রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: ‘বিভেদ’ কাঁটা আর ‘বৈভব’ বিতর্ক নিয়েই বিলাসবহুল রিসর্টে শুরু হয়েছে বিজেপির (BJP) তিনদিনের পাঠশালা। কিন্তু বিলাসবহুল বৈদিক ভিলেজে শুরু হওয়া গেরুয়া শিবিরের এই প্রশিক্ষণ শিবিরে অনুপস্থিত তিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী-সহ মোট ছয়জন সাংসদ। প্রশিক্ষণ শিবিরে জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতি যখন বাধ্যতামূলক, তখন তিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর (Santanu Thakur), জন বার্লা ও নিশীথ প্রামাণিক ছিলেন না। সাংসদ এস এস আলুওয়ালিয়া, কুনার হেমব্রম ও রাজু বিস্তারা অনুপস্থিত ছিলেন। দলের নির্দেশ অমান্য করে কলকাতার প্রশিক্ষণ শিবিরে অনুপস্থিত থাকায় তিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জন বার্লা, নিশীথ প্রামাণিক ও শান্তনু ঠাকুরের কাছে এ ব্যাপারে জবাব চায় বঙ্গ বিজেপি। অনুপস্থিতির কারণ জানতে চেয়ে তাদের কৈফিয়ত তলব করা হচ্ছে বলে দলীয় সূত্রের খবর।
বুক করা ১৫০টি কটেজের মধ্যে কয়েক হাজার টাকার বিলাসবহুল বাংলো বরাদ্দ হয়েছে নেতাদের জন্য। জেলানেতারা একটি বিলাসবহুল ঘরে দু’জন। আবার সিনিয়র নেতাদের জন্য দোতলা কটেজের পুরো ফ্লোরটাই বরাদ্দ। নিরামিষ ছেড়ে আমিষে ঢুকে পড়েছে বিজেপি। খাবারের মেনুতেও ছিল এলাহি আয়োজন। দুপুরের ছিল ভাত, ডাল, ভাজা, শুক্তো ছাড়াও তিনরকমের সবজি, কাতলা মাছের কালিয়া, মুরগির মাংসের ঝোল, তিনরকম স্যালাড, ল্যাংচা, আইসক্রিম, ডেজার্ট, স্যুপ। ছিল কয়েকরকমের শরবতও। রাতের মেনুতে ভাত, রুটি, খাসির মাংস, মাছ, পায়েস, মিষ্টি, আইসক্রিম, স্যুপ ইত্যাদি। সুইমিং পুলের ধারে ডিনারের আয়োজন ছিল। এই ভুরি ভোজের মধ্যেই প্রায় আড়াইশো প্রতিনিধি বিজেপির পাঠশালায় পাঠ নিচ্ছেন। বিলাসবহুল রিসর্টে প্রশিক্ষণ শিবির নিয়ে এদিন ধর্মতলার সমাবেশ থেকে বিজেপিকে আক্রমণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বাবুরা তো এখন বৃন্দাবনে গিয়েছেন। ভোটের সময়ে তো হোটেলে অনেক কিছু হয়েছিল। এখন মন্থনের নামে কী হচ্ছে। সরকারি টাকায় বৈদিক ভিলেজের কটেজে মন্থন বৈঠক করছে।” পালটা অবশ্য জবাব দিতে গিয়ে এদিন বেসামাল রাজ্য বিজেপি। বিব্রত বিজেপি নেতারা। কারণ, দলের বিক্ষুব্ধ শিবির আগেই এই শিবিরকে ‘পিকনিক’ বলে কটাক্ষ করেছিল। দলেরই বিক্ষুব্ধ অংশ সেভ বেঙ্গল বিজেপি-র তরফে টুইটে বলা হয়েছে, “অমিত মালব্য না হয় রাজনীতি না করা ‘নভিস’, সুকান্ত মজুমদার অসহায়, কিন্তু অমিতাভ চক্রবর্তী আপনি নাকি প্রচারক? লজ্জা করল না পার্টির টাকায় সেভেন স্টার হোটেলে প্রশিক্ষণের নামে স্ফূর্তি করতে? নির্বাচন পরবর্তী হিংসার ঘটনায় দলের আক্রান্তরা ক্ষতিপূরণ পেয়েছে?”
[আরও পড়ুন: শিশুপুত্রকে ‘খুন’ করে মেয়েকে নিয়ে উধাও বধূ, নেপথ্যে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক?]
এই বৈভব বিতর্কের জবাব দিতে গিয়ে দলের রাজ্য মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যর দাবি, “বৈভবের গল্প তোলা হচ্ছে। বৈভব এটা নয়। পার্টি মনে করেছে জেলা সভাপতিদের, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের একটা ছাতার তলায় এনে আলোচনা করতে।” এই শিবির করতে প্রায় দু’কোটি টাকা খরচ হচ্ছে বলে অভিযোগ আদি বিজেপি শিবিরের একাংশের। খরচের কথা কার্যত স্বীকার করেই শমীকের বক্তব্য, “যতটা বাইরে থেকে বলা হচ্ছে ততটা খরচ মনে হয় নয়। কিন্তু খরচ হচ্ছে। তবে সেটা কর্মী তৈরিতেই খরচ হচ্ছে।” এদিন প্রশিক্ষণ শিবিরের শুরুতেই অবশ্য তাল কাটে। দলীয় সূত্রে খবর, বন্দেমাতরম সংগীত পূর্ণাঙ্গ গাননি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল। চার লাইন গেয়ে বসে পড়েন তিনি। যা নিয়ে অনেকে বলে ওঠেন পূর্ণাঙ্গ সংগীত গাইতে হবে। এটা সংঘের নিয়ম। তখন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরীকে গাইতে বলেন সংগঠন সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তী।
এদিকে, শিবিরে ডাক না পেয়ে দলের অভ্যন্তরে ক্ষোভ উগরে দিয়েছে আদি নেতাদের একাংশ। রাজ্য কমিটির অনেক প্রবীণ নেতাকেই ডাকা হয়নি। আবার পদাধিকারীদের ডাকা হলেও বৈঠকে হাজির হননি দলের রাজ্য সহ-সভাপতি রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন সুনীল বনশল, অমিত মালব্য, দিলীপ ঘোষ, সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারী, সতীশ ধন্দ, অমিতাভ চক্রবর্তী প্রমুখ শীর্ষ নেতা ছিলেন। সুকান্ত বলেন, “যে সুযোগ আসছে তাকে কাজে লাগাতে হবে। সংগঠন আগে। আবেগে ভেসে যাবেন না। বুথ কমিটি তৈরি করার কাজে জোর দিন।” এদিন শিবিরে ক্লাস নেন দিলীপ ঘোষ, অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়। আজ সকালে যোগাসন করে শিবিরে অংশ নেবেন রিসর্টে রাত্রিবাস করা বিজেপি নেতারা।