অভিরূপ দাস: মফস্বল নয়। শহর কলকাতার অন্যতম অভিজাত এলাকায় খুন হয়ে গেল তিন-তিনটে গাছ। ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তারও করেছে পুলিশ। অভিযুক্ত দক্ষিণ কলকাতার যাদবপুর সেন্ট্রাল রোডের ওষুধের দোকানের মালিক মহেন্দ্র প্রসাদ। তাঁরই দোকানের সামনে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিল তিনটে দেবদারু গাছ।
একসময় বনসৃজন উৎসবে এই গাছগুলি লাগিয়েছিল কলকাতা পুরসভা (KMC)। বৃক্ষগুলির অপরাধ কী? তারা দোকানের সাইনবোর্ড ঢেকে দিয়েছিল। পুলিশি জেরায় মহেন্দ্র প্রসাদ জানিয়েছেন, এই কারণেই গাছগুলি রবিবার ভোর রাতে কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। সবার প্রথম স্থানীয় বাসিন্দাদের নজরে আসে এই অমানবিক ঘটনা। তারা খবর দেন স্থানীয় কাউন্সিলরকে। তাঁরই উদ্যোগে খবর যায় বন দপ্তরে। স্থানীয় যাদবপুর থানার পুলিশ গ্রেপ্তার করে ওই ব্যক্তিকে। অভিযোগ, ঘটনার পরে অভিযুক্তকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী মানুষ কাউন্সিলরকে ফোন করেন।
কাউন্সিলর মৌসুমী দাস জানিয়েছেন, কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের (Firhad Hakim) নির্দেশ কেউ গাছ কাটলে তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করতে হবে। পুরো বিষয়টাই এখন বনদপ্তরের তদন্তাধীন। ছেড়ে দেওয়ার প্রশ্নই নেই। আয়লা, আমফান, বুলবুল- গত কয়েক বছরে একের পর এক ঘুর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে শহর কলকাতা। ঝড়ে উপড়ে গিয়েছে অসংখ্য গাছ। যার জন্য বেড়ে গিয়েছে শহরের গড় তাপমাত্রা। যে কারণে এবার শহরজুড়ে ১ কোটি গাছ লাগানোর পরিকল্পনা নিয়েছেন মেয়র।
[আরও পড়ুন: মর্মান্তিক! ‘মৃত স্ত্রীকে নিজের কাঁধে নিয়ে দাহ করতে যাই’, যন্ত্রণার কথা রাজপাল যাদবের মুখে]
অতি সম্প্রতি কলকাতা পুরসভায় মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেছিলেন, “গাছ কাটা মানুষ খুন করা সমান। যে গাছ কাটবে দ্রুত তার নামে এফআইআর করতে হবে।” এদিনও এই গাছ কাটার ঘটনা জানার পর ক্ষুব্ধ মেয়রের আক্ষেপ, “এতবার করে বলছি। আজকে এরা বুঝতে পারছে না। পরবর্তী প্রজন্ম যখন সিওপিডিতে ফুসফুস ঝাঁঝরা হয়ে যাবে তখন বুঝবে।’’
বনদপ্তর সূত্রে খবর, আইন অনুযায়ী, বনাঞ্চল নয় এমন এলাকায় গাছ কাটতে হলে অনুমতি বাধ্যতামূলক। ওই ব্যক্তি তা নেননি। চাইলেই কোনও গাছ কাটা যাবে না। বনদপ্তরের আধিকারিকরা বলছেন, গাছ কাটতে হলে আগে শুধু বনদপ্তরে আবেদন করলেই হতো। এখন সেই নিয়ম আরও কড়া। স্থানীয়দের সম্মতির পাশাপাশি এখন গ্রামাঞ্চলে বিডিও কিংবা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অথবা শহরাঞ্চলে কাউন্সিলরের অনুমতি নিয়ে আবেদন করতে হয়। গাছ কাটার আগে, কত গুলি গাছ, কী প্রকার গাছ তার উল্লেখ করে টাকা জমা দিতে হয়। অনলাইনে সেই টাকা জমা দিয়ে বনদপ্তরে আবেদন করলে তারা তা খতিয়ে দেখে তবেই ছাড়পত্র দেয়।