shono
Advertisement

Breaking News

যৌনতায় অমোঘ আকর্ষণ? অশান্ত মন? পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করছে এই হরমোন

শরীর-মন আর এই বিশেষ হরমোনের সম্পর্কের কথা জানালেন বিশেষজ্ঞ।
Posted: 07:09 PM Oct 03, 2023Updated: 07:10 PM Oct 03, 2023

কেউ হারতে হারতে জেতে, কারও জেতারই অভ্যাস, কেউ হেরে গিয়েও ঘুরে দাঁড়ায়। সবই ডোপামিন হরমোনের (Dopamine Hormone) খেলা। হাসি-কান্না-অভিমান কিংবা রাগ-বিরক্তি-উৎকণ্ঠা সবই আমাদের ব্যক্তিগত অভিব্যক্তির প্রকাশ। কিন্তু কোনওটাই আবার নিজের নয়। পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করছে এই হরমোন। শরীর-মন ও ডোপামিনের রসায়ন বুঝিয়ে বললেন রুবি জেনারেল হাসপাতালের কনসালট্যান্ট এন্ডোক্রিনোলজিস্ট ডা. অজিতেশ রায়। শুনলেন মৌমিতা চক্রবর্তী।

Advertisement

আপনার সব সুখ-দুঃখের সাথী ডোপামিন। যার অপর নাম, ‘Feel good chemical’। কিন্তু চোখে দেখা যায় না বলে আমজনতার এই হরমোন নিয়ে মাথাব্যথা নেই। উলটে সমস্যা সমাধানে কী না করেন তাঁরা। আসল যে সরষের মধ্যেই ভূত লুকিয়ে সেটা বোঝেন না। তাই এখন জানুন, ডোপামিন আপনাকে কীভাবে চালিত করছে। আর সেই কেমিক্যাল বা হরমোনকে বশে আনবেন কী করে। আপনি হাসছেন, কাঁদছেন, খুব রেগে যাচ্ছেন, আবার কখনও মনটা বেশ ফুরফুরে, ঝরঝরে, কখনও বিষাদ কখনও উল্লাস। মনের এই খেলার আড়ালে আসলে রয়েছে ডোপামিন হরমোনের খেলা।

কাজ কী?
ডোপামিন আমাদের মনে যে উদ্দীপনা তৈরি করে তাকে ‘Reward Effect’ বলে। কিডনির উপর অবস্থিত অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির নির্দিষ্ট একটি জায়গা থেকে ডোপামিন নিঃসৃত হয় এবং হরমোন হিসাবে কাজ করে। তবে মূলত মস্তিষ্কের বিভিন্ন নার্ভ বা স্নায়ু থেকেও বিভিন্ন কেমিক্যালের নিঃসরণ হয়, তার মধ্যে অন্যতম ডোপামিন। যেখানে সে নিউরোট্রান্সমিটার হিসাবে কাজ করে থাকে। অর্থাৎ মস্তিষ্কের প্রত্যেকটি স্নায়ুর মধ্যে সংকেত প্রেরণ ও সংযোগ স্থাপন করতে সাহায্য করে। মস্তিষ্কের অনেক ক্রিয়াকলাপই ডোপামিনের হ্রাস-বৃদ্ধির উপর নির্ভর করে।

যখন আমাদের কোনও কিছু ভালো লাগে তখন মস্তিষ্কে ডোপামিনের ক্ষরণ শুরু হয় যা আনন্দের অনুভূতিকে বাড়িয়ে তোলে। ওই কাজটি পুনরায় করার আগ্রহ জাগে। একটা ‘ফিল গুড’ অনুভূতি জাগে। এই অনুভূতি আমাদের জীবনের ওঠা-পড়ার সঙ্গে টিকে থাকতে সাহায্য করে।

অপরদিকে, কিছু নির্দিষ্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণে ডোপামিন মস্তিষ্কে কম নিঃসরণ হয়। যা থেকে সেই মানুষটি ডিপ্রেশন, মন খারাপ, যৌনতায় অনীহা বা যে কোন শারীরিক আকর্ষণ ও উন্মাদনা থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। শরীর নড়াচড়া করতে পারে না। এছাড়া কিছু কিছু ক্ষেত্রে ‘রেস্টলেস লেগ’ অর্থাৎ সর্বক্ষণ দুটো পা নড়ানোর প্রবণতা প্রকাশ পায়। এক্ষেত্রে ‘ডোপামিন অ্যাগোনিস্ট’ ওষুধ প্রয়োগ করে হরমোনের মাত্রা বাড়াতে পারলে এই লক্ষণটি কমে যায়। তবে ওষুধ প্রয়োগের ব্যাপারটা পুরোটাই রোগী অনুযায়ী নির্ধারিত হয়।

শরীর কী কী প্রভাব
রক্তনালীর প্রসারণ-সংকোচন ডোপামিন হরমোনের মাত্রার উপর নির্ভর করে। কোনও এমার্জেন্সি পরিস্থিতিতে কারও যদি রক্তচাপ কমে যায় সেক্ষেত্রে ওষুধের মাধ্যমে ডোপামিনে ব্যবহার প্রেশার বাড়াতে সাহায্য করে। মস্তিষ্কে ডোপামিনের মাত্রা কোনও কারণে স্বাভাবিকের থেকে কম বা বেশি হলে, কিছু সমস্যা সম্মুখীন আমরা হই। যেমন,
পারকিনসন্স রোগের আশঙ্কা বাড়ে।
সিগারেট বা ড্রাগের প্রতি আসক্তির মূলেও ডোপামিন দায়ী।
কম্পিউটারের ভিডিও গেমে বুঁদ হয়ে থাকার প্রবণতা তৈরি হয় এই হরমোনের ওঠা-নামায়।
এছাড়া স্কিৎজোফ্রেনিয়ার মত কঠিন মানসিক ব্যাধির কারণও হতে পারে ডোপামিন।

