অর্ণব আইচ: সবুজ বাজির (Green Crackers) নাম করে লাগোয়া জেলাগুলি থেকে কলকাতায় নিষিদ্ধ বাজি পাচারের আশঙ্কা। নিষিদ্ধ বাজি পাচার ও শহরের কোথাও তা মজুত করা বন্ধ করতে কলকাতার (Kolkata) সীমান্তবর্তী তিনটি কমিশনারেট ও দুটি জেলা পুলিশের সঙ্গে শুক্রবারই বৈঠকে বসছে লালবাজার (Lalbazar)। এই প্রথম কলকাতা পুলিশের বাজি সংক্রান্ত বৈঠকে উপস্থিত থাকছেন অন্য জেলা বা কমিশনারেটের পুলিশকর্তারা। বাজি পাচার রুখতে শহরের ১১টি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ছটপুজো পর্যন্ত চালু থাকবে নাকা চেকিং। এদিন ওই বৈঠকেই উপস্থিত থাকছেন কলকাতার বাজি ব্যবসায়ীরা। শহরের চারটি বাজি বাজারে কী পদ্ধতিতে সবুজ বাজি বিক্রি করা হবে, সেই সম্পর্কেও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করবেন লালবাজারের পুলিশকর্তারা।
এদিকে, বড়বাজার ফায়ার ওয়ার্কস ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে এই বাজি বাজারের আইনি জটিলতা কাটল কলকাতা হাই কোর্টে (Calcutta HC)। এই বাজার নিয়ে দায়ের হওয়া মামলায় হস্তক্ষেপ করল না বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্যর অবকাশকালীন ডিভিশন বেঞ্চ। ২০১৯ সালের কালীপুজো (Kali Puja) ও দীপাবলির আগে শেষ বার এই মেলার আয়োজন হয়েছিল কলকাতায়। এই উৎসবের মরশুমে শব্দবাজি পরিবেশের ক্ষতি করতে পারে বলে আশঙ্কা করে কলকাতা হাই কোর্টে একটি মামলা দায়ের হয়। কিন্তু সেই মামলায় বাজি বাজার নিয়ে হস্তক্ষেপ করল না হাই কোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চ। এনিয়ে তিন সপ্তাহের মধ্যে রাজ্য ও রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে (Pollution Control Board) হলফনামা দিতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। তার পর আবেদনের শুনানি হবে। গত ১৭ অক্টোবর এক বিজ্ঞপ্তিতে পর্ষদ জানায়, বাজার শব্দসীমা ৯০ ডেসিবেল থেকে বাড়িয়ে ১২৫ ডেসিবেল করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধ এ আদালতের দ্বারস্থ হয় ‘সবুজ মঞ্চ’ নামে সংগঠন। পর্ষদ জানায়, সবুজ বাজি যখন ছিল না তখন ৯০ ডেসিবেল ছিল। ২০১৮ সাল থেকে সবুজ বাজি আসার পর সুপ্রিম কোর্টের গাইডলাইন মেনে ১২৫ ডেসিবেল করা হয়েছে।
[আরও পড়ুন: Jyotipriya Mallick: ‘মমতাদি সব জানে, আমি দলের সঙ্গে আছি’, ফের নিজেকে ‘নির্দোষ’ দাবি জ্যোতিপ্রিয়র]
পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার থেকে শহিদ মিনার, দক্ষিণ কলকাতার কালিকাপুর, বেহালা ও উত্তর কলকাতার টালা পার্কে বসছে বাজি বাজার। তার আগে শনিবার সকালে টালা পার্কে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে সঙ্গে নিয়ে বাজি পরীক্ষা হবে। সবুজ বাজির আড়ালে যদি কোনও ব্যবসায়ী নিষিদ্ধ আতসবাজি সামনে আনেন, তা বাতিল করা হবে। এই বছর ১২৫ ডেসিবেল পর্যন্ত শব্দ-সহ সবুজ বাজি ফাটানোর অনুমতি দিয়েছে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। কিন্তু অন্য কোনও শব্দবাজি যদি ফাটানো হয়, তখনই বাতিল করা হবে ওই বাজি। তার আগে শুক্রবার বারাকপুর কমিশনারেট, বিধাননগর কমিশনারেট, হাওড়া কমিশনারেট, বারুইপুর পুলিশ জেলা ও ডায়মন্ড হারবার পুলিশ জেলার কর্তাদের সঙ্গে পুলিশ ট্রেনিং স্কুলে কলকাতার পুলিশকর্তারা বৈঠকে বসছেন।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাগুলি থেকে কলকাতায় নিষিদ্ধ আতসবাজি ও শব্দবাজি পাচার হয়। বিশেষ করে বজবজ, মহেশতলা, নুঙ্গি থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের আড়ালে কলকাতায় আসে নিষিদ্ধ বাজি। এই বছর ইতিমধ্যেই এই ব্যাপারে ধরপাকড় শুরু হয়েছে। এবার পুলিশ দক্ষিণ কলকাতা ও শহরতলি লাগোয়া বারুইপুর ও ডায়মন্ড হারবার পুলিশ জেলাকে সতর্ক করছে। একই সঙ্গে বৈঠক করে সতর্ক করা হচ্ছে হাওড়া ও উত্তর শহরতলির মোট তিনটি পুলিশ কমিশনারেটের কর্তাদেরও। তাঁদের দিক থেকে কোনওভাবে কলকাতায় কোনওভাবে নিষিদ্ধবাজি পাচার হওয়ার আগে যাতে ওই জেলা ও কমিশনারেটের পুলিশই তা ধরে ফেলতে পারে, সেই অনুরোধই করছেন লালবাজারের কর্তারা।
[আরও পড়ুন: প্রয়াত নোবেলজয়ী অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মা, শোকপ্রকাশ মমতার]
এছাড়াও কলকাতায় কসবা, যাদবপুর, বাসন্তী হাইওয়ে, প্রগতি ময়দান, তারাতলা, ঠাকুরপুকুর, বেহালা-সহ শহরের ১১টি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় শুরু হয়েছে নাকা চেকিং। প্রত্যেকটি মালবাহী গাড়ি ও সন্দেহজনক গাড়ি দাঁড় করিয়ে পরীক্ষা করা শুরু হচ্ছে। ওই জেলা ও কমিশনারেটের কর্তাদের হাতেও শতাধিক নিষিদ্ধ (Banned) বাজির তালিকা তুলে দেওয়া হচ্ছে। তাঁরা যাতে শুধু নিষিদ্ধ বাজিই আটকান ও QR কোড-সহ সবুজ বাজি না আটকান, তাও তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বাজি ব্যবসায়ীদেরও ওই বৈঠকে বলে দেওয়া হচ্ছে, যাতে যে সবুজ বাজিতে কিউআর কোড রয়েছে, সেই বৈধ বাজিই তাঁরা বিক্রি করেন। শুক্রবার পুলিশের ওই বৈঠকে ‘ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইন্সটিটিউট’ বা ‘নিরি’-র কর্তারা থাকছেন। তাঁরাও ব্যবসায়ীদের বাজি সংক্রান্ত তথ্য জানাবেন।