ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: ভোটার তালিকা বাছাই করে 'ভূতুড়ে' ভোটার বাদ দেওয়াই লক্ষ্য নির্বাচন কমিশনের। সে কারণে বিধানসভা নির্বাচনের মাত্র কয়েকমাস আগে রাজ্যে জোরকদমে চলছে এসআইআর। তবে অঙ্ক কষে শনিবার তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বোঝালেন, বঙ্গে বিশেষ নিবিড় সংশোধন ঠিক কতটা অযৌক্তিক। তাঁর ব্যাখ্যা অনুযায়ী, বাংলায় সবচেয়ে কম ভোটারের নাম বাদ গিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে তাঁর একটাই প্রশ্ন, বাংলায় ক'জন বাংলাদেশি-রোহিঙ্গার নাম বাদ গেল? এছাড়া আরও পাঁচ প্রশ্নবাণ কমিশনকে ছুড়ে দেন তিনি।
বাংলায় এসআইআরের ফলে ৫৮ লক্ষ নাম বাদ গিয়েছে। যা অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় অনেকটাই কম। শনিবার রীতিমতো অঙ্ক কষে অভিষেক বলেন, "তৃণমূল একমাত্র দল যারা এর প্রতিবাদ করেছে। তামিলনাড়ুতে ৭,৭৫ কোটি জনগণের মধ্যে ৫৭.৩০ লক্ষের নাম বাদ গিয়েছে। শতকরা হিসাবে ১২.৫ শতাংশ। গুজরাটে ৯.৯৫ শতাংশ হিসাবে ৬০.৪১ কোটি মানুষের নাম বাদ গিয়েছে। ছত্তিশগড়ে ৩.১২ লক্ষ। শতকরা হিসাবে ৮.৭৬ শতাংশ। সিপিএমের কেরলে ৩.৬২ কোটির মধ্যে ২৪.৮ লক্ষ মানুষের নাম বাদ গিয়েছে। ৬.৬৫ শতাংশ হারে নাম বাদ গিয়েছে। বাংলায় ১০.৫ কোটির মধ্যে ৫.৭৯ শতাংশ হারে ৫৮.২০ লক্ষের নাম বাদ গিয়েছে। সুতরাং অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় বাংলা সব থেকে কম।" অভিষেক আরও বলেন, "এটা রাজ্য সরকারের নয়, তৃণমূলের তথ্য নয়। নির্বাচন কমিশনের। তারপরেও জোর করে এসআইআর করতে হয়েছে বিজেপিকে। কারণ ১ কোটি রোহিঙ্গা এখানে থাকে। বিজেপি নেতারা তো বলেছিল দেড় কোটি লোকের নাম বাদ যাবে। সেই তালিকা মেলাচ্ছেন? আপনি ভারতের ইলেকশন কমিশনার। বিজেপির নয়।"
কমিশনের উদ্দেশে ৫ প্রশ্ন ছুড়ে দেন অভিষেক। তাঁর প্রশ্নগুলি হল:
- প্রথম প্রশ্ন: ৫৮ লক্ষ ২০ হাজারের মধ্যে কতজন বাংলাদেশি আর কতজন রোহিঙ্গা তার তালিকা দিক।
- দ্বিতীয় প্রশ্ন: লক্ষ্য যদি রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো হয় তবে ত্রিপুরা, মেঘালয়, মিজোরামের মতো সীমানা লাগোয়া রাজ্যে কেন হল না এসআইআর। অভিষেকের প্রশ্ন, তাহলে আপনার লক্ষ্য অবৈধ ভোটার চিহ্নিত করা নয়। আপনাদের লক্ষ বাঙালিদের হেনস্তা করা।
- তৃতীয় প্রশ্ন: বাংলায় সব থেকে কম নাম বাদ যাওয়ার পরেও কেন বাকি রাজ্যগুলোকে নোটিস পাঠানো হচ্ছে না?
- চতুর্থ প্রশ্ন: সব থেকে বেশি নাম যেখানে বাদ গিয়েছে, সেখানে মাইক্রো অবজার্ভার গেলেন না কেন? দু'দিন অন্তর অন্তর নোটিস কেন? বেছে বেছে বাংলার জন্য কেন? এদিন বঞ্চনা ইস্যুতেও সুর চড়ান অভিষেক। তিনি বলেন, "বাংলায় দুর্নীতির জন্য নাকি ১০০ দিনের কাজের টাকা বন্ধ। আবাসের টাকা বন্ধ। তাহলে উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশে দুর্নীতিতে বিজেপি নেতাদের নাম আসার পরেও টাকা বন্ধ হবে না কেন?"
- পঞ্চম প্রশ্ন: এসআইআর করার সময় বলা হল ৪৫% ম্যাপিং পাওয়া যাচ্ছে। পরে দেখা গেল ৮৯.৬৫% ম্যাপিং হয়েছে। তাহলে কান ধরে ক্ষমা চাইবেন না কেন? উত্তরপ্রদেশ, গুজরাটের ক্ষেত্রে সময় বেড়েছে এসআইআরের। আন্দামান ও নিকোবর জনসংখ্যা সব থেকে কম। সেখানে ৭ দিন সময় বেড়েছে। বাংলায় দিলেন না কেন?"
বলে রাখা ভালো, বাংলায় শনিবার থেকে শুরু হয়েছে এসআইআরের শুনানি। সাংসদ থেকে বিধায়কের পরিবারের অনেকেই শুনানিতে ডাক পেয়েছেন। তারই মাঝে এসআইআর ইস্যুতে অভিষেকের এই প্রশ্নবাণ যে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
