অর্ণব আইচ: ইডেনের বাইরে বাজি ফাটানোর সময় আহত হয়েছিলেন তাঁরা দু’জন। ক্ষতবিক্ষত হয়েছিল তাদের শরীর। কিন্তু তা-ও থামাতে পারেনি অশোক ও ক্রেডিট সোয়াপকে। আতঙ্ক কাটিয়ে উঠে, নিজেদের সুস্থ করে তুলে আরও দুই সঙ্গীর সঙ্গে তাঁরা সোনার মেডেল এনে দিল কলকাতা পুলিশকে। এই প্রথমবারের জন্য জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় সোনা পেল কলকাতা মাউন্টেড পুলিশ বা পুলিশের ঘোড়া বাহিনী।
গত নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ঘটেছিল ঘটনাটি। বিশ্বকাপ ক্রিকেট ম্যাচে ভারত জেতার পর ইডেনের বাইরে ফাটানো হচ্ছিল বিভিন্ন ধরনের বাজি। বাজির শব্দে আতঙ্কিত হয়ে ডিউটিতে থাকা কলকাতা মাউন্টেড পুলিশের ৬টি ঘোড়া তাদের সওয়ারিদের ফেলে দিয়ে বিভিন্ন দিকে ছুটতে শুরু করে। আতঙ্কিত হয়ে পরে ‘ঘরে ফিরলেও’ মৃত্যু হয় পুলিশ ঘোড়া ‘ভয়েস অফ রিজন’-এর। তার অন্য পাঁচ ‘সহকর্মী’ও যথেষ্ট আহত হয়। তাদের মধ্যেই রয়েছে অশোক ও ক্রেডিট সোয়াপ। ওই ঘটনার পরপরই এসে পড়ে জাতীয় প্রতিযোগিতার ডাক। হায়দরাবাদের সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল ন্যাশনাল পুলিশ আকাদেমিতে ‘৪২তম অল ইন্ডিয়া পুলিশ ইকোয়েসট্রিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ অ্যান্ড মাউন্টেড পুলিশ ডিউটি মিট’-এর প্রতিযোগিতায় যোগ দেয় কলকাতা পুলিশ। দেশের ২২টি রাজ্যের পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর ঘোড়া বাহিনী ছিল এই প্রতিযোগিতায়। যেহেতু অশোক ও ক্রেডিট সোয়াপ-এর আগেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ডিউটি করে এসেছে, তাই লালবাজারের কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে মাউন্টেড পুলিশের আধিকারিকরা এই দু’টি ঘোড়াকেও প্রতিযোগিতায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তার জন্য অত্যন্ত জরুরি ছিল তাদের ক্ষতগুলিকে সারিয়ে তোলা।
[আরও পড়ুন: ‘ইডির বিরুদ্ধে এখনই পুলিশি পদক্ষেপ নয়’, সন্দেশখালি কাণ্ডে নির্দেশ হাই কোর্টের]
এ ছাড়াও ইডেনে বাজির ঘটনার পর তারা যে আতঙ্কে ভুগছিল, তা কাটিয়ে তোলারও প্রয়োজন ছিল। ক্রমে তাদের সম্পূর্ণ সুস্থ করে তোলা হয়। তার সঙ্গে চলে মহড়া। ‘কোয়াড্রিল কনটেস্ট’-এর জন্য অশোক, ক্রেডিট সোয়াপ ছাড়াও তাদের দুই সঙ্গী ইম্প্রিম্যাটুর ও রুক্মিনীকে তৈরি করা হয়। এই বিশেষ প্রতিযোগিতায় চারটি ঘোড়াকে একসঙ্গে বিশেষ ছন্দে আগুপিছু করতে হয়, ঘুরতে হয়। সামান্য ছন্দপতনেও পুরস্কার ছাড়া হয় প্রতিযোগীদের। চার সওয়ার ইন্সপেক্টর অভ্র চট্টোপাধ্যায়, সার্জেন্ট শুভাশিস সাহা, সার্জেন্ট দীপঙ্কর ধাড়া ও কনস্টেবল শুভেন্দু মহাপাত্র তাঁদের পোষ্যদের নিয়ে দশ মিনিটের এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। অন্য ১৭টি টিমকে পিছনে ফেলে সোনাজয়ী হয় কলকাতা পুলিশ। দ্বিতীয় হয় ন্যাশনাল পুলিশ আকাদেমি। প্রতিযোগিতায় এই রাজ্যের মাউন্টেড পুলিশের চারটি ঘোড়া চেরি, কুইন, সুলতানা ও পিটার তৃতীয় হয়েছে। এ ছাড়াও ঘোড়ার সহিসদের প্রতিযোগিতাও ব্রোঞ্জ জয়ী হয়েছে কলকাতা মাউন্টেড পুলিশ।