচ্ছে এখন। এই বাঁকা-ট্যারা আলু শেষের পরই বাকিদের দেখা মিলবে বাজারে। তার জন্য এখনও মাস দেড়েক অন্তত অপেক্ষা করতে হবে। আলুর চাষ মূলত অক্টোবরের শেষে এবং নভেম্বরের শুরুতে শুরু হয়। সময় লাগে তিন মাস। আবহাওয়া ভাল থাকায়, এবার আলু ফলেছে বেশ ভাল। কৃষকদের ঘর থেকে তাই এবার আলু বিকোচ্ছে ৬-৭ টাকা কেজিতে। খুচরো বাজারে যার দাম এসে হচ্ছে ১০-১২ টাকা। তবে এই দাম আরেকটু বাড়তে পারে। তবে তা সামান্যই।
ব্যবসায়ীদের কথায়, এই আলুর ক্ষেত্রে হিমঘরের খরচ নেই। মাঠ থেকে চাষির ঘর ঘুরে সরাসরি এসে যাচ্ছে বাজারে। তাই দাম কম। কিন্তু এগুলো জ্যোতি নয়। জ্যোতি সারা বছর ধরে চলবে, তাই তা হিমঘরে রয়েছে। মূলত মেদিনীপুর, বাঁকুড়া এবং উত্তরবঙ্গ থেকে আসে এই পোখরাজ এবং এস সিক্স। এগুলোর স্বাদও ভাল নয়। তার উপর বাড়িতে আনার পর এগুলো বাছাই করতে গিয়ে অনেক বাদও দিতে হয়। চাষিদের কথায়, ১ লক্ষ ৪০ হাজার মেট্রিক টন আলুর ফলন হবে মনে করা হলেও অতটা হবে না। পশ্চিমবঙ্গ প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির চেয়ারম্যান লালু মুখোপাধ্যায় বলেন, “আলুর ফলন ভাল। তাই দাম কম। তবে জ্যোতি বলে যে আলুটা বাজারে বিকোচ্ছে, তার বেশিরভাগটাই জ্যোতি নয়। জ্যোতি আলু আরও কিছুদিন পর আসবে বাজারে।”