ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, পাসওয়ার্ড, হোয়াটসঅ্যাপ থেকে শুরু করে মোবাইল ফোনের নিরাপত্তা-আজকের যুগে অত্যন্ত জরুরি। আকছার অনেকে বিভ্রান্ত হয়ে জালিয়াতির শিকার হন। কীভাবে পরিত্রাণ পেতে পারেন, বিশদে নিজের সদ্যপ্রকাশিত বইয়ে জানালেন সৃজন কুণ্ডু
এখন আমাদের বেশিরভাগ কাজ মোবাইল ফোনের সাহায্যেই হয়ে যায়। তা বিল পেমেন্ট করাই হোক, বা কিছু কেনাকাটা করা হোক কিংবা দূরে থাকা আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে ভিডিও চ্যাট করা কিংবা ব্যাংকের কাজ। যত বেশি মোবাইল ফোন-নির্ভরতা বেড়েছে, পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বিপদের আশঙ্কাও। ছোট ছোট ভুলের জন্য বড় অঙ্কের টাকা খোয়া যাওয়ার ঘটনা শোনা যায় আকছার। ‘সৃষ্টিসুখ’ থেকে প্রকাশিত সৃজন কুন্ডুর ‘ডিজিটাল সেফটি’ বইটিতে এই সমস্ত ঘটনা নিয়েই বলা হয়েছে। তবে এখানে এই ঘটনাপ্রবাহের উল্লেখ যেমন রয়েছে, তেমনই কী কী করলে বিপদ এড়ানো যাবে তা-ও সহজ, সুস্পষ্ট বাংলায় বলা হয়েছে। শুধু তাই নয়, UPI নিয়ে কী কী সতর্কতা নিতে হবে তা বর্ণনা করার পাশাপাশি UPI এর গোড়াপত্তনের বৃত্তান্তও শোনানো হয়েছে। এছাড়াও বর্তমানে আমাদের জীবনযাত্রায় সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব যে কতখানি, তা-ও বলা হয়েছে এই বইয়ে। ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, আধার পে, UPI থেকে ফাস্ট ট্যাগ-এই সময়ের সমস্ত পেমেন্ট মাধ্যমের বর্ণনা তুলে ধরা হয়েছে এই বইতে। বিপদ নিয়ে সতর্ক করার পাশাপাশি টাকা খোয়া গেলে কি করণীয়, তা নিয়ে রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার এক খুব গুরুত্বপূর্ণ সার্কুলার প্রসঙ্গেরও উল্লেখ আছে। এই বই আপনাকে ভয় দেখাবে না, বরং আপনাকে সমৃদ্ধ করবে, বিপদ এলে চিনতে শেখাবে, যাতে আপনি সহজেই সেই বিপদের মোকাবিলা করতে পারেন ।
সৃজনবাবুর কথায়, ‘‘আসলে ডিজিটাল সেফটি-এই পডকাস্ট যখন শুরু হয়েছিল, তখন এর উদ্দেশ্য ছিল মূলত সেই সমস্ত বয়স্ক মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়া যাঁরা কম্পিউটার বা ইন্টারনেটের ব্যবহারে সড়গড় নন, অথচ ইন্টারনেট ব্যবহার করা ছাড়া উপায় নেই। কেউ হয়ত প্রবাসী সন্তানের সাথে যোগাযোগ রাখার জন্য সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেন, কেউ অনলাইন কেনাকাটার সুবিধার জন্য। এই ধরনের মানুষজন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রতারণার শিকার হন। এঁরা সহজেই ফোনের অপর প্রান্তে থাকা না দেখা মানুষটাকে বিশ্বাস করে ফেলেন। ঠিক এই সমস্ত মানুষদের সচেতনতা বাড়ানোর জন্যই এই পডকাস্ট শুরু, যেটা স্পটিফাই-গুগল পডকাস্ট-অ্যাপেল পডকাস্ট-অ্যামাজন মিউজিকের মতো প্রায় সব জায়গাতেই শোনা যায়। কিন্তু দেখা গেল, অনেক মানুষ এই পডকাস্ট শুনলেও, তাদের মধ্যে খুব কম মানুষই আখেরে সেই বয়সের, যাদের জন্য এই পডকাস্ট বানানো। ঠিক এই পরিস্থিতিতে ‘ডিজিটাল সেফটি’ বইটির প্রকাশক রোহন জানালেন, পডকাস্টগুলিকে নিয়ে একটা বই করতে চান। মনে হল, এরকম ভাল সুযোগ আর আসবে না।’’
[আরও পড়ুন: অভিভাবক হিসাবে সেরা উপহার, সুফল লাভ করুন ‘সুকন্যা সমৃদ্ধি’ স্কিমে]
‘‘আমার পডকাস্ট যাঁরা শুনেছেন, তাঁদের অনেকেই বলেছেন, এই পডকাস্ট শোনার পর ‘ফ্রড কল’ এলে তাঁরা সহজেই তা চিহ্নিত করতে পেরেছেন। ফলে টাকা খোয়া যাওয়ার হাত থেকেও বাঁচতে পেরেছেন। ‘ডিজিটাল সেফটি’ পডকাস্ট হিসাবে দুটি পুরস্কার পেয়েছে। কিন্তু কিছু মানুষের কষ্ট করে জমানো টাকা যে বেঁচেছে, সেটা আমার কাছে এর থেকে কম বড় পুরস্কার নয়। পাঠক যদি একটু মন দিয়ে বইটা পড়েন, আমার ধারণা, বেশ উপকৃত হবেন। এবং তা যে শুধু আর্থিক ক্ষতির হাত থেকে তাঁদের বাঁচাতে সাহায্য করবে তাই নয়, সোশ্যাল মিডিয়ায় পেতে রাখা ফাঁদগুলি চিনতেও সাহায্য করবে।’’
‘‘অসাধু ব্যক্তি-জালিয়াতরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাতে মানুষকে বোকা বানিয়ে টাকা হাতানোর ধান্দা করে। বর্তমানে ইলেকট্রনিক বিল দেওয়া হয়নি বলে এসএমএস পাঠানোটা খুব চলছে, আগে আধার কার্ডের তথ্য চাওয়া হত, ভবিষ্যতে অন্য কিছু বলা হবে-কিন্তু তথ্য হাতানোর জন্য কার্ডের নম্বর জানা বা রিমোট অ্যাকসেস অ্যাপ ব্যবহার করে ফোনের কন্ট্রোল নিয়ে নেওয়ার ব্যাপারটা একই থাকে। সেই সব বিষয়ে এই বইয়ে সহজ বাংলায় বিস্তারিতভাবে বলা আছে। এছাড়াও গল্পের ছলে UPI কোথা থেকে শুরু হল, কীভাবে তাতে বিবর্তন এল, তারও উল্লেখ আছে। বইয়ের সর্বশেষ অধ্যায়ে বলা হয়েছে, আর্থিক প্রতারণার শিকার হলে কী কী করতে হবে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে জালিয়াতির অভিযোগ নথিবদ্ধ হলে টাকা ফেরত পাওয়া যাবে আর কোন কোন ক্ষেত্রে যাবে না।’’
‘‘পরিশেষে বলি, যারা ‘সঞ্চয়’-এর নিয়মিত পাঠক, তাঁরা এই বিষয়ে ৬ মার্চ ‘সঞ্চয়’-এর বিশেষ সংস্করণে পড়েছেন। কিন্তু বইতে এই অধ্যায়টি যুক্ত হওয়ার ফলে বইটি একরকম পূর্ণতা পেয়েছে। বিপদ এড়ানোর জন্য কী কী করতে হবে তা যেমন এখানে বলা হয়েছে, বিপদ ঘটে গেলে কী কী করতে হবে সেই সম্পর্কেও একটা স্পষ্ট ধারণা দেওয়া হয়েছে। অনেক বয়স্ক মানুষ এখন বাধ্য হয়ে প্রযুক্তির ব্যবহার করছেন, কিন্তু তাঁরা এর বিপদ সম্পর্কে ততটা ওয়াকিবহাল নন। তার উপর সন্তান-সন্ততির ব্যস্ততার কথা ভেবে জিজ্ঞেস করতেও অনেক সময় কুন্ঠিত হন। এই মানুষদের কাছে যদি এই বইটা একটু পৌঁছে দেওয়া যায়, নিঃসন্দেহে সমাজের একটা অংশের বড় উপকার হবে বলেই আমি বিশ্বাস করি।’’
(লেখক পেশায় ব্যাংককর্মী এবং ‘ডিজিটাল সেফটি পডকাস্ট’-এর উদ্যোক্তা)