স্টাফ রিপোর্টার: রাতে ক্যানসারের অস্ত্রোপচার (Cancer Operation) হয়েছে। সকালে রাউন্ডে বেরিয়ে তাকে দেখতে গিয়েই তাজ্জব চিকিৎসক। রোগী চাঙ্গা, তরতাজা। হাত মিলিয়ে বলছেন, ‘‘কেমন আছেন ডাক্তারবাবু। আমি তো দিব্যি ফুরফুরে।’’ গল্প নয় সত্যি। হাসপাতালে শুয়ে থাকার দিন শেষ। অপারেশন করেই চাঙ্গা হয়ে যাচ্ছেন রোগী। কাটাছেঁড়া যে নামমাত্র। সৌজন্যে দ্য ভিঞ্চি এক্স আই (Da Vinci XI Robot)।
চতুর্থ প্রজন্মের অত্যাধুনিক রোবট পা রেখেছে শহরে। পূর্ব ভারতে এমন রোবট ছ’টি। কলকাতায় প্রথম অ্যাপোলো সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। অত্যাধুনিক যান্ত্রিক হাতে প্রথম অস্ত্রোপচারের সাক্ষী বছর চৌষট্টির সত্য ঘোষদস্তিদার। পাইকপাড়ার বাসিন্দা ভরতি ছিলেন বাইপাসের ধারের বেসরকারি হাসপাতালে। দীর্ঘদিন ধরেই ভুগছিলেন প্রস্টেট ক্যানসারের সমস্যায়। কী ছিল উপসর্গ?
[আরও পড়ুন: কেন্দ্রের সাহায্য ছাড়াই চার বছরে কৃষকবন্ধুতে সাড়ে ১২ হাজার কোটি, নজির রাজ্য সরকারের]
মূত্রত্যাগের গতি কমে গিয়েছিল। প্রস্রাবের রং হয়ে গিয়েছিল অত্যধিক গাঢ়। ইউরোলজিস্ট ডা. অমিত ঘোষ জানিয়েছেন, এগুলোই প্রস্টেট ক্যানসারের উপসর্গ। যে কারণে পঞ্চাশ পেরোলেই পিএসএ টেস্ট করতে বলা হয় সকলকে। পিএসএ টেস্ট বা প্রস্টেট স্পেসিফিক অ্যান্টিজেন টেস্টের মাধ্যমে প্রস্টেট ক্যানসার নির্ধারণ করা হয়। মঙ্গলবার রাত ন’টার সময় অস্ত্রোপচার হয় সত্যবাবুর। তারপর? ডা. অমিত ঘোষের কথায়, বুধবার সকাল দশটায় রাউন্ড দিতে গিয়েই তাজ্জব অবস্থা। রোগী বলছে, ‘‘কেমন আছেন ডাক্তারবাবু। আমি তো দিব্যি চাঙ্গা।’’
[আরও পড়ুন: গন্ধ পেয়েই পাচারকারীকে ধাওয়া, হাওড়ায় বিদেশি মদ-সহ মহিলাকে ধরিয়ে দিল ‘ডিউক’]
রোবটের হাত এতই নিখুঁত, কাটাছেঁড়া এত সামান্য যে, কোনও ব্যথাই নেই রোগীর শরীরে। বুধবার শহরের এক পাঁচতারা হোটেলে অত্যাধুনিক দ্য ভিঞ্চি এক্স আই-এর পা রাখার অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন ডা. প্রকর দাশগুপ্ত, ডা. শান্তনু পাঁজা। এই রোবটের মাধ্যমে জটিল হেড অ্যান্ড নেক সার্জারিও করা সম্ভব। ডা. শান্তনু পাঁজা জানিয়েছেন, গলা, নাকের মধ্যে জটিল কোনও টিউমার, যেখানে হাত পৌঁছনো সম্ভব নয়, সেখানেও পৌঁছে যাবে রোবটের হাত। কুড়ি কোটি টাকার এই রোবট আপাতত শুধুমাত্র বেসরকারি হাসপাতালে এলেও খুব শিগগির তা সরকারি হাসপাতালেও দেখা যাবে বলে মত চিকিৎসকদের।
উল্লেখ্য, ভিঞ্চি এক্স আই-এর দাম কুড়ি কোটি টাকা। প্রস্টেট ক্যানসার, হেড অ্যান্ড নেক ক্যানসার, জটিল কোলোরেকটাল সার্জারি, সিসটেকটমি, নেফ্রেকটমি অস্ত্রোপচার সম্ভব এর মাধ্যমে। এর বিশেষত্ব হল একটি হাতে লাগানো থ্রি ডি ক্যামেরা। অস্ত্রোপচারের জায়গাটা বারো গুণ বড় করে দেখা যায়। অন্য তিনটি হাত মানুষের কব্জির থেকেও দ্রুত সাবলীল ভাবে ঘুরতে পারে। এর ফলেই রোবটের পক্ষে নিখুঁত অস্ত্রোপচার করা সম্ভব।