shono
Advertisement
Turmeric

হলুদে ঝুঁকি! ভেজালে বাড়ছে বিপদ? চাঞ্চল্যকর তথ্য জানালেন বিশেষজ্ঞ

কেনার আগে সতর্ক হোন।
Published By: Suparna MajumderPosted: 04:00 PM Nov 19, 2024Updated: 04:00 PM Nov 19, 2024

সম্প্রতি এক চাঞ্চল্যকর গবেষণায় জানা গিয়েছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় রান্নার উপাদান হলুদের মধ্যে উপস্থিত থাকতে পারে ক্ষতিকারক ভারী ধাতু, যেমন লেড ও ক্রোমিয়াম। যা শিশু থেকে শুরু করে বয়স্ক সকলের জন্যই মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে। ক্ষতিকর দিক জানিয়ে সতর্ক করলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড টেকলোনজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. প্রশান্ত বিশ্বাস

Advertisement

ভারত, নেপাল এবং পাকিস্তানে বিক্রি হওয়া হলুদে বিষাক্ত মাত্রায় সীসা পাওয়া গেছে বলে এক গবেষণায় জানা গিয়েছে। সান ফ্রান্সিসকো বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় উঠে এসেছে যে এই দেশগুলোতে বিক্রি হওয়া কিছু হলুদের নমুনায় উচ্চ মাত্রায় সীসা রয়েছে। যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এদেশের যে জায়গাগুলিতে হলুদের নমুনায় এই বিষাক্ত উপাদান মিলেছে, তার মধ্যে রয়েছে পাটনা, গুয়াহাটি। দেখা গিয়েছে পাটনায় প্রতিগ্রাম হলুদে প্রায় দুহাজার মাইক্রোগ্রাম লেড রয়েছে ও গুয়াহাটিতে প্রতিগ্রামে ১৭৪ মাইক্রোগ্রাম লেড মিলেছে।

এছাড়া কয়েক বছর আগে জ্যুওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া কলকাতায় বিক্রি হওয়া শাক-সবজি ও কিছু মশলা নিয়ে পরীক্ষা করেছিল। তখনই সেখানে লেড বা সীসার উপস্থিতি মিলেছিল। তাই এ রাজ্যে বিক্রি হওয়া হলুদও যে নিরাপদ নয় সে নিয়ে কোনও দ্বিধা নেই। সাধারণত প্যাকেটের হলুদের চেয়ে খোলাবাজারে যে হলুদ বিক্রি হয় সেই হলুদে লেড-ক্রোমেডের পরিমাণ বেশি থাকে।

আসলে ভেজাল হলুদে এতদিন ময়দা মিশিয়ে তার সঙ্গে রং মেশানো হত। কিন্তু এতে একটা সমস্যা হত, ময়দা যেহেতু সাদা তাই এর সঙ্গে হলুদ রং বা মেটালিন ইয়ালো মেশালে সেটা ধরা পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকত। এটাকে আরও যথার্থ করতে বর্তমানে ময়দা ও লেড-ক্রোমিয়াম মিশিয়ে দেওয়া হয়। এতে করে বোঝাই যায় না যে এতে কোনও ভেজাল মেশানো হয়েছে। তাই বর্তমানে লেড-ক্রোমেড বা সীসার যৌগের ব্যবহার বেড়েছে।

ছবি: সংগৃহীত



কী ক্ষতি করে?
হলুদ এমন একটা জিনিস সেটা ভারতীয় রান্নায় বহুল ব্যবহৃত উপাদান। তাই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মধ্যে এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। নিত্য রান্নার মাধ্যমে সীসা মানবদেহে প্রবেশ করলে তার মারাত্মক প্রভাব পড়ে স্নায়ুতে। বিশেষত আক্রান্ত হয় শিশুরা।
শিশুর ব্রেনের বিকাশ কমে যায়। মনসংযোগ করতে পারে না কিছুতে, চঞ্চলতা বাড়ে। অল্পতেই খিটখিটে মেজাজ হয়ে যায়। শিশুর মস্তিষ্কের পাশাপাশি সর্বোপরি গ্রোথ বা স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। আর লেড-ক্রোমোড ভারী ধাতু। যা শরীরে প্রবেশ করলে ক্যানসারের ঝুঁকিও রয়েছে।

এছাড়া এই ধাতু কিডনিতেও কুপ্রভাব ফেলে। স্বাভাবিক কার্যকারিতা ব্যাহত হয়। এছাড়া হাড়ের ক্ষতি করে। সীসা-ক্রোমেড শরীরে প্রবেশ করে হাড়ে ক্যালশিয়ামের মতোই জমতে থাকে। ফলে সীমা বা ক্রোমেড হাড়কে ভঙ্গুর করে দেয় ধীরে ধীরে।
গর্ভবতী মহিলাদের এই ধরনে হলুদ বিপজ্জনক। কারণ দেখা গিয়েছে সীসা-ক্রোমেড শিশুকে বিকলাঙ্গ করে দিতে পারে ও ব্রেনের বিকাশেও ঘাটতি দেখা দেয়। তাই খুব সাবধান।
আর এই ধরনের ভেজাল মিশ্রিত হলুদের কুপ্রভাব বেশ দীর্ঘমেয়াদি হয়। বয়স্কদের যাঁদের অ্যালঝাইমার্স বা ডিমেনশিয়া জাতীয় অসুখ রয়েছে তাঁদের সীসা-ক্রোমেড সমস্যা আরও বাড়ায়। তবে প্রত্যেক মানুষের একটা সহন মাত্রা থাকে, কিন্তু দেখা গিয়েছে মানবদেহে লেড হলুদ ছাড়া পানীয় জল, শাক-সবজি থেকে প্রবেশ করে। তাই শরীরে মাত্রাতিরিক্ত লেড ক্ষতি করছে।

ছবি: সংগৃহীত

কী করে বুঝবেন হলুদে লেড আছে?
সাধারণত লেড-ক্রোমেড মিশ্রিত হলুদ ও অর্গানিক বা ভালো হলুদ জলে মেশালে ভিন্ন প্রতিক্রিয়া চোখে পড়ে। লেড-ক্রোমেড থাকলে জলে গুলে যায়। দেখা যায় জল পুরো হলুদ
হয়ে গিয়েছে।
কিন্তু ভেজাল ছাড়া হলুদ কিন্তু জলে গুলবে না। জলে দিলে সেই হলুদ জলের তলায় কাঠের গুঁড়োর মতো থিতিয়ে যায়। উপরের জলটা পরিষ্কার থাকে।
তাই বাজার থেকে হলুদ কিনে এনে এই ভাবে পরীক্ষা করে দেখে নেওয়া দরকার।
কেনার সময় বোঝায় উপায় হলো হাতে হলুদ নিয়ে তালুতে ঘষা। যদি ভেজাল না হয় তাহলে হাতে ঘষলেও হলদে বর্ণের দাগ হয় না। কিন্তু যদি লেড বা সীসা মেশানো হয় তাহলে হাতে ঘষার পর হাত ধুলেও হলদেটে ভাব যাবে না। এই সব দেখে সতর্ক হয়ে হলুদ কিনুন।

ছবি: সংগৃহীত

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • সাধারণত প্যাকেটের হলুদের চেয়ে খোলাবাজারে যে হলুদ বিক্রি হয় সেই হলুদে লেড-ক্রোমেডের পরিমাণ বেশি থাকে।
  • নিত্য রান্নার মাধ্যমে সীসা মানবদেহে প্রবেশ করলে তার মারাত্মক প্রভাব পড়ে স্নায়ুতে। বিশেষত আক্রান্ত হয় শিশুরা।
Advertisement