[আরও পড়ুন: হু হু করে কমছে প্লেটলেট, হিমোগ্লোবিন, উৎসবের মরশুমে আতঙ্ক ভাইরাল ফিভার]

মেয়েদের আরও সমস্যা
মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামো পিটুইটারি অংশে যদি ডোপামিন হরমোন ক্ষরণের মাত্রা কমে যায় তবে সেখানে প্রোল্যাকটিন হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। এই কারণে মেয়েদের ক্ষেত্রে গর্ভবতী না হলেও স্তন থেকে সাদা তরল পদার্থ নিঃসৃত হতে দেখা যায় অনেকেরই। ডাক্তারি মতে এটি একটি হরমোন জনিত সমস্যা বলেই মনে করা হয়। যদিও যে কোনও একটি স্তন থেকে রক্তের মতো কোনও তরল পদার্থ ক্ষরিত হলে, স্তনে টিউমার বা অন্য কিছু আছে কি না দেখা হয়।

কিন্তু স্তন থেকে দুধের মতো তরল পদার্থ নিঃসরণের ঘটনাকে ‘গ্যালাক্টোরিয়া’ বলা হয়। সন্তানধারণ ছাড়াও এমন ঘটনা ঘটার মূলে রয়েছে পিটুইটারি গ্ল্যান্ড থেকে নিঃসৃত হওয়া একটি হরমোন, প্রোল্যাকটিন। যাকে নিয়ন্ত্রণ করে ডোপামিন। প্রকৃতপক্ষে ডোপামিন, প্রোল্যাকটিন হরমোনের মাত্রা কমিয়ে দেয়। রোগী যদি অন্য কোনও অসুখের কারণে ‘ডোপামিন অ্যান্টাগনিস্ট’ অর্থাৎ ডোপামিন কাজ করবে না এমন ওষুধ নিয়মিত খান (যেমন, গ্যাস অম্বল, বমি, মানসিক ও অবসাদের ওষুধ) তবে শরীরে ডোপামিনের মাত্রা কমে এবং প্রোল্যাকটিনের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে স্তন থেকে সাদা তরল নিঃসৃত হয়। তার সঙ্গে পিটুইটারির গ্ল্যান্ড থেকে যে হরমোনগুলি আমাদের জনন অঙ্গগুলি ঠিক রাখে তার নিঃসরণও কমিয়ে দেয়। ফলে মেয়েরা ঋতুস্রাবের সমস্যা নিয়ে আসে এমনকী, অনেকের ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

এছাড়াও ডোপামিনের প্রভাব ছাড়াও পিটুইটারি গ্ল্যান্ডে কোনও টিউমার হলে প্রোল্যাকটিনের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। সুতরাং কোনও মেয়ের যদি স্তন থেকে এমন পদার্থ নিঃসরণ হয় তবে প্রোল‌্যাকটিনের মাত্রা বাড়ায় যে ওষুধ তা খাওয়া বন্ধ করতে হবে। তার পরেও প্রোল্যাকটিন বেড়ে থাকলে মস্তিষ্কের স্ক্যান করা এবং টিউমারের রয়েছে কি না জানা জরুরি। তাই লজ্জায় সমস্যা গোপন না করে এন্ডোক্রিনোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

কোন খাবারে ডোপামিন বাড়ে
মূলত আপেল, কলা, সবুজ টাটকা শাকসবজি, মরশুমি ফল, অ্যাভোকাডো, ডার্ক চকোলেট, চিকেন, ডিম, দই প্রভৃতি খেলে শরীরে ‘ফিল গুড’ অনুভূতি কাজ করে। যাতে ডোপামিন শরীরে বৃদ্ধি পায় তাছাড়া ব্যায়াম বা শরীর চর্চার মাধ্যমেও ডোপামিন বৃদ্ধি করা সম্ভব।
বিভিন্ন নেশার বস্তু যেমন কোকেইন, নিকোটিন, মাদক প্রভৃতি নেশার প্রতি একজনকে অমোঘ আকর্ষিত করে ডোপামিনই। সেই রকমই যৌনতা বা প্রেম, সুস্বাদু খাবার, শরীর চর্চা বা খেলাধুলো, পুরস্কার প্রাপ্তি ইত্যাদি ক্ষেত্রে চরম সুখানুভূতিও জাগিয়ে তোলে ডোপামিন। তাই এই বিশেষ হরমোনের নিয়ন্ত্রণ জরুরি। যার অনেকটাই নির্ভরশীল জনসাধারণের নিত্য ক্রিয়াকলাপে।

পরামর্শ পেতে ফোন – ৮৩৩৬৯ ৯০৪৫১

[আরও পড়ুন: শৈশবের জ্বালা যৌবনে! বাচ্চার ইউরিন ট্র্যাক্ট ইনফেকশনকে মোটেও হালকাভাবে নেবেন না]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement