দূষণের ঘেরাটোপে প্রাতঃভ্রমণ কী আদৌ স্বাস্থ্যকর? বিশেষ করে শীতকালে খুব সকালে বাইরে বেরলে কিছু সাবধানবাণী মেনে চলতে হবে। না হলে দূষণের কবলে চাপ পড়ে ফুসফুসে। এ ব্যাপারে সচেতন করছেন অ্যাপেলো মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতালের সার্জিক্যাল অঙ্কোলজিস্ট ডা. শুভদীপ চক্রবর্তী। শুনলেন পারমিতা পাল।
সুস্বাস্থ্যের হাতিয়ার মর্নিং ওয়াক (Morning Walk)। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ থেকে রক্তে শর্করাকে বশে রাখা, থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণ হোক কিংবা ওজন কমানো, সবকিছুরই অব্যর্থ ওষুধ এই প্রাতঃভ্রমণ। ছোট থেকে স্বাস্থ্য সচেতনতা সংক্রান্ত যে সমস্ত বই পড়ানো হয়েছে তাতেও সুস্বাস্থ্য তৈরি অন্যতম পথ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এই অভ্যেসকেই। আর তাই সূর্যের আলো ফুটতে না ফুটতেই ধরাচূড়া পরে পথে নামে নয় থেকে নব্বই। সকাল বেলা হাঁটা মাস্ট। কিন্তু এই সুঅভ্যাস নিয়েও এখন উঠছে প্রশ্ন। কতটা স্বাস্থ্যকর এই অভ্যেস? মর্নিং ওয়াকের জন্য নাকি ফুসফুসে ক্যানসার হচ্ছে? এটা কি শুধুমাত্রই অমূলক আশঙ্কা নাকি সত্যিই এর পিছনে কোনও বৈজ্ঞানিক কারণ রয়েছে?
সভ্যতা যত এগোচ্ছে দূষণও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। আর এই দূষণের ফাঁদে পড়ছি আমরা। এতদিন মনে করা হত, ভোরবেলা বাতাসে দূষণের মাত্রা কম থাকে। ফলে শুদ্ধ বাতাসে শরীরচর্চা করা পরম উপকারী। কিন্তু সেই ভাবনা অনেকটাই ভুল। ভোরবেলা বাতাসের তাপমাত্রা অনেকটা কম থাকে। ফলে থার্মাল ইনভারসন হয়। বাতাসে মিশে থাকা দূষক থাকে বায়ুর নিচের স্তরে। ফলে তাজা বাতাসের বদলে নিশ্বাসের মধ্যে দিয়ে দূষক কণা ফুসফুসে ঢোকে। যা মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে। এখন সকালের দিকেও যানজট হয়, ফলে সেই গাড়ির ধোঁয়া থেকেও দূষণ ছড়ায়। তাহলে কি প্রাতঃভ্রমণের অভ্যাস ছাড়তে হবে?
[আরও পড়ুন: সবজিও বিক্রি করেছে ‘মন দিতে চাই’-এর সোমরাজ! অভিনেতার কথায় অবাক ‘দাদা’ সৌরভ]
একদম নয়। প্রাতঃভ্রমণ করতেই পারেন। তবে একেবারে সকালে নয়। একটু বেলা করে হাঁটতে বের হোন। তাপমাত্রা যখন একটু বাড়বে। তখন বায়ুর নিচেরস্তরে দূষণের মাত্রা কম থাকবে। তাতে স্বাস্থ্যের ক্ষতি কম হবে তুলনামূলক। কারণ বাতাস গরম হতে শুরু করে। ফলে দূষিত বায়ু উপর দিকে উঠে যায়। তাতে দূষণের মাত্রা কম থাকে। আসলে কলকাতা ও মফঃস্বলে লাগাতার বহুতল তৈরি হচ্ছে। ফলে ঘনবসতিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে এলাকা। হাওয়া চলাচল আটকে যাচ্ছে। তাই সকালে বাতালে দূষণের মাত্রা বেশি থাকছে। যা থেকে ফুসফুসের ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে।
শুধু ক্যানসার নয়, এধরনের পলিউট্যান্ট পার্টিকেল থেকে ফুসফুসের ক্রনিক অসুখ, বুকের সংক্রমণ, অ্যাজমার মতো অসুখ হতে পারে। লাগাতার বাড়িঘর তৈরি হচ্ছে। সেখান থেকে র্যাডিয়েন্ট নামক এক কণা তৈরি হচ্ছে। যা ফুসফুসের ক্যানসার অবধি বাঁধাতে পারে। তাই প্রাতঃভ্রমণের সময় সতর্ক থাকুন একটু। শুধুমাত্র বাইরের দূষণ নয়, ঘরেও রোগাক্রান্ত হতে পারেন। যার মূল কারণ ধূমপান। নিজে ধূমপান না করলেও স্বজনের ধূমপান থেকে রোগাক্রান্ত হতে পারেন। প্যাসিভ স্মোকিং থেকে হতে পারে ক্যানসারও। এমনকী, পাশে বসে কেউ যদি ধূমপান নাও করেন, তার থেকেই ক্যানসার আক্রান্ত হতে পারে। কারণ, ঘরের বাতাসে ধূমপানের কণা থেকে যায়। যা ক্ষতি মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ, Say no to smoke। শুধু নিজে নয়, বাড়িতেও কাউকে ধূমপান করতে দেবেন না।
আর প্রাতঃভ্রমণের সময় কী কী সতর্কতা অবলম্বন করবেন?
মূলত ফাঁকা জায়গায় হাঁটাহাঁটি করুন।
যেখানে বাস ডিপো আছে সেখানে প্রাতঃভ্রমণ করবেন না।
একদম সকালে নয়, একটু বেলার দিকে হাঁটাহাঁটি করুন।
বাইরে বেরোলে দ্বিস্তরীয় ইউজ অ্যান্ড থ্রো মাস্ক ব্যাবহার করতে হবে।